‘মুজিববাদী সংবিধানের কারণেই পাহাড়িদের ওপর হামলা’
Published: 15th, January 2025 GMT
রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের দাবি, মুজিববাদী সংবিধানের কারণেই এ হামলা হয়েছে। দেশকে অস্থির করতে দেশ-বিদেশে চক্রান্ত চলছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতিগত ও বাংলাদেশ প্রশ্নে বিভাজিত করার হীন উদ্দেশ্যে এনসিটিবির সামনে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি তুলে ধরে সংগঠন দুটির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘‘এই মুজিববাদী সংবিধানের কারণেই আজ আমাদের পাহাড়ি এই ভাই-বোনদের ওপর হামলা হয়েছে। বাংলাদেশকে অস্থির করতে দেশের বাইরে ও ভেতর থেকে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে সেনাপ্রধানের বক্তব্য যে, ‘দ্রুতই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’ কথার সাথে সুর মেলানো রাজনৈতিক দলগুলোই আজকের এই হামলার সাথে জড়িত। আমি পাহাড়িদের বলতে চাই, আপনারা শান্ত থাকুন। যারা রাজপথে রক্তের বন্যা বইয়েছে, তাদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, আজকের এই হামলায় যারা জড়িত ছিল এবং এর পেছনে কারো মদদ ছিল কি না, খুঁজে বের করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করুন। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’’
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘‘রূপাইয়ার মাথায় লাগা ১২টি সেলাই এদেশের গভীর ক্ষতকে নির্দেশ করে, আমাদের এই আইনশৃঙ্খলা ও ইন্টেলিজেন্স বাহিনীর ব্যর্থতাকে নির্দেশ করে। কীভাবে একই জায়গায় দুটি গ্রুপ সম্পূর্ণ বিপরীত এজেন্ডা নিয়ে কর্মসূচি ডাকতে পারে? হামলা শেষ হবার পর সেখানে পুলিশ বাহিনীর অবস্থান অনেকটা বাংলা সিনেমার মত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কর্মক্ষেত্রে তাদের দায়বদ্ধতা দেখাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় যদি বাহিনীগুলোর এই অকার্যকারিতার কোনো ব্যবস্থা না গ্রহণ করে, তবে এগুলো আরো বাড়তেই থাকবে। পোশাকধারী ও পোশাক ছাড়া যারাই জুলাই হত্যাকাণ্ড ও আজকের এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত ছিল, তাদের কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘‘আজকে এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাহিনী সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। আমাদের ইনটেলিজেন্স বাহিনী কী করেছে? তারা তাদের কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় আমরা দেখেছি, এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্স বাহিনীগুলো অনেক তৎপরতা দেখাতো, লোকজনদের বাড়ি থেকে তুলে আনতো। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘মুজিববাদী সংবিধান আমাদের প্রত্যেকটি জাতিকে এক সূত্রে বাঁধতে পারেনি। এই সংবিধান পাহাড়িদের আমাদের আপন করতে দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে অবহেলাকে আমরা ধিক্কার জানাই। আজ যারা এই ন্যক্কারজনক হামলার সাথে জড়িত, তাদের সকলকে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী কালচারাল হেজিমনিকে ফিরিয়ে আনতে আবার একটি মহল সক্রিয় হয়েছে, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পাহাড়ি ভাইদের বলছি, বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের করা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। আমাদের মধ্যে যে মতপার্থক্যগুলো রয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য আলোচনায় বসতে হবে। কোনো সংঘাত-মারামারিতে জড়ানো যাবে না।’’
বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/রায়হান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তপসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ
সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ জোর দিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সেটা যে হয়নি, শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাই তার প্রমাণ। তাঁর অবস্থা শঙ্কাজনক। রাজনৈতিকভাবে তিনি যেই মতেরই অনুসারী হোন না কেন, এভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হবেন, এটা ভাবা যায় না।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন। আর শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হলেন শুক্রবার দুপুরে। আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি একযোগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তফসিল ঘোষণার পর জনমনে যেই উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা থাকার কথা, সেটি মিইয়ে গেল ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধের ঘটনায়। চারদিকে এখন থমথমে ভাব।
রাজনৈতিক সব পক্ষ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিবৃতি জানানো হয়েছে। ঢাকা–চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মিছিল বের হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠা ওসমান হাদি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সবাই তাঁর ফিরে আসার প্রার্থনা করছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিঃসংকোচে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির ওপরও জোর দিয়েছেন।
কিন্তু এভাবে যদি নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে প্রার্থীকে গুলিবিদ্ধ হতে হয়, তাহলে নির্বাচনটি উৎসবমুখর পরিবেশে হবে কী করে? নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন।
আরও পড়ুনজাতীয় নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা ও সতর্কতাগুলো কী০১ ডিসেম্বর ২০২৫নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এটাই একমাত্র সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নয়।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১০ মাসে অন্তত ৭৫৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ৯২ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, সমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলের কারণে অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
গত ২৭ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জামায়াতের দাবি, তাদের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপির লোকজন হামলা করেছেন। বিএনপি বলছে, গ্রামের লোকজন একত্র হয়ে জামায়াতের লোকজনকে ধাওয়া দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডল। উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে। প্রশাসনে এখন নানামুখী ধারা চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গেলেও এর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর জনসংযোগে গুলি চালানো ব্যক্তি এক মাসেও শনাক্ত হয়নি। নেতা-কর্মীদের ভিড়ের মধ্যে খুব কাছ থেকে গুলি করে একজনকে খুন ও বিএনপি প্রার্থীকে আহত করার এ ঘটনায় প্রশিক্ষিত কোনো শুটার জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে গুলির করার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ওই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ আরও পাঁচজন।
২৩ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মধ্যেই ছিল। আমাদের গত দেড় বছরের প্রচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’ সরকার দেড় বছরে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি দেখলেও মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেবল রাজনৈতিক হানাহানি বাড়ছে না, বাড়ছে সামাজিক অপরাধও।
আরও পড়ুনপ্রশাসন ও পুলিশের দুর্বল অবস্থার কারণে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখি২১ অক্টোবর ২০২৫আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে। প্রশাসনে এখন নানামুখী ধারা চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গেলেও এর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।
ডিসি, এসপি, ইউএনওরা নির্বাচন কমিশনের চেয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে যে দলের প্রভাব ও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা, বেশি তাদেরই সমীহ করেন। ‘প্রশাসন আমাদের কথায় ওঠবস করবে’, এ কথা বলে জামায়াতের এক নেতা বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। মনে মনে সব দলের সব নেতাই এ রকম মনোভাব পোষণ করেন। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন। আবার তারা ভিন্নচিন্তাও করতে পারছেন না।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৬ মাসের নীরবতা ভাঙলেন। বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সরে যেতে চাই। আমি চলে যেতে আগ্রহী।’ তবে রাষ্ট্রপতি এ কথাও যুক্ত করেন যে ‘নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার দায়িত্ব পালন করে যাওয়া উচিত। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদে থাকায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী০৭ নভেম্বর ২০২৫রাষ্ট্রপতির অভিযোগ, প্রায় সাত মাস হয় অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তাঁর জনসংযোগ বিভাগ নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে তাঁর ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশন অফিসে রাষ্ট্রপতির যে ছবি ছিল, গত সেপ্টেম্বরে সেটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি রয়টার্সকে বলেন, হঠাৎ এক রাতেই সেগুলো উধাও করে ফেলা হয়েছে। এতে মানুষের কাছে একটি ভুল বার্তা গেছে যে সম্ভবত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুবই অপমানিত বোধ করেছিলাম।’ প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে তিনি লিখিতভাবে বলেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনও করেছে। একবার বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা কখনো রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে মানতে পারেননি। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বহুবার আন্দোলন হয়েছে। একবার বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করে কয়েকটি সংগঠন। কয়েকটি রাজনৈতিক দলও তাঁর অপসারণের পক্ষে ছিল। কিন্তু বিএনপি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কারণে নতুন রাষ্ট্রপতি না আসা পর্যন্ত তাঁকে রেখে দেওয়ার কথা বলে আসছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুযোগও তৈরি হবে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতজন রাষ্ট্রপতি এসেছেন, তাঁদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন সেনা অভ্যুত্থানে। দুজন দণ্ডিত হয়েছেন আদালতে। আবার ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়ে অসম্মানজনক পথে বিদায় নিতে হয়েছে কাউকে কাউকে। জুলাই সনদের সাংবিধানিক আদেশ কার নামে হবে, সে নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার আদেশ আদালতে চ্যালেঞ্জ হবে, এই বিবেচনা থেকে সেটাও বাদ দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির নামেই আদেশ জারি হয়। যেমন আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পর তাঁর নামেই সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল।
সোহরাব হাসান সাংবাদিক ও কবি
*মতামত লেখকের নিজস্ব