শিল্পকলায় জমেছে সাধু মেলা, এসেছিলেন সংস্কৃতি এবং আইন উপদেষ্টা
Published: 14th, January 2025 GMT
‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সব ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথের মানুষের জন্য খোলা। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই তাঁদের পরিবেশনার ভেতর থেকে গান দিয়ে, শিল্পকর্ম দিয়ে তাদের চিন্তাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে।’ এমনটাই বললেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে আয়োজন করা হয় সাধু মেলা ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।
সাধুমেলা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ওয়ারেছ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। সাধু মেলা দেখতে অনুষ্ঠানে পরিবারসহ উপস্থিত হন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘মরমি গানের ভেতরে একেবারে মাঝখানে আছেন আমাদের মধ্যমণি লালন সাঁইজি। লালন শাহ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন, জীবনের চেতনা দান করেন, আমাদের দিকনির্দেশ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মানুষকে ভালোবাসার কথা বলেন। আর সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এদের ওপরই আক্রমণটা বেশি হয়। যেহেতু তারা দুহাত তুলে মানুষকে ভালোবেসে আলিঙ্গন করতে চান, সেহেতু সুযোগ পেলে তাদের ওপর নানাভাবে আক্রমণ হয়। আমরা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানাই এবং এগুলো বন্ধের আহ্বান জানাই।’
শিল্পীদের উদ্দেশ করে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি যে কাজের মধ্যেও কীভাবে সাধনা করা যায়। আমার জীবনের লক্ষ্যটা কী, আমি কোথায় যেতে চাই, কী করতে চাই—সেটি আপনি এবং আপনারা গান গাওয়ার ভেতরে, গান চর্চার ভেতরে খুঁজছেন। বাংলাদেশে এখন এটিই কিন্তু আমাদের একটা লক্ষ্য দিতে পারে। আমরা যখন এত বিশৃঙ্খলা, এত অস্থিরতা, এত দুশ্চিন্তা, চারদিকে এত নৈরাজ্যমূলক কথাবার্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তখন এর ভেতরে আমরা আপনার কাছ থেকে এবং আপনাদের মতো বাউল সাধকদের কাছ থেকে শান্তির কথাই শুধু পাই, আমরা নতুন চিন্তার পথ দেখতে পারি। আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত।’
সৈয়দ জামিল আহমেদের ভাষ্যে, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সকল ধর্ম, বর্ণ, মত, পথের মানুষের জন্য খোলা। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, তাঁদের পরিবেশনার ভেতর থেকে গান দিয়ে, শিল্পকর্ম দিয়ে তাঁদের চিন্তাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আমাদের কাজই এটা। সবাই সবার মতো করে তাঁর শিল্পকর্ম, তাঁর গান, তাঁর ছবি, তাঁর ফিল্ম প্রদর্শন করার মাধ্যমে তাঁদের কথাগুলো প্রচার করেন। জনগণ বুদ্ধিমান, জনগণ বোকা না। তাঁরা তাঁদের মতো করে পথটা খুঁজে নেবেন। আশা করি, আপনাদের মনে এমন বীজ বপন হবে, যার ভেতর থেকে আপনিও আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের সামাজিক জীবনের দিকনির্দেশনা আপনি নিজেই খুঁজে পাবেন।’
সাধু মেলায় পরিবেশনার শুরুতে লালনগীতি ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ ‘দৈন্য গান’ পরিবেশিত হয়। সব শেষে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জনপ্রিয় লালনসংগীত ‘মিলন হবে কত দিনে’।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: গোলাম পরওয়ার
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকার নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করলেও সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে জাতির সামনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু ব্যক্তির কুপরামর্শে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, যা নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।’
আজ রোববার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত আট–দলীয় জোটের সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। আট দলের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে এটি প্রথম সমাবেশ।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডলের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হক আজাদ, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ হক্কানী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পরিবর্তনের বার্তায় বাংলাদেশের সব মানুষকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা এবং অন্যান্য দল সরকারের নির্বাচনী ঘোষণাকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।’ তিনি জুলাই সনদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করেই গণভোট আয়োজন করা হলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে। সাংবিধানিক, বিচার বিভাগীয় ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত অনেক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এগুলো সম্পর্কে জনগণকে আগে জানাতে হবে। জনগণ না জেনে কোথায় “হ্যাঁ” বলবে আর কোথায় “না” বলবে?’
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। একটি বিশেষ দলের গোপন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ইচ্ছেমতো ডিসি, এসপি ও ওসি নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে নষ্ট করা হচ্ছে। প্রশাসন যদি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে হামলা বন্ধ করতে না পারে, তবে তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে দিনের বেলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পর খুলনার আদালতের চত্বরে দুজনকে গুলি করে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে দেশে প্রকাশ্যে এইভাবে কোর্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়, সেই প্রশাসনের দায়িত্বে নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতি হবে না, ভোটকেন্দ্রে হত্যা হবে না, আমাদের জানমালকে তারা খুন করে ভোটাধিকার লুট চাইবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নাই।’
দেশের সরকার ও পথের পরিবর্তন হলেও জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হক আজাদ। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ১৯৭১, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, প্রতিপক্ষ ঘায়েল হয়েছে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আন্দোলন হয়েছিল, সেই ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’