সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের দূরত্বের কারণ কী
Published: 27th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ইস্যু আপাতত নিরসন হয়েছে মনে হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাঁর যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে– এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে সবাই তাঁর দায়িত্ব পালনের পক্ষে মত দিলেও দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন দাবি বলছে অন্য কথা। বিএনপি ও তার মিত্ররা যেখানে স্পষ্ট করে বলছে– গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই, সেখানে জামায়াত ও এনসিপি চুপ থাকছে কিংবা সরকারের পক্ষে কথা বলছে।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে এক প্রকার বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছে সরকার ও অন্যরা। সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হঠাৎ বলে ফেললেন, সরকার আরাকানে মানবিক করিডোর দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে বললেন, বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও বামপন্থি দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কীভাবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়– সে প্রশ্ন তুলেছে।
করিডোর ইস্যুটি খুবই স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন গভীরভাবে জড়িত। সেনা সদরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সেনাপ্রধানও এই ইস্যুতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন– করিডোর দেওয়া যাবে না। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শুধু নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই নিতে পারে। ২০ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানসহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও নিশ্চয় বিষয়টি ওঠে। তা না হলে পরদিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে কেন বলবেন, করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি? তাঁকে যখন পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এ সংক্রান্ত বক্তব্য মনে করিয়ে দেওয়া হলো, তিনি বলে বসলেন– ওটা ছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার স্লিপ অব টাং বা মুখ ফসকে বলা কথা!
প্রতিবাদের ঝড় দেখে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়েও বলা হচ্ছে, সরকার এ বন্দর কাউকে দিচ্ছে না; শুধু বিদেশি বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করছে! কিন্তু তা কোন প্রক্রিয়ায়, কোন শর্তে– পরিষ্কার করা হচ্ছে না।
এ দুই ইস্যুর বাইরে সংস্কার, বিচার, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দূরত্বও কমছে না। সেনাপ্রধান নির্বাচন ইস্যুতে তাঁর পুরোনো অবস্থানই ধরে রেখেছেন। এবারও তিনি স্পষ্ট বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে হবে এবং নতুন বছরে নতুন নির্বাচিত সরকার দেখতে চান তিনি, যা বিএনপিসহ অনেকেই চায়।
ড.
সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট এখনও হয় না কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট কোথায়? দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের শ্বেতপত্র কোথায় চাপা পড়ে আছে? অথচ সংস্কারের নামেই একেকটা মাস পার হয়ে যাচ্ছে। সব সংস্কার কেন এখনই সেরে ফেলতে হবে?
প্রধান উপদেষ্টাই বলেছিলেন– অল্প সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল প্রয়োজনীয় জরুরি সংস্কার শেষে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাইতে গিয়ে এ কথাই বলেছে। তা মানতে সমস্যা কোথায়? কেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করছে না সরকার? এ সবই শতভাগ যৌক্তিক প্রশ্ন।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত ড. ইউনূস সরকারকে কেউই সরে যেতে বলেনি। এই সরকার ব্যর্থ হোক, কেউ চায় না। সরকারের ভেতরে-বাইরে কিছু মতলববাজ গোষ্ঠী সরকারকে ব্যর্থ করতে চায় তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। আশা করি, নোবেলজয়ী বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ইউনূস সবকিছু করে ফেলার দায়িত্ব না নিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন– এ লক্ষ্য সামনে রেখে তাঁর কর্মপরিকল্পনা স্থির করবেন। মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগ, বিরোধ-বিসংবাদে না জড়িয়ে ইতিহাস আরোপিত দায়িত্ব পালন করে জাতির কাছে অনন্য উচ্চতায় জায়গা করে নিতে সক্ষম হবেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল: নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শীর্ষ নেতা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত উপদ ষ ট র সরক র র কর ড র ইউন স ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ