জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ ২৫ মে (রোববার)। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে (১১ জ্যৈষ্ঠ) অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
নজরুলকে কেউ বলেন প্রেমের কবি, কেউ বলেন দ্রোহ আর বিদ্রোহের। কারো কাছে মানবতার কবি নজরুল, গান গেয়েছেন সাম্যের। প্রাণের কবি, গানের কবি-এমন নানা নামে ডাকে সাধারণ। গবেষকরা বলছেন, নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডি নয়, নজরুলের বিস্তৃতি সর্ব পরিসরে। সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে লিখেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও গান।
১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা। ’আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলকে দেওয়া হয় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। মাত্র ২২ বছর ব্যাপ্তির লেখক জীবনে রচনা প্রায় ৪ হাজার গান, অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প আর উপন্যাস। সাহিত্যের পাশাপাশি করেছেন সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালন, এমন কী অভিনয়ও। বর্ণাঢ্য জীবনে জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।
স্বাধীনতার পরের বছর কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। দেওয়া হয় জাতীয় কবির সম্মান। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন প্রিয় কবি। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
কবি না থাকলেও তার অমর কবিতা, গান এখনও প্রেরণা যোগায় অন্যায়-জুলুম আর শোষণের শেকল ভাঙার। কবি যেন আগে থেকেই অনাগত ভবিষ্যৎ জানতেন। চারপাশে সাম্প্রতিক যে অস্থিরতার চিত্র আমরা খুঁজে পাই, তাতে নজরুলের মহাকালছেদী প্রতিবাদী কণ্ঠ বড় প্রয়োজন।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে দিনটি। দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে কবির সমাধিতে যাবেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মরতরা। সেখানে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন তারা।
এদিকে, জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ রোববার (২৫ মে) শুরু হয়ে আগামী মঙ্গলবার (২৭ মে) পর্যন্ত চলবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো.
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা করবেন। পাশাপাশি স্বাগত বক্তৃতা দেবেন জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার। অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ল ইসল ম নজর ল
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা।
তিনি বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি, আবার বিদ্রোহী কবিও। বাংলা কবিতায় নজরুলের আর্বিভাব একেবারেই উল্কার মতো। ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ অথবা মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-’। এমন উচ্চারণে তিনি নিজেকে একটু আলাদাভাবেই চিনিয়েছিলেন।
তিনি যেমন ছিলেন নির্ভিক, তেমনি রোমান্টিক। রোমান্টিকতার আতিশয্য ও অভিমানে ভরা তার অনেক গান গত শতকের অনেকটা সময় ধরে বাঙালির হৃদয় রাজ্যে বিচরণ করছে। অধিকাংশ গান সুর প্রধান। বৈচিত্রপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।
তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অন্তিম শয্যায় আছেন জাতীয় কবি।
আজ সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হচ্ছে ‘নজরুলজয়ন্তী’। জাতীয় পর্যায়ে কুমিল্লায় আজ (রবিবার) শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। অনুষ্ঠানগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে এ উপলক্ষ্যে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
এতে সমবেত সংগীত, সমবেত নৃত্য, একক সংগীত ও নাটক পরিবেশিত হবে।
ঢাকা/টিপু