‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সব ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথের মানুষের জন্য খোলা। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই তাঁদের পরিবেশনার ভেতর থেকে গান দিয়ে, শিল্পকর্ম দিয়ে তাদের চিন্তাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে।’ এমনটাই বললেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে আয়োজন করা হয় সাধু মেলা ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

সাধুমেলা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ওয়ারেছ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। সাধু মেলা দেখতে অনুষ্ঠানে পরিবারসহ উপস্থিত হন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘মরমি গানের ভেতরে একেবারে মাঝখানে আছেন আমাদের মধ্যমণি লালন সাঁইজি। লালন শাহ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন, জীবনের চেতনা দান করেন, আমাদের দিকনির্দেশ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মানুষকে ভালোবাসার কথা বলেন। আর সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এদের ওপরই আক্রমণটা বেশি হয়। যেহেতু তারা দুহাত তুলে মানুষকে ভালোবেসে আলিঙ্গন করতে চান, সেহেতু সুযোগ পেলে তাদের ওপর নানাভাবে আক্রমণ হয়। আমরা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানাই এবং এগুলো বন্ধের আহ্বান জানাই।’

শিল্পীদের উদ্দেশ করে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি যে কাজের মধ্যেও  কীভাবে সাধনা করা যায়। আমার জীবনের লক্ষ্যটা কী, আমি কোথায় যেতে চাই, কী করতে চাই—সেটি আপনি এবং আপনারা গান গাওয়ার ভেতরে, গান চর্চার ভেতরে খুঁজছেন। বাংলাদেশে এখন এটিই কিন্তু আমাদের একটা লক্ষ্য দিতে পারে। আমরা যখন এত বিশৃঙ্খলা, এত অস্থিরতা, এত দুশ্চিন্তা, চারদিকে এত নৈরাজ্যমূলক কথাবার্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তখন এর ভেতরে আমরা আপনার কাছ থেকে এবং আপনাদের মতো বাউল সাধকদের কাছ থেকে শান্তির কথাই শুধু পাই, আমরা নতুন চিন্তার পথ দেখতে পারি। আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত।’

সৈয়দ জামিল আহমেদের ভাষ্যে, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সকল ধর্ম, বর্ণ, মত, পথের মানুষের জন্য খোলা। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, তাঁদের পরিবেশনার ভেতর থেকে গান দিয়ে, শিল্পকর্ম দিয়ে তাঁদের চিন্তাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আমাদের কাজই এটা। সবাই সবার মতো করে তাঁর শিল্পকর্ম, তাঁর গান, তাঁর ছবি, তাঁর ফিল্ম প্রদর্শন করার মাধ্যমে তাঁদের কথাগুলো প্রচার করেন। জনগণ বুদ্ধিমান, জনগণ বোকা না। তাঁরা তাঁদের মতো করে পথটা খুঁজে নেবেন। আশা করি, আপনাদের মনে এমন বীজ বপন হবে, যার ভেতর থেকে আপনিও আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের সামাজিক জীবনের দিকনির্দেশনা আপনি নিজেই খুঁজে পাবেন।’
সাধু মেলায় পরিবেশনার শুরুতে লালনগীতি ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ ‘দৈন্য গান’ পরিবেশিত হয়। সব শেষে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জনপ্রিয় লালনসংগীত ‘মিলন হবে কত দিনে’।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ মেনে নেওয়ার আহ্বান

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এ আহ্বান জানায়।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মনে করে, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জরুরি। দলটি বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য খুব ক্ষতিকর কিছু নেই। তাই দলীয় স্বার্থে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও এবং রাজনৈতিক ইগো (অহংকার) ত্যাগ করে, জাতির মুখের দিকে তাকিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

দলটির মিডিয়া সম্পাদক এহসান আহমেদের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশের প্রধান একটি প্রয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রেখে বিচার, সংস্কার, নির্বাচন সম্পন্ন করা। জনগণের জান, মাল, জবান ও সম্মানের অধিকার নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সরকার জাতীয় ঐক্য বিনষ্টে শুরু থেকেই মুখ্য ভূমিকা রাখছে। তারই ধারাবাহিকতা দেখছি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে।

দলটি প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন শুরু থেকেই বলে আসছে, দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে; যেন যতটুকু সংস্কার সম্পন্ন করা সম্ভব হয়, সেটা টেকসই হয়। নব্বইয়ের অভিজ্ঞতা, সত্তরের অভিজ্ঞতা শেখায় জনগণ রক্ত দিয়ে যে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করে, রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় স্বার্থের ফাঁদে তার প্রায় সবই বিনষ্ট হয়ে যায়।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আরও বলেছে, দলটি গণভোটের সময়, উচ্চকক্ষে ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বরাদ্দ, সংবিধান সংস্কার পরিষদ—ইত্যাদির পক্ষে শুরু থেকেই মতামত জানিয়ে আসছিল। বস্তুত ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের একটি মৌলিক প্রস্তাব। কিন্তু জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত না হলে ভালো উদ্যোগও ব্যর্থ হতে পারে, হিতে বিপরীত হতে পারে। এই ধরনের ব্যর্থতার ভার বহন করার সক্ষমতা এই জাতির আর নেই। এই দিকটিতে দলটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছিল।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন না করেই, দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য নিশ্চিত না করেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেছে। ফলে সামনের দিনে এই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়ার একটা আশঙ্কা শুরু থেকেই জন্ম নিয়েছে। তবে জাতির মুখের দিকে চেয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ মেনে নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ মেনে নেওয়ার আহ্বান
  • প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে রাষ্ট্রপতির সই
  • যেখানেই আওয়ামী লীগ দেখবেন, ধরে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • ইউনূস সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা চলা শুরু করেছে: নাসীরুদ্দ
  • ‘আগুন–সন্ত্রাস’ দেখে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির সতর্ক হওয়া উচিত: তারেক রহমান
  • আওয়ামীলীগের নাশকতা প্রতিহত করতে সোনারগাঁয়ে মান্নানের নির্দেশে প্রস্তুত নেতৃবৃন্দ
  • জুলাই সনদ নিয়ে মতপার্থক্য, সরকার প্রস্তুত সিদ্ধান্তে
  • সন্দেহ হলে আমিনবাজারে তল্লাশি করা হচ্ছে যাত্রীদের ব্যাগ ও মুঠোফোন
  • ছাব্বিশে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে: জামায়াত আমির