দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। আজ মঙ্গলবার লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে।

গত পাঁচ দিনের টানা দরপতনে সূচকটি গত প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ১২ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। টানা পতনে সূচক এখন আবার ২০২০ সালের আগস্টের অবস্থানে ফিরে গেছে। সেই সঙ্গে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। এ অবস্থায় বাজারে এখন শুধু হতাশা বিরাজ করছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ১২৩ পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশের বেশি কমেছে। প্রতিদিনই লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতন হয়। বাজারের পতন এতটাই ভয়াবহ পর্যায়ে নেমেছে যে লোকসান এড়াতে ভালো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি দিয়েও বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি এখন শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস, স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ  সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কারণ, বাজারের যে অবস্থা, তাতে এসব প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা এখন সংকটের মুখে।

শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি দৈনন্দিন খরচের আয়ও উঠছে না। ফলে কর্মীদের বেতন–ভাতাসহ নিয়মিত খরচ জোগাতেই দেনা বা ঋণ করতে হচ্ছে। ব্রোকারেজ হাউসের পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও পরিচালন লোকসান গুনছে।

বাজারের দরপতন এতটাই ভয়াবহ যে গত বছর রেকর্ড মুনাফার পরও গত দুই দিনে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৬ টাকা বা সাড়ে ১১ শতাংশ কমে গেছে। আজ মঙ্গলবার দিন শেষে ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে ৪৫ টাকা ৯০ পয়সায় নেমেছে। অথচ গত রোববারও ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫২ টাকা। গত দুই দিনে বড় ধরনের দরপতনের কারণে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৭ আগস্ট ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ছিল প্রায় ৪৩ টাকায়। আগস্টে দেশের বড় ধরনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটির দাম সেপ্টেম্বরের শুরুতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫৭ টাকায় উঠেছিল। সেখানে থেকে এখন তা ৪৬ টাকায় নেমে এসেছে।

একই ভাবে গত দুই দিনে স্কয়ার ফার্মার শেয়ারের দাম ৭ টাকা কমে ২০০ টাকায় নেমে এসেছে। গত ৯ মাসের মধ্যে এটিই স্কয়ার ফার্মার শেয়ারের সর্বনিম্ন বাজারমূল্য। সর্বশেষ গত বছরের ১১ জুন স্কয়ার ফার্মার শেয়ারের বাজারমূল্য সর্বনিম্ন ১৯৮ টাকায় নেমেছিল। প্রায় এক বছরের ব্যবধানে এখন আবার তা একই পর্যায়ে নেমেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজারের মন্দাভাবের কারণে এখন ভালো কোম্পানির শেয়ারেও আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে লোকসানে ভালো শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে অনেকে বাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বিনিয়োগকারীসহ বাজার অংশীজনেরা বাজার নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীরবতা এই হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরও আস্থা হারাতে বসেছেন বাজার অংশীজনেরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড এসইএক স ম ন পর পর য য় অবস থ বছর র আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর) সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে লেদেনের পরিমান বেড়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধন বাড়লেও সিএসইতে কমেছে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৭.২৬ পয়েন্ট বা ১.৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৬৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১১.৬৬ পয়েন্ট বা ০.৬২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯.৬৯ পয়েন্ট বা ০.৯৫ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৪ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ৫৫.০১ পয়েন্ট বা ৬.৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮৩.৮ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬২ কোটি ২ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৬০৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৩৩টির, দর কমেছে ৩৬টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির। তবে লেনদেন হয়নি ২২টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৪.৫৫ পয়েন্ট বা ০.৯০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৭১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১.০৭ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার৩০৭ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.৯১ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৫৫১ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ১.২৩ শতাংশ বেড়ে ৮৭৫ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.১৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৯১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ২৮৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২টির, দর কমেছে ৯৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিএসইর এজিএমে ৩.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে মেঘনা পেট্রোলিয়াম
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম বাড়ার শীর্ষে জিল বাংলা সুগার মিলস
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ইনফিউশন
  • বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে
  • ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ০.৬৮ শতাংশ
  • আবারও ভারতীয় রুপির দরপতন, ডলারের বিপরীতে রেকর্ড তলানিতে
  • পানছড়িতে তিন ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
  • শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান
  • পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২৭ পদের চাকরি পেতে আর কত অপেক্ষা