ভূগর্ভের পানি তুলতে আরও ৭৫ পাম্প বসাবে ওয়াসা
Published: 25th, May 2025 GMT
খুলনায় গত মার্চ থেকে হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। কিছু এলাকায় গভীর উৎপাদক নলকূপেও (মাটির নিচে বসানো পাম্প) পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। খুলনা ওয়াসার নিজস্ব পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে ভূগর্ভের পানির স্তর ১ দশমিক ৯৮ মিটার থেকে ৪ দশমিক শূন্য ৪ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমেছে। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে ওয়াসার নিজস্ব উৎপাদক নলকূপেও পানি উঠছে কম।
এমন সংকটের মধ্যে নতুন করে আরও ৭৫টি গভীর উৎপাদক নলকূপ বসাতে যাচ্ছে খুলনা ওয়াসা। এসব নলকূপ দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার এবং অন্য সময় প্রতিদিন ৫০ লাখ থেকে আড়াই কোটি লিটার করে পানি তোলা হবে। পাম্প বসানোর জন্য গত ২৭ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, যথেচ্ছভাবে ভূগর্ভের পানি তোলায় স্তর প্রতিবছর নিচে নামছে। ওয়াসার এই উদ্যোগে বিপদ আরও বাড়বে।
ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, ১৫ লাখ মানুষের খুলনা নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, গ্রাহককে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। এর মধ্যে মধুমতী নদী থেকে পানি এনে পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয় প্রায় ৬ কোটি লিটার। এ ছাড়া ৩৮টি পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয় আড়াই কোটি লিটার। বাকি পানি নগরবাসী ব্যক্তিগতভাবে বসানো উৎপাদক নলকূপ (পাম্প) থেকে উত্তোলন করেন।
প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানির স্তর পরিমাপ করে ওয়াসা। গত ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে কিছু কিছু এলাকায় পানির স্তর ১ দশমিক ৯৮ মিটার থেকে ৪ দশমিক শূন্য ৪ মিটার (১৩ দশমিক ২৫ ফুট) পর্যন্ত নিচে নেমেছে। নগরীর ৯, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২১, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে স্তর নিচে নেমেছে বেশি।
পানির স্তর পরিমাপ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নেমে যায়। প্রতিবছর এই হার বাড়ছে।
ওয়াসায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে ৭৬ হাজার ৬২৮টি ভবনের মধ্যে ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে ৪৩ হাজার ১৮৫টিতে। নগরীর সম্প্রসারিত এলাকা এবং বাদ পড়া ভবনে পানির সংযোগ পৌঁছাতে পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ওয়াসা। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৭৫টি উৎপাদক নলকূপ বসানো হবে।
ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২)-এর ফোকাল পারসন মো.
খুলনার ভূগর্ভের পানি ও পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ, প্রতিবেশ, পানি ও মাটির গুনাগুন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। ভূগর্ভের যে অ্যাকুইফার (ভূগর্ভের শিলাস্তর) থেকে মিষ্টি পানি তোলা হচ্ছে, তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই পানি রিচার্জ হতে ৩৫ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। তিনি বলেন, ভূগর্ভের মিঠা পানির স্তর যদি শেষ হয়ে যায়, তখন তা পূরণ করবে নোনাপানি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প সরবর হ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াচ্ছে ইউরোপের এক কোম্পানি
বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সরবরাহে অনেক বছর ধরে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইউরোপের ‘লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি’ বা এলডিসি। ২০২২ সালে বাংলাদেশে কার্যালয় খোলে কোম্পানিটি। তিন বছরের মাথায় এখন বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে নিজস্ব উৎস থেকে পণ্য আমদানি করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পরিকল্পনা করছে তারা। সিঙ্গাপুরে অবস্থিত এলডিসির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
এলডিসির তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭৪ বছরের পুরোনো এই বহুজাতিক কোম্পানির বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ব্যবসা রয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ‘লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে এ দেশে কার্যক্রম শুরু করে। কৃষিপণ্য সরবরাহে ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথম তারা এ দেশে কোম্পানি খুলে কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশে বছরে এখন দেড় হাজার কোটি ডলার বা ১৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি হয়। এসব কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে মানুষের খাদ্য, প্রাণিখাদ্য ও রপ্তানিপণ্যের কাঁচামাল। এই তিন খাতে চাহিদা বাড়ায় আমদানিও বাড়ছে। বাজার বড় হতে থাকায় এর আগে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাগ্রোকর্প, সুইস সিঙ্গাপুর ও ইটিজি এ দেশে কার্যালয় খুলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এলডিসিও বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে এলডিসির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের প্রধান রুবেন্স মার্কেস প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বড় পরিসরে আমদানি করতে পারে না। তাদের জন্য এলডিসির বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বিতরণপ্রক্রিয়া সহজ করাই আমাদের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে বছরজুড়ে ভোক্তারা প্রতিযোগিতামূলক দামে কৃষিপণ্য হাতে পাবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য আমদানি করে মূলত সাড়ে পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান। বড় শিল্পগ্রুপগুলো জাহাজ ভাড়া করে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করে। আবার সক্ষমতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে পারে না। মূলত ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে স্থানীয়ভাবে সরবরাহের পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।
লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি মূলত বিশ্বের কৃষি উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলো থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। উৎপাদন থেকে প্রক্রিয়াজাত, পরিবহন ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত কোম্পানিটি বিশ্বজুড়ে সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেমন ভারতে ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে এলডিসি। ভারতে কোম্পানিটির একটি ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা ও একটি কফি প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। বাজার বড় হচ্ছে, বড় পরিকল্পনা এলডিসির এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১ হাজার ৫০৬ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে প্রায় ১৩৩ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য সরবরাহ করেছে এলডিসি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম, সয়াবিন বীজ, ক্যানোলা বীজ, অপরিশোধিত চিনি, সয়াবিন তেল, ভুট্টা, সয়া কেক, তুলা ইত্যাদি। এলডিসি এসব পণ্য সরবরাহ করেছে বিশ্বের ১৯টি দেশ থেকে। এর মধ্যে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ হয়েছে মোট পণ্যের ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, বাদশা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান এলডিসি থেকে নিয়মিত পণ্য আমদানি করে।
বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে এলডিসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে রুবেন্স মার্কেস জানান, বাংলাদেশের বাজারে পণ্যভিত্তিক সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এলডিসি। এ জন্য শুরুতে খাদ্যশস্য, তেলবীজ ও ডালের সরবরাহ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কৃষিপণ্যের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এনবিআরের হিসাবে, গত বছর ৩৭৪ কোটি ডলারের কাঁচা তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে তুলা আমদানিতে এক থেকে দুই মাস লাগে। তাই তুলার সরবরাহব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে এলডিসির।
এ বিষয়ে রুবেন্স মার্কেস জানান, বাংলাদেশে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলা সরবরাহে অবকাঠামো উন্নয়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে এলডিসি। কাঁচামাল আমদানিতে বস্ত্র খাতের কারখানাগুলোর মূলধন যাতে দীর্ঘ সময় আটকে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে চায় এলডিসি। শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক সম্ভাবনা হিসেবে বাংলাদেশকে দেখছে এলডিসি। কারণ, বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি মানুষের বাজার।