সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তাযুক্ত। গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া চাঁদা সরকার লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগের মুনাফা বাড়লে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের পেনশনও বাড়বে। এমন আট সুবিধার কারণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে (স্কিম) যোগ দিতে মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে সরকার। 

তবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অন্তত ১০ ধরনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১১ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পেনশন কর্মসূচির প্রতি সাধারণ মানুষকে আরও বেশি আকৃষ্ট করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে শিগগির মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। 

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সর্বজনীন পেনশনবিষয়ক এক কর্মশালায় এ কথা বলা হয়েছে। অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। আর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (তহবিল ব্যবস্থাপনা) মো.

গোলাম মোস্তফা। 

চার কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত  গ্রাহকেরা চাঁদা দিয়েছেন ১৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গ্রাহক আকৃষ্ট করতে সারা দেশে মেলা আয়োজনের চিন্তা।  

কর্মশালার পর অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এতে বলা হয়, ‘মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ কর্মশালায় বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশন স্কিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার কর্মশালায় বলেছেন, এ কর্মসূচি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। তাতে সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।  

কর্মশালায় জানানো হয়, বেসামরিক প্রশাসন, রেল ও কম্পট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ) মিলে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। এ তিন জায়গা থেকে পেনশনে আছেন বর্তমানে ৮ লাখ ৮১ হাজার জন। এর বাইরে ৭৫ লাখ মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। আর ১০ লাখ আছেন, যাঁরা প্রদেয় ভবিষ্য তহবিল (সিপিএফ) পেয়ে থাকেন। 

প্রগতি, সমতা, প্রবাস ও সুরক্ষা—এ চার পেনশন কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮২২ জন গ্রাহক হয়েছেন। তাঁরা চাঁদা দিয়েছেন ১৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট জাতীয় পেনশন কর্মসূচি চালু হয়।

পেনশনের ৮ সুবিধা

প্রবন্ধে পেনশন কর্মসূচিতে আসার কারণ হিসেবে আটটি সুবিধার কথা তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: প্রথমত, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তাযুক্ত; দ্বিতীয়ত, পেনশনের আওতায় পাওয়া যাবে সামাজিক সুরক্ষা। তৃতীয়ত, গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা চাঁদা সরকার লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে। চতুর্থত, বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা বাড়লে গ্রাহকের পেনশনও বাড়বে। পঞ্চমত, সরকার বিনিয়োগ করার আগে চাঁদার টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। 

অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে: সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে এ কর্মসূচি চালুর সুবিধা; মাসিক ভিত্তিতে চাঁদার টাকার বর্তমান মূল্য ও ভবিষ্যৎ মূল্য হিসাবের সুযোগ এবং কত টাকা চাঁদা দিলে কত টাকা পাওয়া যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া। 

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পেনশন কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে আমরা এখন স্থানীয় পর্যায়ে মেলার আয়োজন করব। এ ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠপর্যায়কে তাগিদ দেওয়া হতে পারে।’ 

সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ 

কর্মশালায় পেনশন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের পথে সরকারের যেসব চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: পেনশন কর্মসূচিতে এলে কী সুবিধা পাওয়া যাবে, তা সম্ভাব্য গ্রাহকদের বোঝানোর চ্যালেঞ্জ; তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) পদ্ধতিকে শক্তিশালী করার চ্যালেঞ্জ, সমতা কর্মসূচির সুবিধাভোগী নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জ। কারণ, এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কাদের বার্ষিক আয় ৬০ হাজার নিচে, তা চিহ্নিত করা কঠিন। 

অন্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে: কেউ কম্পিউটার পরিচালনা করতে জানেন, কেউ জানেন না। আছে সাইবার নিরাপত্তার বিষয় অর্থাৎ সবকিছুই যেহেতু অনলাইনে করতে হয়, ফলে নিরাপত্তার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া প্রগতি কর্মসূচিতে প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, প্রবাস কর্মসূচিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের যুক্ত করার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার চ্যালেঞ্জ। 

এসব কাজ করার জন্য দক্ষ ও পেশাগত জনবল নিয়োগ; হিসাবের জন্য ব্যাংক, জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্তিও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা পাওয়াকে আরেক চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে সরকার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র হক র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অবৈধভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না: ফয়জুল করীম

হত্যা, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ করে অবৈধভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শুরুর আগে ঢাকার সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নগরী প্রদক্ষিণ করে। 

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এ সময় বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চরিত্র একই। দল দুটির নেতাকর্মীরা খুনি, ধর্ষক। হাতে তাদের রক্তমাখা থাকে। লোক দেখানো বহিষ্কার নয়, রাজধানীতে পাথর ছুড়ে প্রকাশ্যে যুবক হত্যার দায় দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার বানাচ্ছে তারাই অতীতে দেশকে দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে। ঢাকায় সোহাগ হত্যার ঘটনাটি পুলিশ ভিন্নখাতে নিতে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। 

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন- ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের মুহতারাম কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমাদ সাকী।

মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ আলামিন, মাওলানা মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ লোকমান হাকিম, সহ-সভাপতি শেখ শামসুল আলম মিলন, সেক্রেটারি মাওলানা আবুল খায়ের আশ্রাফী, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মাদ কাওছারুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ