মহাকাশ স্টেশনে নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান
Published: 19th, May 2025 GMT
চীনের তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন শেনজ্যু স্পেস বায়োটেকনোলজি গ্রুপ ও বেইজিং ইনস্টিটিউট অব স্পেসক্র্যাফট সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একদল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীদের দাবি, মহাকাশের কঠিন পরিবেশে টিকে থাকা ব্যাকটেরিয়াটি মূলত নিয়ালিয়া তিয়াগংজেনেসিস ব্যাকটেরিয়ার নতুন প্রজাতি। প্রোটিনের গঠন ও কাজের ধরনে বেশ পার্থক্য থাকায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মোকাবিলা ও তেজস্ক্রিয়তার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি মেরামত করতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া। নতুন এই তথ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সিস্টেমেটিক অ্যান্ড ইভল্যুশনারি মাইক্রোবায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
চীনের চ্যাম্প বা চায়না স্পেস স্টেশন হ্যাবিটেশন এরিয়া মাইক্রোবায়োম প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে চীনের তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশন থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয়। নমুনাগুলোর মধ্যেই নতুন প্রজাতির এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনআন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বিষাক্ত গন্ধ, আতঙ্কে নভোচারীরা৩০ নভেম্বর ২০২৪বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নতুন ব্যাকটেরিয়াটি একটি গ্রাম-পজিটিভ, স্পোর-গঠনকারী দণ্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য মহাকাশযানের জীবাণু নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, শিল্প ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। এটি নির্দিষ্ট জৈব যৌগ ভেঙে বর্জ্য থেকে বিভিন্ন উপকারী উপাদান তৈরি করতে পারে, যা পৃথিবী ও মহাকাশ—উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে মহাকাশ অভিযানের সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এই ব্যাকটেরিয়া বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তা-ই নয়, ব্যাকটেরিয়াটির তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধের ক্ষমতা নতুন ওষুধ উদ্ভাবনেও সাহায্য করতে পারে। আর তাই এই ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার শুধু মহাকাশ গবেষণার জন্যই নয়, পৃথিবীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া কেন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়
তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনায় যোগ দিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এসেছিলেন। তাঁদের দুই পক্ষের মধ্যকার পার্থক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। এক পক্ষকে আত্মবিশ্বাসী ও সুসংগঠিত বলে মনে হয়েছে। তারা তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে একেবারে পরিষ্কার। আর অন্য পক্ষকে অসংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী নয়, এমন মনে হয়েছে।
সম্ভাব্য বন্দোবস্তের সীমারেখা সম্পর্কে রাশিয়ার অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই পরিষ্কার। যদিও ভূখণ্ড–সংক্রান্ত বিষয়টাতে রাশিয়া একটি হিসাবি কৌশলগত অস্পষ্ট অবস্থান বজায় রাখছে। এর কারণ হলো, এটা তাদের চাপ দেওয়ার সুবিধাজনক কৌশল। মস্কো অব্যাহতভাবে ইস্তাম্বুলে চুক্তিতে ফেরার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি, ২০২২ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত চুক্তিটি ভেস্তে যায়।
এর বিপরীতে ইউক্রেনপন্থী জোটের অবস্থান ছিল বিশৃঙ্খল। যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রায় একটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। ইউক্রেন আর এর ইউরোপীয় মিত্ররা চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন যেন কিয়েভকে এমন কোনো শান্তিচুক্তির দিকে ঠেলে না দেয়, যেটা তাদের দৃষ্টিতে অপরিপক্ব ও অন্যায্য।
আরও পড়ুনপুতিনের যে সাত সত্যি জানেন না ট্রাম্প২৩ এপ্রিল ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে, এমন যেকোনো পথকে ট্রাম্প প্রশাসন স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। অন্যদিকে ইউক্রেন ও এর ইউরোপীয় অংশীদারেরা শান্তি আলোচনা শুরু করার আগে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতি প্রয়োজন বলে মনে করছে।
ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষের আলোচনা শুরুর ঠিক আগে ইউক্রেন ঘোষণা দেয় যে একটা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা না এলে তারা রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনের এই দাবির প্রতি সমর্থন দেন। রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দেয়। যাহোক, শুক্রবার বিকেলে ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনা শুরুর আগে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা ছিল ইউক্রেন নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে কি না।
আলোচনাস্থল থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধিরা যখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন, তখন তাঁরা এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি। দুই পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। সম্ভবত যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মুখরক্ষার জন্য আলোচনার বিষয় রাখা হয়েছে। তবে রাশিয়া চূড়ান্ত চুক্তির পরিষ্কার পথরেখা ছাড়া যুদ্ধবিরতিতে যেতে নিতান্তই অনিচ্ছুক।
পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ভূখণ্ড দখলকে রাশিয়া শাস্তি দেওয়ার পথ হিসেবে নিয়েছে। রাশিয়া মনে করে, ইউক্রেন অনমনীয়তা দেখাচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সম্প্রতি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ইউক্রেন যতবার আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তত তাদের ভূখণ্ড ছোট হয়ে যাবে।’কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি খেলার লক্ষ্য কী, সেটা একেবারেই স্বচ্ছ। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সেটা পরিষ্কার। যুদ্ধবিরতি হলে সেটা পরিষ্কারভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাবে। দর–কষাকষির ক্ষেত্রে রাশিয়ার মূল কৌশলগত সুবিধার জায়গা হচ্ছে ১০০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ সম্মুখরেখায় দেশটির সেনাবাহিনীর ধীরে হলেও ধারাবাহিক অগ্রগতি।
ইউক্রেন ও ইউরোপের পক্ষ থেকে এমনভাবে দাবিগুলোর নকশা করা হয়েছে, যেন সেগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো আলোচনাকে ভিন্ন দিকে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফাটল তৈরি করা। তারা চায় তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলটি (ইউক্রেনকে সামরিকভাবে আরও সহায়তা ও মস্কোর ওপর নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়াকে পরাজিত করার প্রচেষ্টা) আবারও চালু করতে।
এই কৌশলে নতুন কিছু নেই। আর কৌশলটির কারণে তিন বছর ধরে ইউক্রেনকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। ইউক্রেনের বিশাল ভূখণ্ড হারিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ৬৯ লাখ মানুষ (এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু) সম্ভবত চিরতরে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
আরও পড়ুনচীন কেন চায় না ইউক্রেন যুদ্ধ থামুক১৩ মে ২০২৫রাশিয়া একে কারসাজি হিসেবে দেখছে। সে কারণে রাশিয়া প্রত্যাশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্ন স্তরের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলকে পাঠিয়েছিল। তবে প্রতিনিধিদলে শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তাঁরা সম্ভাব্য একটি চুক্তি ক্ষেত্রে সব ধরনের কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম ছিলেন। এখানে বার্তাটি পরিষ্কার—মস্কো একটি বাস্তব দর–কষাকষির জন্য প্রস্তুত।
২০২২ সালে ইস্তাম্বুল আলোচনা সময় একটা মীমাংসায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে রাশিয়ার যে অবস্থান ছিল, সেটা পরিবর্তন হয়নি। রাশিয়া সে সময় একটা নিরপেক্ষ ইউক্রেন ও দেশটির জন্য ছোট আকারের সামরিক বাহিনীর শর্ত দিয়েছিল।
ভূখণ্ডের প্রশ্নে এখন কেবল রাশিয়ার পার্থক্য রয়েছে। ২০২২ সালের চুক্তির রূপরেখা অনুযায়ী, রাশিয়াকে সে বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন শুরুর আগের নিয়ন্ত্রণরেখায় ফিরে যেতে হতো। কিন্তু রাশিয়া এখন সেই ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ দাবি করছে, যা তারা সেই চুক্তির পর দখল করেছে। ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার ভূখণ্ড নিয়ে রাশিয়া একধরনের কৌশলগত অস্পষ্টতা বজায় রাখছে। কারণ, একে তারা দর–কষাকষির অস্ত্র হিসেবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ভূখণ্ড দখলকে রাশিয়া শাস্তি দেওয়ার পথ হিসেবে নিয়েছে। রাশিয়া মনে করে, ইউক্রেন অনমনীয়তা দেখাচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সম্প্রতি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ইউক্রেন যতবার আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তত তাদের ভূখণ্ড ছোট হয়ে যাবে।’
তবে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ক্রেমলিনের মূল লক্ষ্য নয়। রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পশ্চিমা সামরিক জোটের সম্প্রসারণ ঠেকাতে সীমান্তে একটি পরিষ্কার লাল দাগ টেনে দেওয়া। সে কারণে তারা ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান পুনর্বহালের দাবি তুলেছে এবং দেশটির সেনাবাহিনীকে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বলেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগদানের ব্যাপারে রাশিয়ার আপত্তি তুলনামূলক কম। এর কারণ হলো, বাস্তবে এই সম্ভাবনা খুব একটা নেই। কেননা পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ ইউক্রেনের কৃষি খাতকে নিজেদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, এই যুদ্ধের অবসান কেবল রাশিয়ার শর্তেই হতে পারে। আর সেই শর্ত যত কর্কশ আর অন্যায্য হোক না কেন। রাশিয়ান বাহিনীর প্রতিদিনের অগ্রগতি ও ধীরে ধীরে ইউক্রেনের ভূখণ্ড হারানোর ঘটনা এটিকে স্পষ্ট করে তোলে। শান্তি আলোচনা যতই বিলম্বিত হচ্ছে, ইউক্রেনের আকার ততই ছোট হচ্ছে। পুতিন একজন রাজনৈতিক চাঁদাবাজের মতো আচরণ করছেন।
লিওনিদ রাগোজিন লাটভিয়ার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত