প্রথম চলচ্চিত্রেই শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মান -কে এই নাদিয়া মেল্লিতি?
Published: 25th, May 2025 GMT
২৩ বছর বয়সী এই তরুণী শনিবার সন্ধ্যায় কান উৎসবের প্যালেস দে ফেস্টিভ্যালের মঞ্চ থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার হাতে নেন নাদিয়া মেল্লিতি। অভিনয় জগতে সম্পূর্ণ নবাগত নাদিয়া মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন “লা পেটিট ডের্নিয়ে” চলচ্চিত্রে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন হাফসিয়া হার্জি। এটি ফাতিমা দাসের ২০২০ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত তৃতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
গল্পে দেখা যায়, ফিলোসফির ছাত্রী ফাতিমা। যিনি শহরতলীতে বাস করেন। নিজের লিঙ্গহীনতা নিয়ে লজ্জিত এবং তা পরিবারের কাছে প্রকাশ করেন না। ধীরে ধীরে সে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে। নিজের যৌনতা আবিষ্কার করে ও প্রেমে পড়েন।
এই গল্পে অভিনয় করেই সেরার পুরস্কার জেতেন নাদিয়া। পুরস্কার পেয়ে তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি আমি বর্ণনা করতে পারছি না, এটি একদম অবিশ্বাস্য।’
বিশেষ করে তাঁর মাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন,‘ মা, আমি জানি তুমি আমার কথা শুনছো। আশা করি তুমি গর্বিত।’
নাদিয়ার অভিনয়ের পেছনের গল্প
নাদিয়া প্যারিসের চাতেলে এলাকায় হাঁটছিলেন। তখন কাস্টিং ডিরেক্টর অড্রে জিনি তাকে খুঁজে পান। নাদিয়া কোনো অভিনয় প্রশিক্ষণ নেননি। সিনেমার প্রতি বিশেষ আগ্রহও ছিল না। তিনি শারীরিক ও ক্রীড়া বিজ্ঞানে বিভাগের ছাত্রী। “লা পেটিট ডের্নিয়ে” ছবির জন্য কাস্টিংয়ের সুযোগ পেয়ে তিনি অভিনয়ের চেষ্টা করেছেন কেবল। কিন্তু ভাবেননি এত বড় সুযোগ আসবে।
পরিচালক হাফসিয়া হার্জি বলেন, নাদিয়ার ছবি দেখে আমি মুহূর্তেই মুগ্ধ হয়েছি। যদিও আমি অন্যান্য কাস্টিংও চালিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাদিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব
এছাড়াও পড়ুন:
গুটি ও পোকা উৎপাদন বন্ধ, রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রে সবজি চাষ!
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বীজ ও রেশম পোকার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ কার্যালয়ের ৪৮ বিঘার বিশাল জমিতে মাত্র তিন বিঘায় এ বছরে তুঁতের চাষ হচ্ছে। বাকি অংশ লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি চাষ করছেন বহিরাগতরা।
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টি। কাগজে কলমে সেখানে দুজন কর্মকর্তা থাকলেও ভেতরের জরাজীর্ণ ঘরগুলোতে বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের মধ্যে কয়েকটি ছোট ছোট কোয়াটার রয়েছে, সেখানে কয়েকটি পরিবার বাস করেন। সহকারী পরিচালকের রুমের সামনে পশ্চিম পাশে তালাবদ্ধ পোকা উৎপাদনের ভবনটি। বহু বছর ধরে পোকা উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
কেন্দ্রের সামনের বিশাল অংশ জুড়ে ফসলের মাঠের মতো আইল দিয়ে ভাগ করা। ছোট বড় বিভিন্ন আয়তনে ভাগ করা জমিতে বিভিন্ন সবজি লাগানো হয়েছে। লাল শাক, পালং শাক, পাট শাক, ঢেঁড়স, বেগুন, কলমি শাক, ঝিঙে চিচিঙ্গাসহ নানা জাতের সবজি। এসব ক্ষেতে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন কৃষি শ্রমিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুঁত গাছ রোপন না করা এবং রেশম পোকা ও গুটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বিধায় এসব জমি সবজি চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। রেশম উৎপাদন কেন্দ্রের ভেতরের কর্মচারি ও বহিরাগতদের কাছে বর্গা দিয়েছেন কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক। কারো কাছে তিন ভাগের একভাগ সবজি এবং কারো কাছ থেকে এককালীন টাকা নিয়ে বর্গা দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, লোকবল কম ও জবাবদিহিতা না থাকায় এসব করছেন সহকারী পরিচালক। বলা হচ্ছে, গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের আশপাশে দুটি কারখানা থাকায় পোকা উৎপাদন করা যায় না। কারখানার ধোঁয়ায় রেশম পোকা মারা যায় এবং গুটিও তৈরি করতে পারে না।
একসময় ভারতীয় উপমহাদেশসহ আন্তর্জাতিক বাজারে রেশম বস্ত্রের বেশ কদর ছিল। রেশমের পুরনো ঐতিহ্য, গুণগত মান ও জনপ্রিয়তার কারণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে রেশম কাপড়ের চাহিদা এখনো রয়েছে। হতদরিদ্র মানুষদের রেশম চাষের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে বাড়বে কর্মসংস্থান।
তবে গাজীপুরের এই জোনাল কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিঘার পর বিঘা জমি পড়ে রয়েছে, অথচ সেখানে উৎপাদন নেই। বর্গা দিয়ে সবজি চাষ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
দায়িত্বশীলরা জানান, তুঁত গাছের পাতা রেশম গুটি পোকার প্রিয় খাবার। তবে কারখানার শব্দ, ধোঁয়াসহ বিভিন্ন কারণে এখানে পোকা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জায়গাগুলো সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।
কোনাবাড়ি এলাকার স্থানীয় আলাল বলেন, “ওই কার্যালয় থেকে সবজি এনে লোকজন বিক্রি করে। সবজি ছাড়া কিছু উৎপাদন হয় কিনা আমাদের জানা নেই। শুনি এখানে রেশম চাষ হয়। তবে কোনদিন সেসব কার্যক্রম হতে দেখিনি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্গাচাষী বলেন, “১০ হাজার টাকা দিয়ে এখানে অল্প একটু জমি নিয়েছি। সেখানে আমি সবজি চাষ করি। এছাড়া কর্মকর্তাদেরও সবজি দিতে হয়। আমার মতো অনেকেই এখানে জমি নিয়ে চাষ করে।”
অপর এক চাষী বলেন, “আমরা ভেতরেই থাকি। অনেক যায়গা ফাঁকা রয়েছে, সেখানে চাষবাস করি। যখন তাদের কাজ থাকে, করে দেই। বাকি সময় বাইরে কাজ করি। কয়েক বছর ধরে ভেতরেই পরিবার নিয়ে থাকি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘আমাদের লোকবল সংকট। আমরা মাত্র দুজন কর্মকর্তা রয়েছি। তাও দেশের বিভিন্ন যায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমাদের যখন শ্রমিক দরকার হয়, তখন পাওয়া যায় না। এজন্য কয়েকটি পরিবারকে থাকতে দিয়েছি।”
সবজি চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যায়গা পতিত না রাখতে। এরপর থেকেই সবজি চাষ করতে দিচ্ছি। চাষ করে দুই ভাগ চাষি নেয়, একভাগ আমাদের দেয়। তবে অনেকেই ঠিকমতো সবজি দেয় না। এজন্য এককালীন টাকা নিয়ে বর্গা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ওই টাকা অফিসের কাজেই ব্যবহার করি।”
রেশম চাষের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “এখানে অনেক আগে গুটি উৎপাদন হতো। তবে আশপাশে থাকা বিভিন্ন কারখানার ধোঁয়ার কারণে পোকা মরে যায়। এজন্য এখন রেশম গুটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখন আমাদের যেটুকু দরকার হয়, সেটুকু যায়গায় তুঁত গাছ লাগিয়েছি। ৪৮ বিঘার মধ্যে এবার তিন বিঘায় তুঁত চাষ করা হয়েছে।”
ঢাকা/এস