ব্রুকলিন ব্রিজে মেক্সিকো নৌবাহিনীর জাহাজের ধাক্কা, নিহত ২
Published: 18th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিন ব্রিজের সঙ্গে মেক্সিকোর নৌবাহিনীর একটি বড় প্রশিক্ষণ জাহাজের সংঘর্ষে ২ জন নিহত এবং অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন।
পালতোলা জাহাজটি সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সেটির মাস্তুল সেতুর সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস।
মেয়র বলেন, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের আগে ‘কুয়াওতেমক’ নামের জাহাজটির বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা বিকল হয়ে গিয়েছিল।
একটি শুভেচ্ছা সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আসা জাহাজটিতে ২৭৭ জন আরোহী ছিলেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় ব্রুকলিন ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় জাহাজটির উঁচু মাস্তুল সেতুতে আঘাত করে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় মাস্তুলের কিছু অংশ ডেকের ওপর ভেঙে পড়ে। সে সময় ডেকের ওপর কয়েকজন নাবিক দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁরাই আহত হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মেয়র এরিক অ্যাডামস লিখেছেন, ‘সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ২৭৭ জন আরোহীর মধ্যে ১৯ জন আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর। দুঃখজনকভাবে আরও ২ জন আঘাতের কারণে মারা গেছেন।’
আগে মেয়র বলেছিলেন, এই সংঘাতে ব্রুকলিন ব্রিজের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজ-সেতু সংঘর্ষের সময় কেউ পানিতে পড়ে যায়নি বলেও জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
‘সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ২৭৭ জন আরোহীর মধ্যে ১৯ জন আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর। দুঃখজনকভাবে আরও ২ জন আঘাতের কারণে মারা গেছেন।’এরিক অ্যাডামস, নিউইয়র্ক সিটির মেয়রএর আগে মেক্সিকো নৌবাহিনী থেকে ২২ জন আহত হওয়ার খবর দেওয়া হয়েছিল। জাহাজটির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর নিশ্চিত করে তারা বলেছে, ঘটনাটির তদন্ত চলছে।
নিউইয়র্ক কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, কুয়াওতেমক জাহাজের দুটি মাস্তুলের ওপরের অংশ ভেঙে পড়েছে। এ ঘটনার পর জাহাজটির সব কর্মীকে খুঁজে পাওয়া গেছে, আহত নাবিকদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনজাহাজের ধাক্কায় ভেঙে পড়ল সেতু, অনেক হতাহতের শঙ্কা২৬ মার্চ ২০২৪নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের অপারেশন প্রধান বলেছেন, জাহাজটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কারণে সেটি সেতুর একটি স্তম্ভের সঙ্গে ধাক্কা খায় বলেই তাঁর বিশ্বাস।
নিউইয়র্ক পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্রুকলিন ব্রিজ, ম্যানহাটনের সাউথ স্ট্রিট সমুদ্রবন্দর এবং ব্রুকলিনের ডাম্বো এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
কুয়াওতেমক জাহাজটি পরে সেখান থেকে টেনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাহাজটি ২৯৭ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া। মেক্সিকো নৌবাহিনী বলেছে, জাহাজটি ১৯৮২ সালে প্রথম সাগরে যাত্রা শুরু করে। এই বছর ৬ এপ্রিল একোপুলকো বন্দর থেকে ২৭৭ জন আরোহী নিয়ে জাহাজটি যাত্রা শুরু করে। সেটির চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল আইসল্যান্ড।
আরও পড়ুনচীনে জাহাজের ধাক্কায় ভেঙে গেল সেতু২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র কল ন ব র জ ন উইয়র ক জ হ জট র জন আহত স ঘর ষ র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের কাছে এখনো অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে, আশঙ্কা ইসরায়েলের
ইরানে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পরও তেহরানের কাছে কিছু সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে বলে ধারণা করছে ইসরায়েল। আর এসব ইউরেনিয়াম পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা করছে দেশটি। গতকাল বৃহস্পতিবার জ্যেষ্ঠ এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এমন খবর প্রকাশ করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাই ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ হয়ে গেছে। ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বিশেষ বাংকার-বিধ্বংসী বোমার মাধ্যমে এ হামলা চালানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অন্তত এক থেকে দুই বছর পেছনে ঠেলে দিয়েছি। অন্তত প্রতিরক্ষা দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের পর্যালোচনায় এমনটাই মনে করা হচ্ছে।’ যদিও শন পারনেল তাঁর এই দাবি প্রমাণে কোনো তথ্য উপস্থাপন করেননি।
পারনেল বলেন, গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের হিসাব অনুযায়ী, আসল সময়টা সম্ভবত দুই বছরের কাছাকাছি।
ইসরায়েলের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে থাকা ১৮ হাজার সেন্ট্রিফিউজের বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ সব ইউরেনিয়াম নষ্ট হয়নি। কিছু ইউরেনিয়াম বিশেষ পাত্রে আলাদা করে সংরক্ষণ করা ছিল, যা এখনো ইরানি বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা হুঁশিয়ার করে বলেন, কেউ যদি সে ইউরেনিয়াম সংগ্রহের চেষ্টা করে, তবে ইসরায়েল তা ধরে ফেলবে এবং আবার হামলা চালাবে।
নিউইয়র্ক টাইমসকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েলের বিশ্বাস, ১০ মাস আগে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর ইরান যে জোরেশোরে পরমাণু বোমা বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ ইসরায়েলের হাতে আছে। নাসরাল্লাহ ছিলেন ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এ–সংক্রান্ত প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভাগাভাগি করা হয়েছে। এরপরই ইসরায়েল ইরানের ওপর একের পর এক হামলা চালানোর নিজস্ব পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেয়।
তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাসচিব রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলার আগেই ইরান তাদের অনেক ইউরেনিয়াম মজুত সরিয়ে ফেলেছিল। তবে ইসরায়েলি ওই কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, এটা সম্ভব নয়, কারণ, এমনটা করা খুবই কঠিন।
‘১২ দিনের সংঘাত’গত ১৩ জুন থেকে ইরানের ওপর হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালায় তারা। পাশাপাশি দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা, গোয়েন্দা ও সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীদেরও হত্যা করে ইসরায়েল।
জবাবে ইসরায়েলের হাইফা, তেল আবিবসহ বিভিন্ন বড় শহরের দিকে ইরান টানা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এগুলোর কিছু কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় আঘাত হানে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নীতি অনুযায়ী, হামলার আসল জায়গাগুলোর তথ্য প্রকাশ করাটা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য নিষিদ্ধ।
এক সপ্তাহের মাথায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটির দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এই পাল্টা হামলাকে ট্রাম্প ‘খুব দুর্বল জবাব’ বলে উল্লেখ করেন। বলেন, তিনি আবার ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে শান্তি আলোচনার চেষ্টা শুরু করবেন।
নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘হামলার আগেই ইরান আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিল, এ জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি আরও বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন নাগরিক নিহত বা আহত হননি।
ট্রাম্পের মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইরান এই হামলা খুব হিসাব করে করেছে, যেন ওয়াশিংটন ও তেহরান দুই দেশই পরিস্থিতি শান্ত করার সুযোগ পায়। তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, ওরা নিজেদের ভেতরের সব ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলেছে। আশা করি, আর কোনো ঘৃণা থাকবে না।’
ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘হয়তো এখন আঞ্চলিকভাবে শান্তি ও সৌহার্দ্যের পথে এগোতে পারবে ইরান। আর আমি ইসরায়েলকেও সেটা করতে উৎসাহ দেব।’
চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু বিষয়ে আলোচনা আবার শুরু হচ্ছে এবং এরই মধ্যে নতুন আলোচনার সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে।
এর আগে ইরানে ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলার পর ওয়াশিংটন ও তেহরানের পাঁচ দফায় আলোচনা ব্যাহত হয়েছে।