শান্ত-নিরিবিলি খুলনা নগরী তার সুনাম হারিয়েছে অনেক আগেই। সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা, অতিরিক্ত ইজিবাইক আর দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে নিরাপদে চলাই কঠিন হয়ে পড়ছে। শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে গত বছর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মোড় পুনর্নির্মাণ এবং নতুন করে সাজানোর কাজ শুরু করে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কিন্তু সড়ক বিভাগের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে গেছে সাতটি মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এর মধ্যে নগরীর পিটিআই মোড়ে ফুট ওভারব্রিজের কাজ বন্ধ থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে স্কুলশিক্ষার্থীদের। প্রকল্পের আর দুই মাস বাকি থাকায় অবশিষ্ট টাকাও ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো ছিল শ্রীহীন। কেসিসি থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সড়কগুলো প্রশস্ত করা ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের দাবি জানিয়ে আসছে সাধারণ মানুষ। জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় ২২টি মোড়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

সড়কে যানবাহনের চাপ ও আশপাশের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মোড়গুলোর নকশা প্রণয়নের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিনের ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডিজাইন কনসালট্যান্সি ইউনিটকে (আরডিসিইউ) দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ২০২৩ সালে নকশা জমা দেয়। প্রকল্পের আওতায় মোড়গুলো সম্প্রসারণ এবং দৃষ্টিনন্দন করা, নগরীর পিটিআই মোড়ে একটি ফুট ওভারব্রিজ, বেশ কিছু মোড়ে ফোয়ারা নির্মাণ, নতুন ফুটপাত, সড়ক বিভাজক, জেব্রা ক্রসিং, বসার জায়গা ও আধুনিক সড়ক বাতি স্থাপনের কথা ছিল।
কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কেসিসির উপসহকারী প্রকৌশলী মো.

মনিরুজ্জামান জানান, নগরীর ফুলবাড়ীগেট, নতুন রাস্তা, গোয়ালখালী, জোড়াগেট, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল, কেসিসি মার্কেট ও ময়লাপোতা মোড়ের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়। এর মধ্যে নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো মাঝপথে রয়েছে। তিনি বলেন, সড়ক বিভাগের আপত্তির কারণে পিটিআই মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ, পাওয়ার হাউজ মোড়, শান্তিধাম, রয়েল মোড়, বয়রা কলেজ মোড়, বৈকালী মোড়, রূপসা ট্রাফিক মোড়ের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. মাসুদ করিম বলেন, নতুন কর্মকর্তাদের আপত্তিতে কাজ বন্ধ রয়েছে। খুলনার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, কেসিসিকে নকশা পরিবর্তন করে কাজ করতে বলা হয়েছে।
কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান জানান, প্রকল্পের আর দুই মাস বাকি আছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলে টাকা ফেরত চলে যাবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক ব ভ গ র প রকল প র স ন দর য নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ