জনবল–সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। একদিকে চিকিৎসক–সংকট, অন্যদিকে ল্যাবের টেকনিশিয়ানের শূন্যতা। হাসপাতালে আসা রোগীদের রোগনির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে, যেতে হচ্ছে জেলা সদরসহ অন্য কোথাও। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।

রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে বর্তমানে ৪ জন চিকিৎসক আছেন। ছয়টি পদই শূন্য। স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে নিতে দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুজন চিকিৎসক প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে এক্স-রে টেকনিশিয়ানের পদ অনেক দিন ধরেই শূন্য। হাসপাতালে এক্স-রে হয় না। ল্যাবের টেকনোলজিস্টের দুটি পদ শূন্য। হাসপাতালে কোনো ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই।

শনিবার দুপুরে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, যাঁদের পরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা বাইরে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটে যাচ্ছেন। কেউ চলে যাচ্ছেন জেলা শহর মৌলভীবাজারে।

পেটের ব্যথা নিয়ে রাজনগর উপজেলার মশুরিয়া থেকে এসেছিলেন শাপলা বেগম (৩৮)। তাঁকে দেখে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তিনি বলেন, এখানে সেসব পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। তাই তিনি বাধ্য হয়ে মৌলভীবাজারে যাচ্ছেন।

উপজেলার মাথিউরা চা-বাগানের বাবুল মাদ্রাজী পাশি (৫৫) পায়ের আঘাতজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন। চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেছেন। হাসপাতালে এক্স-রে না থাকায় তিনিও মৌলভীবাজার চলে যান।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সোয়া দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা প্রতিদিন বহির্বিভাগে সাড়ে চার শতাধিক রোগী দেখছেন, ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। কিন্তু এক্স-রেসহ কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলেই রোগীদের স্থানীয় বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারে, নয়তো জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। অনেক দিন অব্যবহৃত থেকে পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসকের ১০টি পদের মধ্যে ছয়টি পদই শূন্য। শূন্য পদগুলোর মধ্যে আছে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন)। ২০১৭ সাল থেকে এই পদে কেউ নেই। জুনিয়র কনসালট্যান্টের (সার্জারি) পদটিও অনেক দিন ধরে শূন্য। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) পদটি প্রায় ছয় মাস ধরে খালি। হাসপাতালে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ থাকলেও দুটিই শূন্য। উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং টেংরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুজন চিকিৎসককে প্রেষণে এনে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স সচল আছে। একটি অচল হয়ে আছে, আরেকটি মেরামতের যোগ্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি অনেক দিন থেকেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এক্স-রে পরিচালনার জন্য টেকনিশিয়ান পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য। সচল না থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে এক্স-রে যন্ত্র।

একই অবস্থা ল্যাবের। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের দুটি পদ প্রায় ছয় মাস ধরে শূন্য। যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু টেকনোলজিস্ট না থাকায় কোনো ধরনের প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) দুটি টেবিলের মধ্যে একটি সচল আছে, একটি অকেজো। চিকিৎসক না থাকায় এই হাসপাতালে কোনো অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। দন্ত বিভাগের যন্ত্রপাতি পুরোনো হয়ে গেছে। চেয়ারের অবস্থা ভালো না।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব চালিয়ে নিচ্ছি, চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা দিতে অন্তত ১৪ জন চিকিৎসক দরকার। গোঁজামিল দিয়ে চলতেছে। এক্স-রে টেকনিশিয়ান, ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স র জনগর উপজ ল জন চ ক ৎসক ন চ ক ৎসক অন ক দ ন পর ক ষ এক স র

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই
  • হাওরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা