রমজানে দুর্নীতিমুক্ত ত্রাণ প্যাকেজ চালু করবে পাকিস্তান
Published: 4th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
ইউটিলিটি স্টোর করপোরেশন (ইউএসসি) ছাড়াই এ বছর রমজানের জন্য দুর্নীতিমুক্ত ত্রাণ প্যাকেজ চালু করতে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
মূলত দুর্নীতি ও নিম্নমানের পণ্যের বিক্রি বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জানুয়ারি মাসে দেশটির মন্ত্রিসভা দেশব্যাপী ইউএসসির কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করতে একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি গঠন করেছিল।
পাকিস্তানে সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর রমজান প্যাকেজ ইউটিলিটি স্টোরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ওই কমিটিকে বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রামের সঙ্গে সমন্বয় করে রমজান প্যাকেজ প্রদানের জন্য একটি কৌশল তৈরি করার দায়িত্বও দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বাজেটে ইউএসসি-এর জন্য বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে করপোরেশনের আর্থিক উন্নতির জন্য বা দেশব্যাপী এক হাজার লোকসানে থাকা আউটলেট বন্ধে সংস্থাটিকে পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে পাঁচ হাজারের বেশি স্টোর রয়েছে। যেখান থেকে কম দামে পণ্য সরবরাহ করা হয়।
ইসলামাবাদে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে শাহবাজ শরিফ বলেন, যেহেতু পবিত্র রমজান শুরু হতে চলেছে তাই আমি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি ও নিম্নমানের সামগ্রী বিক্রি বন্ধে ইউটিলিটি স্টোর ছাড়াই রমজান প্যাকেজ আনতে বলেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কয়েক মাস আগেও বলেছি যে ইউটিলিটি স্টোর দিয়ে এভাবে চলতে পারে না।
বিএইচ
.উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: ইউট ল ট র জন য রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে চাহিদার ৭৫ শতাংশের কম সার সরবরাহ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা
এখন চলছে ফসল আবাদের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে শরীয়তপুরে সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের চাহিদার বিপরীতে ৪৪ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কম সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থানে নিকটবর্তী বাজারে সার না পেয়ে দূরবর্তী বাজার থেকে কৃষকদের অতিরিক্ত দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় উৎপাদিত ফসলের খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ৬টি উপজেলায় ৮২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেন কৃষকেরা। সেপ্টেম্বর মাস থেকে শরীয়তপুরের কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন শাকসবজি, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, রবিশস্য, তেলজাতীয় ফসল, ডালজাতীয় ফসল, মসলাজাতীয় ফসল, ধানের বীজতলা ও বিভিন্ন ধরনের ধানের আবাদ শুরু করেন। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কৃষকেরা ওই সব ফসল আবাদ নিয়ে মাঠে ব্যস্ত থাকেন। এই চার মাস শরীয়তপুরে ফসল আবাদের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমেই জেলায় সারের বরাদ্দ কম পাওয়া গেছে।
ফসলের এ মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) শরীয়তপুরের ৮২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল আবাদের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সারের চাহিদা পাঠায়। যার মধ্যে ইউরিয়া ১৮ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৪ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন, ডিএপি ১২ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন, এমওপি ৮ হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় সারের বরাদ্দ দিয়েছে কম। শরীয়তপুরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ইউরিয়া ৭ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন, ডিএপি ৭ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন, এমওপি ২ হাজার ২১৯ মেট্রিক টন। এ মৌসুমে চাহিদার চেয়ে কম পাওয়া গেছে ইউরিয়া ৫৭ শতাংশ, টিএসপি ৬৪, শতাংশ, ডিএপি ৪৪ শতাংশ এবং এমওপি ৭৫ শতাংশ।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মোট ৭১ জন ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। সরকার–নির্ধারিত প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি সার ২০ টাকা দামে বিক্রি করতে হবে। ওই দামে কৃষক তাঁর প্রয়োজনীয় সার ডিলার পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ থাকায় ডিলার ও ডিলারদের নিয়ন্ত্রিত খুচরা ব্যবসায়ীরা বর্তমানে প্রতি কেজি সার ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয় সারা বছরের চাহিদা নেওয়ার পর তার বিপরীতে বরাদ্দের তালিকা পাঠায়। ওই তালিকা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাস অনুযায়ী বণ্টন করেন। তারপর ইউনিয়নভিত্তিক সারের ডিলারদের মধ্যে ওই ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই বরাদ্দ অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বিসিআইসি ও যশোরের নওয়াপাড়ায় থাকা বেসরকারি আমদানিকারকেরা ডিলারদের অনুকূলে সার সরবরাহ করেন।
কয়েকজন কৃষক জানান, শরীয়তপুরের কৃষকেরা ইউরিয়া, টিএসটি, ডিএপি ও এমওপি সার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন। প্রতি শতাংশ জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের জন্য তিন কেজি সার ব্যবহার করা হয়। যার সরকার–নির্ধারিত দাম ৮০ থেকে ৮২ টাকা। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বর্তমানে ওই সার কৃষককে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। প্রতি শতাংশ জমিতে কৃষককে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদিত ফসলের খরচ বাড়বে।
নড়িয়ার নশাসন এলাকার কৃষক মোকলেছ খন্দকার ১৬৫ শতাংশ জমিতে শীতকালীন শাকসবজি, পেঁয়াজ ও রসুন আবাদ করেছেন। ওই ফসলগুলোর জন্য তাঁর ২০ হাজার টাকার সার ক্রয় করতে হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় তাঁকে সার সংগ্রহ করতে সাড়ে ছয় হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে।
মোকলেছ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে ডিলারের কাছে গেলে বলেন সার পাই না, কোথা থেকে দেব? যা চাই, তার কম পাই। ফসল আবাদ করেছি, ফলন ভালো পেতে হলে সার তো দিতেই হবে। তাই বেশি দাম দিয়ে খুচরা দোকান থেকে কিনতে হয়েছে।’
জাজিরার ডুবলদিয়া এলাকার কৃষক হারুন মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শর্ষে, ধনিয়া, কালিজিরা, পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ করেছি। বাজারে সারের দাম বেশি। প্রতিটি সার বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আমরা কৃষক, আমাদের কথা কে ভাবে? সার ও শ্রমিকের দাম বেশি। ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, কিন্তু বিক্রি করতে গেলে দাম পাই না।’
জানতে চাইলে বিএডিসির ফরিদপুর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক এস এম ইকরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। বিএডিসি ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করে। আর ইউরিয়া বিসিআইসি সরবরাহ করে। মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিভাগের বরাদ্দের তালিকা অনুযায়ী আমরা সেই সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করি। কোনো জেলায় চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দের ঘাটতি থাকলে তারা মন্ত্রণালয়ে উপবরাদ্দ চাইতে পারে। মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিলে আমরা সরবরাহ দিতে পারব।’
শরীয়তপুর সার বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারের যা বরাদ্দ পাই, তা নির্ধারিত দামে বিক্রি করছি। অনেক সময় কিছু সার সরবরাহের ঘাটতি থাকে। তখন খুচরা বিক্রেতারা একটু বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করেন।’
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সারের বরাদ্দ কম আছে। কৃষক বিভিন্নভাবে ঘাটতি মোকাবিলা করছেন। বেশি দামে সার বিক্রি রোধে মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষকদের অতিমাত্রায় সার ব্যবহার না করে সুষম মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত।