ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ, নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন দেশের বিশিষ্ট ২৬ নাগরিক। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে নির্মমতার সঙ্গে বাড়িটি ধ্বংস করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা–পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

বিবৃতিদাতারা এ–ও বলেন, ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়। তাঁরা এসব ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

আজ শুক্রবার এ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

আজ ২৬ নাগরিকের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) যেভাবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি ক্রেন, বুলডোজার ব্যবহার করে নির্মমভাবে ধূলিসাৎ করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে অন্য যেসব স্থাপনা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে নির্মমতার সাথে ধ্বংস করা হয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা দেখে একটি সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত ও লজ্জিত। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘এমন লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। ঘটনাটির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সম্পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আমরা জানাতে চাই; কিন্তু কার কাছে জানাব? আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, কিংবা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল; কিন্তু কেন? তাদের জনগণের ট্যাক্স ও অর্থে লালনপালন করা হয় কি নীরব দর্শক হয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য? যখন তাদেরই নাকের ডগায় প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন তারা নীরব–নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালনের অর্থ কী? অপরাধের সহযোগী হওয়ার সমার্থক নয়?’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোনো ধরনের গণ–উত্তেজক সহিংসতা বা মব ভায়োলেন্স কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদের কর্মী-সমর্থক এবং তাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের নাশকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টাকেই উৎসাহিত করবে। বিগত পতিত সরকার ও তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে নানা নাশকতার পরিকল্পনা যেমন করেছে, তেমনি দেশে এখন আইনের শাসন নেই বলেও দেশ-বিদেশে যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, তার হাতও এতে শক্তিশালী হবে। তাই পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কোনো অসত্য ভাষণ বা উসকানিমূলক উক্তিকে অসিলা করে এমন কোনো কাজ করা বা তাকে সমর্থন করা চলবে না, যাতে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইতিমধ্যে যা ঘটানো হয়েছে, সেই সব ঘটনাকে আইনের আওতায় এনে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা–পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যেকোনো দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থান কিংবা কোনো স্থাপনা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সেই দেশের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা—ওই স্থানে কারা কোন সময় বসবাস করেছেন বা কাদের নাম জড়িত, সেই নিরিখে বিচার্য নয়। মূল্যায়ন যে যেভাবেই করুক, তার ওপরে তার সুরক্ষার প্রশ্নটি নির্ভর করে না। এটা সভ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পৃথিবীর সব দেশেই এভাবে ঐতিহাসিক স্থান ও কীর্তিগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সুরক্ষা করা হয়। অনেক নির্মম নির্দয় শাসকের বাসভবনও দর্শকেরা তা–ই দেখতে পান, তাদের কীর্তি-অপকীর্তি সম্পর্কেও বহু শত বছর পরও মানুষ জানতে পারেন। আমরা তাই ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবিস্তার ব্যাখ্যা দাবি করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও এর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলাসহ যারা দায়ী, তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘৩২ নম্বর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়ি ভাঙার সঙ্গে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শক্তি প্রদর্শনের কোনোই সম্পর্ক নেই; বরং এটা একধরনের গণ–উত্তেজক সন্ত্রাসের প্রদর্শন বলেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। যা ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ভাবমূর্তিকেই ম্লান করে দেয়। এটা আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয় যে তারুণ্য আমাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের মূলশক্তি হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, সেই তরুণদের একাংশকে কোনো দেশি বা বিদেশি অপশক্তি বিপথে পরিচালিত করতে নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে কি না, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটিও আজ খতিয়ে দেখা খুবই জরুরি।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধূরী, আনু মুহাম্মদ, খুশী কবির, পারভীন হাসান, ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা, সারা হোসেন, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, নুর খান, শাহনাজ হুদা, নোভা আহমেদ, জোবাইদা নাসরীন, মোহম্মদ সেলিম হোসেন, শাহ-ই-মবিন জিন্নাহ, পরিচালক, জাকির হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাঈদ আহমেদ, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আশরাফ আলী, শাহাদত আলম, রেজাউল হক, হানা শামস আহমেদ এবং মুক্তাশ্রী চাকমা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৫ ও ৬ ফ ব র য় র র ঘটন র সরক র র কর ছ ন ব স কর আহম দ র ওপর ধ নমন

এছাড়াও পড়ুন:

তপসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ জোর দিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সেটা যে হয়নি, শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাই তার প্রমাণ। তাঁর অবস্থা শঙ্কাজনক। রাজনৈতিকভাবে তিনি যেই মতেরই অনুসারী হোন না কেন, এভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হবেন, এটা ভাবা যায় না।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন। আর শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হলেন শুক্রবার দুপুরে। আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি একযোগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তফসিল ঘোষণার পর জনমনে যেই উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা থাকার কথা, সেটি মিইয়ে গেল ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধের ঘটনায়। চারদিকে এখন থমথমে ভাব।

রাজনৈতিক সব পক্ষ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিবৃতি জানানো হয়েছে। ঢাকা–চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মিছিল বের হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠা ওসমান হাদি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সবাই তাঁর ফিরে আসার প্রার্থনা করছেন। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিঃসংকোচে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির ওপরও জোর দিয়েছেন।

কিন্তু এভাবে যদি নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে প্রার্থীকে গুলিবিদ্ধ হতে হয়, তাহলে নির্বাচনটি উৎসবমুখর পরিবেশে হবে কী করে? নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন।

আরও পড়ুনজাতীয় নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা ও সতর্কতাগুলো কী০১ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এটাই একমাত্র সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নয়।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১০ মাসে অন্তত ৭৫৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ৯২ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, সমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলের কারণে অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৭ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জামায়াতের দাবি, তাদের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপির লোকজন হামলা করেছেন। বিএনপি বলছে, গ্রামের লোকজন একত্র হয়ে জামায়াতের লোকজনকে ধাওয়া দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডল। উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে। প্রশাসনে এখন নানামুখী ধারা চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গেলেও এর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর জনসংযোগে গুলি চালানো ব্যক্তি এক মাসেও শনাক্ত হয়নি। নেতা-কর্মীদের ভিড়ের মধ্যে খুব কাছ থেকে গুলি করে একজনকে খুন ও বিএনপি প্রার্থীকে আহত করার এ ঘটনায় প্রশিক্ষিত কোনো শুটার জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে গুলির করার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ওই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ আরও পাঁচজন।

২৩ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মধ্যেই ছিল। আমাদের গত দেড় বছরের প্রচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’ সরকার দেড় বছরে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি দেখলেও মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেবল রাজনৈতিক হানাহানি বাড়ছে না, বাড়ছে সামাজিক অপরাধও।

আরও পড়ুনপ্রশাসন ও পুলিশের দুর্বল অবস্থার কারণে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখি২১ অক্টোবর ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে। প্রশাসনে এখন নানামুখী ধারা চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গেলেও এর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

ডিসি, এসপি, ইউএনওরা নির্বাচন কমিশনের চেয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে যে দলের প্রভাব ও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা, বেশি তাদেরই সমীহ করেন। ‘প্রশাসন আমাদের কথায় ওঠবস করবে’, এ কথা বলে জামায়াতের এক নেতা বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। মনে মনে সব দলের সব নেতাই এ রকম মনোভাব পোষণ করেন। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন। আবার তারা ভিন্নচিন্তাও করতে পারছেন না।

এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৬ মাসের নীরবতা ভাঙলেন। বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সরে যেতে চাই। আমি চলে যেতে আগ্রহী।’ তবে রাষ্ট্রপতি এ কথাও যুক্ত করেন যে  ‘নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার দায়িত্ব পালন করে যাওয়া উচিত। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদে থাকায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুনবাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী০৭ নভেম্বর ২০২৫

রাষ্ট্রপতির অভিযোগ, প্রায় সাত মাস হয় অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তাঁর জনসংযোগ বিভাগ নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে তাঁর ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশন অফিসে রাষ্ট্রপতির যে ছবি ছিল, গত সেপ্টেম্বরে সেটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি রয়টার্সকে বলেন,  হঠাৎ এক রাতেই সেগুলো উধাও করে ফেলা হয়েছে। এতে মানুষের কাছে একটি ভুল বার্তা গেছে যে সম্ভবত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুবই অপমানিত বোধ করেছিলাম।’ প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে তিনি লিখিতভাবে বলেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনও করেছে। একবার বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা কখনো রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে মানতে পারেননি। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বহুবার আন্দোলন হয়েছে। একবার  বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করে কয়েকটি সংগঠন। কয়েকটি রাজনৈতিক দলও তাঁর অপসারণের পক্ষে ছিল। কিন্তু বিএনপি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কারণে নতুন রাষ্ট্রপতি না আসা পর্যন্ত তাঁকে রেখে দেওয়ার কথা বলে আসছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুযোগও তৈরি হবে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতজন রাষ্ট্রপতি এসেছেন, তাঁদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন সেনা অভ্যুত্থানে। দুজন দণ্ডিত হয়েছেন আদালতে। আবার ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়ে অসম্মানজনক পথে বিদায় নিতে হয়েছে কাউকে কাউকে। জুলাই সনদের সাংবিধানিক আদেশ কার নামে হবে, সে নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার আদেশ আদালতে চ্যালেঞ্জ হবে, এই বিবেচনা থেকে  সেটাও বাদ দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির নামেই আদেশ জারি হয়। যেমন আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পর তাঁর নামেই সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল।

সোহরাব হাসান সাংবাদিক ও কবি

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের দাবি নাকচ ভারতের
  • খাগড়াছড়িতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ তিনজন গ্রেপ্তার
  • নির্বাচন ঘিরে গুপ্ত হামলা ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে শঙ্কা
  • আইনশৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি ঘটাতেই হবে
  • ওসমান হাদির ওপর আঘাত মানে জুলাইয়ের ওপর আঘাত: নুরুল হক
  • ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে: সালাহউদ্দিন
  • আওয়ামী লীগ যাঁদের টার্গেট করেছে, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি তাঁদের অন্যতম: রাশেদ খান
  • প্রাইম সাসপেক্টকে খুঁজছি, হোপফুলি হিট করতে পারব: ডিএমপি কমিশনার
  • তপসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ