জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমার শত শত ভাইদের হত্যা করে খুনি হাসিনা ভারতে বসে ভিডিও কনফারেন্সে নির্লজ্জের মত বক্তব্য দেয়, শত শত মানুষ হত্যা করে, গুম করে, খুন করে আবার নির্লজ্জের মতো বিচার চায়। খুনি হাসিনার অবশ্যই বিচার হবে। তাকে এনে এই বাংলাদেশে বিচার করে হবে। তার ওই বিচারের মঞ্চ হবে ফাঁসির মঞ্চ।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্বজনদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, যত দ্রুত শহীদ পরিবারের সহায়তার ব্যবস্থা করা যেত; ততটা তাড়াতাড়ি হচ্ছে না। শহীদ পরিবারের সদস্যরা রাস্তায় নেমে এসেছেন; এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। শুক্রবার আমরা শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলব। রোববার তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেদিন তারা নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন।

সারজিস আরও বলেন, এই সরকার যদি শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে না পারে, তাহলে এটি হবে এই সরকারের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা। আমরা সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করে নেব। সরকারকে শহীদ পরিবারের প্রতিটি যৌক্তিক দাবি পূরণ করতেই হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা গণহত্যার বিচার ও সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে আজ সকাল সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে সারজিস সেখানে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অবরোধ তুলে নেন শহীদ স্বজনরা।

তাদের পাঁচ দাবি হলো- প্রতিটি হত্যার বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ১০ দিনের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে; শহীদ ও আহত ভাইদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে; শহীদ পরিবারের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; শহীদ পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায্য সম্মানী দিতে হবে এবং শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানির ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিবারগুলোর অভিযোগ, তারা গত কয়েক মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করা চেষ্টা করে আসছেন। তবে তাদের সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই গণহত্যায় চলমান বিচারিক কার্যক্রমের সমালোচনা করে শহীদ পরিবারগুলো বিষয়টিকে ‘সার্কাস’ বলেও অভিহিত করেছেন। তারা জানান, মারাত্মক ক্র্যাকডাউনের আদেশ দানকারী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী অনেকেই এখনো বিচারের সম্মুখীন হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর একটি দিন। এদিন, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের ন্যাশনাল জুট মিলস রক্তাক্ত হয়। মিলের ভেতর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী সন্দেহে আটক ১০৬ জন নিরীহ বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

সেই থেকে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর শহীদদের স্মরণে কালীগঞ্জ গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহ শহীদদের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তারা দোয়া ও মোনাজাত করেন শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায়।

আরো পড়ুন:

‘১৭ বছরে ৯৪ হাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা আড়াই লাখ করা হয়েছে’ 

১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল

কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম হুমায়ুন মাস্টার সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের সেই সকালে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই পাশের ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে হানাদার বাহিনী মিল চত্বরে প্রবেশ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে অভিযান চালানোর নামে সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ধরে জড়ো করে। 

সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে চলে ব্রাশফায়ার। প্রাণহীন হয়ে পড়ে একের পর এক শরীর। ন্যাশনাল জুট মিলে নেমে আসে নীরবতা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গণহত্যা শেষে পাকবাহিনী মিলের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। শহীদদের মরদেহ পড়ে ছিল মিলের সুপারি বাগানে। ভয় ও আতঙ্কে কেউ কাছে যাওয়ার সাহস পাননি। মরদেহগুলো শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী মিল চত্বরে প্রবেশ করে বিকৃত অবস্থায় ১০৬ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করেন। তারপর মিলের দক্ষিণ পাশে কবর খুঁড়ে একসঙ্গে শহীদদের সমাহিত করেন তারা।

শহীদদের স্মরণে মিল কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’। গণকবরের পাশেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে একটি পাকা মসজিদ-যেখানে প্রতিনিয়ত দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া হয়।

কালীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “খলাপাড়ার সেই ১০৬ শহীদের রক্তগাথা কেবল অতীত নয়-এটি জাতির কাছে এক চিরন্তন দায়বদ্ধতার স্মারক। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস পৌঁছে দেওয়া আর শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি ন্যায্য সম্মান জানানোই হোক আমাদের প্রতিদিনের অঙ্গীকার।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
  • গণহত্যায় সূচিত হলো মুক্তির সংগ্রাম