চাল বিতরণে টাকা আদায়: ৮ ইউপি সদস্য কারাগারে
Published: 27th, May 2025 GMT
পঞ্চগড়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন দরিদ্র ও অসহায় নারীদের জন্য সরকারের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি)’ কর্মসূচির চাল বিতরণে টাকা নেয়ার অভিযোগে আট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১১ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে তিন নারী সদস্য জামিন পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে পঞ্চগড়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের তোলা হলে বিচারক নাহিদ আকতার জুলিয়েট এ আদেশ দেন।
পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আদম সুফী এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় কেউ বাদী না হওয়ায় বোদা থানা পুলিশ তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।
আরো পড়ুন:
বরিশালের সাবেক এমপি জেবুন্নেছা কারাগারে
ডিআরইউতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলায় স্ত্রীসহ জাকির কারাগারে
জেলহাজতে যাওয়া পুরুষ ইউপি সদস্যরা হলেন, বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হামিজ উদ্দিন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রিয় নাথ রায়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুনীল চন্দ্র রায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দাহির উদ্দিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাদিমুল ইসলাম এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফুল ইসলাম।
জামিনপ্রাপ্ত তিন নারী সদস্য হলেন, ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য শেফালী রাণী; ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিলকিস বেগম এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুপালী বেগম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। যদিও এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ভিত্তিতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। বিষয়টি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় অভিযোগপত্রসহ জিডির অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনের ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, ভিডাব্লিউবি কর্মসূচির চাল বিতরণের অনিয়মের ঘটনায় কেউ বাদী হয়ে মামলা না করায় মঙ্গলবার বিকেলে ৫৪ ধারায় তাদের আদালতে তোলা হয়। পরে আদালত তিন নারী সদস্যকে জামিন ও আট পুরুষ সদস্যকে জেলহাজতে পাঠান।
পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আদম সূফী জানান, এই ১১ ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা দায়ের করবে।
সোমবার (২৬ মে) দিনব্যাপী বোদা উপজেলার ইউনিয়নে দরিদ্র ও অসহায় নারীদের জন্য সরকারের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি)’ কর্মসূচির ২৫৮ জন উপকারভোগীর মাঝে চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এ সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আদায় করছিলেন ইউপি সদস্যরা। পরে স্থানীয়রা বিকেলে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে আটকে রেখে সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। পরে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি, সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এ সময় অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় এই ১১ ইউপি সদস্যকে আটক করে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে আদায় করা নগদ ১ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা/নাঈম/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ড র সদস য চ ল ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।