নারীর অবমাননাকারী মন্ত্রী মুক্ত থাকলেও বিজেপির মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গ্রেপ্তার অধ্যাপক
Published: 19th, May 2025 GMT
অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের ‘অপরাধ’, তিনি অপারেশন সিঁদুর নিয়ে দেশের শাসক দল বিজেপির মানসিকতা ও ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই অপরাধে অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অথচ বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ এখনো মুক্ত। অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য বর্ণনাকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ বলে সম্বোধন করা সত্ত্বেও মন্ত্রী বিজয় শাহর বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি দল। তাঁর মন্ত্রিত্বও যায়নি। যদিও ওই মন্তব্যে রুষ্ট মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ অবশ্য বিজয় শাহকে নিয়ে বিজেপির দ্বিচারিতার সমালোচনা করেননি। বস্তুত তিনি কোনো বিশেষ ঘটনারও উল্লেখ করেননি। অপারেশন সিঁদুরের দৈনন্দিন সাফল্য বর্ণনার দায়িত্বে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে ‘লোক দেখানো’ অভিহিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, অনেক দক্ষিণপন্থী কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন। এটা অবশ্যই ভালো। একই রকম জোরালোভাবে তাঁরা যদি গণপিটুনি, বুলডোজার অভিযান ও ঘৃণার রাজনীতির শিকার মুসলিম নাগরিকদের রক্ষার দাবি তোলেন, তা হলে তা হবে প্রকৃত দেশপ্রেম। সেভাবে সরব হলে ভবিষ্যতে নিগৃহীত ব্যক্তিরা দেশে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। অন্যথায় এটি কেবল ভন্ডামি বলেই প্রতিভাত হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধ্যাপক মাহমুদাবাদের এই মন্তব্য দক্ষিণপন্থী বিজেপির গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত শনিবার হরিয়ানা বিজেপির যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাথেরি সোনিপত জেলার রাই থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রোববার দিল্লি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
দিল্লি পুলিশের সহকারী কমিশনার অজিত সিং বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট, বৈরিতা তৈরি, বিচ্ছিন্নতাবাদে উসকানি, সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কাজকর্ম ও ধর্মীয় বিশ্বাস অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অধ্যাপকের মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দক্ষিণপন্থীরা সরব হওয়ায় হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়, অধ্যাপক মাহমুদাবাদ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নারীদের অবমাননা করেছেন। সাম্প্রদায়িক বিভেদ উসকে দিয়েছেন। কমিশনের চেয়ারপারসন রেণু ভাটিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অধ্যাপক মাহবুদাবাদ এমন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা মানা কঠিন। তাঁর উচিত ছিল কমিশনের সামনে হাজির হয়ে দুঃখ প্রকাশ করা।
গ্রেপ্তারের আগেই অবশ্য অধ্যাপক মাহমুদাবাদ নারীবিদ্বেষের অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্বেষ তো নয়ই, আমি বরং প্রশংসা করেছি দুই নারীকে ব্রিফিংয়ে নিয়ে আসার জন্য, যাঁদের একজন মুসলিম।’ তিনি বলেন, ‘আমি শুধু এটাই বলতে চেয়েছি, এই অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসিকতা দেশের অন্য মুসলিমদের প্রতিও দেখানো দরকার।’
অধ্যাপক মাহমুদাবাদ জবাবদিহি করে বলেন, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষেই কথা বলেছেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা এই অধ্যাপকের গ্রেপ্তারির সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা। সরাসরি তাঁরা শাসক দলের দ্বিচারিতার উল্লেখ করে এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লিখেছেন, ক্ষমতাসীনেরা কুমন্তব্য করেও প্রকাশ্যে ঘুরছেন, অথচ সত্যবাদীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
অখিলেশ স্পষ্টতই নাম উল্লেখ না করে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা গতকাল রোববার রাতে অধ্যাপক মাহমুদাবাদের ‘পোস্ট’ হুবহু তুলে দিয়ে ‘এক্স’-এ লেখেন, এটাই নতুন ভারত। একজন ইতিহাসবিদকে গ্রেপ্তার করা হলো সত্য কথা বলা ও বুক চাপড়ানো জাতীয়তাবাদী ভন্ডামির চরিত্র উদ্ঘাটনের জন্য। অথচ বিজেপির মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটাই মোদি সরকারের দ্বিচারিতা। এটা শুধু ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে নয়, এমনটা করা হচ্ছে বিজেপিবিরোধী সব বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে। কারণ, এই সরকার প্রশ্ন ভয় পায়। নিজের দেশের নাগরিকদের ভয় পায়। তাই লেখক, অধ্যাপক, সমালোচকদের শত্রু বলে গণ্য করে।
অধ্যাপক মাহমুদাবাদের পরিচয় দিয়ে পবন খেরা লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই যখন অটল বিহারি বাজপেয়ীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন, তখন পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন ‘পদ্মভূষণ’ জগৎ মেহতা। সেই মেহতার নাতি এই আলি খান মাহমুদাবাদ। পবন খেরা লিখেছেন, মাহমুদাবাদ দুটি ভুল করেছেন। একটা ভুল এই পোস্ট লেখা, অন্য ভুল তাঁর নাম। এটাই তাঁর অপরাধ।
এআইএমআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি এই গ্রেপ্তারকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ উল্লেখ করে বলেন, স্রেফ বিজেপির নেতারা আপত্তি জানিয়েছেন বলেই অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ তিনি মোটেই দেশ বা নারীবিরোধী কিছু লেখেননি।
অধ্যাপক মাহমুদবাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, রামচন্দ্র গুহ, জয়তী ঘোষ, নিবেদিতা মেনন, রাম পুনিয়ানিদের মতো বিশিষ্টজনেরা। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘আমরা এমন এক অস্বাভাবিক ভারতে রয়েছি, যেখানে সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে কেউ যুদ্ধবাজ মনোভাবের সমালোচনা করলেও তাঁকে হয়রান হতে হয়।’
অধ্যাপক মাহমুদাবাদ যেখানে অধ্যাপনা করেন, সেই অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো। এক বিবৃতিতে তারা শুধু বলেছে, ‘পুলিশ অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে রোববার সকালে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা পুরো মামলার বিশদ বিবরণ যাচাই করছি। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্তের কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর কর ছ ন উল ল খ র মন ত মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে সব অধিকার ভোগ করার জন্য প্রস্তুত আছি: নিরাপত্তা উপদেষ্টা
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার যে অধিকার রয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গরূপে ভোগ করতে প্রস্তুত আছি।
সম্প্রতি বিএনপির এক শীর্ষ নেতা খলিলুর রহমানকে বিদেশি নাগরিক বলে অভিযোগ করার পর রোববার বাসসকে এ কথা জানান তিনি।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই অভিযোগ প্রমাণের দায়ভার অভিযোগকারীর ওপর বর্তায় এবং প্রয়োজনে তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে।’
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি একজন বাংলাদেশি নাগরিক। সেই হিসেবে আমার পূর্ণাঙ্গ অধিকার ভোগ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
সম্প্রতি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান একজন বিদেশি নাগরিক।