সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ কিংবা খুঁচিয়ে ঘা তৈরি
Published: 27th, May 2025 GMT
সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ ‘অধিকতর সংশোধন’ ও ৩৭ক ধারা যুক্ত করে ২৫ মে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে– ‘যদি কোনো সরকারি কর্মচারী (ক) এমন কোনো কার্যে লিপ্ত হন, যাহা অনানুগত্যের শামিল বা যাহা অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অথবা (খ) অন্যান্য কর্মচারীদের সহিত সমবেতভাবে বা এককভাবে, ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত, নিজ কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অথবা (গ) অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তাহার কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকিতে বা বিরত থাকিতে বা তাহার কর্তব্য পালন না করিবার নিমিত্ত উস্কানি দেন বা প্ররোচিত করেন, অথবা (ঘ) যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যে কোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই অধ্যাদেশের আওতায় কাউকে বিচারাধীন করা হলে তদন্তের অবকাশ রাখা হয়নি। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে। অভিযুক্ত কর্মচারী জবাব দিলে এবং জবাবে শুনানি চাইলে শুনানি শেষে কেন তাকে দণ্ড দেওয়া হবে না মর্মে আবারও ৭ দিনের নোটিশ দেওয়া হবে। সেই নোটিশের জবাব দিক বা না দিক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দণ্ডাদেশ প্রদান বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গে কোনো সুপারিশ না করেই দণ্ড প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সরকারি চাকরিজীবীরাও নানাবিধ আইনের আওতায় চাকরি করে আসছেন। ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগ সৃজন ও পুনর্গঠন, একীকরণ, সংযুক্তকরণ এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীগণের নিয়োগ ও তাহাদের কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ এবং এতৎসংক্রান্ত বিদ্যমান বিধানাবলি সংহতকরণকল্পে’ প্রশাসনবিষয়ক ৬টি আইনকে রহিত করে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ প্রণীত হয়। আইনের ৩০ ধারায় ‘এই আইনের বিধানাবলির সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, সরকারি কর্মচারীর আচরণ এবং শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয় ও শর্তাদি এতৎসংশ্লিষ্ট বিধি এবং সরকার কর্তৃক সময় সময় জারিকৃত আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হইবে’ বর্ণিত আছে।
সরকার একই বছরে ১৯৮৫ সালের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালাটি রদ ও রহিত করে নতুনভাবে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ জারি করে। মূলত সরকারি কর্মচারীদের চাকরিতে শৃঙ্খলাজনিত অপরাধগুলো এই বিধিমালার অধীনে নিষ্পন্ন হয়। এর মধ্যে রয়েছে– ক.
গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে– নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ, চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ। বরখাস্ত হওয়া কর্মচারী পেনশন পান না এবং ভবিষ্যতে কোনো সরকারি চাকরি পাওয়ারও অযোগ্য হন।
চাকরি সংক্রান্ত আইনকানুনে ‘অসদাচরণ’ শব্দটির ব্যাপ্তি অনেক বড়। অসদাচরণের মধ্যে রয়েছে– অ. ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইনসংগত আদেশ অমান্য, আ. কর্তব্যে অবহেলা, ই. আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের আদেশ, পরিপত্র, নির্দেশ অবজ্ঞা, ঈ. কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসংগত, ভিত্তিহীন, হয়রানিমূলক, মিথ্যা অথবা তুচ্ছ অভিযোগ দাখিল, উ. অন্য কোনো আইনে বা বিধি-বিধানে যেসব কাজ অসদাচরণ হিসেবে গণ্য তেমন কাজ করা। অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত কর্মচারী লঘু বা গুরুদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে কাউকে গুরুদণ্ড দিতে হলে কারণ দর্শানোর নোটিশের সর্বোচ্চ ২০ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দাখিল, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি দিয়ে তদন্ত ও তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কেন গুরুদণ্ড দেওয়া হবে না মর্মে আবারও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিধান আছে। এর পরও যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে যে গুরুদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন, তাহলে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শের জন্য পাঠানো হয়। কমিশনের পরামর্শ পেলে গুরুদণ্ড আরোপ করা হয়ে থাকে।
বিগত তিন জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ২২ জন জেলা প্রশাসককে মাস তিনেক আগে চাকরিচ্যুতির সময় জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘কোনো একজন ডিসিও বলেন নাই– আমি প্রতিবাদ করব অথবা আমি রিটার্নিং অফিসার থাকব না অথবা আমি রিজাইন করলাম অথবা আমি কাজ করব না।’ মুশকিল হলো, এসব কথা বলা আবার সরকারি কর্মচারীর জন্য অসদাচরণের শামিল; সর্বোচ্চ শাস্তি বরখাস্ত। সাম্প্রতিক অধ্যাদেশটির পরিহাস হচ্ছে, সরকারের আদেশ চ্যালেঞ্জ না করাকে যে জনপ্রশাসন সচিব ‘অপরাধ’ গণ্য করছেন, তিনিই আবার সরকারি কর্মচারীর অনানুগত্যকে ‘অপরাধ’ হিসেবে অধ্যাদেশ জারি করছেন। তাহলে সরকারি কর্মচারীরা যাবেন কোথায়!
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, অধ্যাদেশটি গত বছর ৫ আগস্টের আগে জারি হলে অনায়াসে তা ‘ফ্যাসিবাদী অধ্যাদেশ’ বলে চালানো যেত। আইন বা বিধিমালায় শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া থাকে। এই অধ্যাদেশে ‘অনানুগত্য’ শব্দটির সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। আনুগত্য কার প্রতি প্রদর্শন করতে হবে? রাষ্ট্রের প্রতি, সরকারের প্রতি? নাকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রতি?
রাষ্ট্রের প্রতি অনানুগত্য তো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলেই গণ্য; এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান প্রচলিত আইনেই আছে। তার জন্য নতুন আইন অপপ্রয়োগের সন্দেহ তৈরি করে। আর যদি সরকারের প্রতিই অনানুগত্যের বিষয় হয়, তাহলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের মাত্র তিন মাস আগে দেওয়া বক্তব্য এই অধ্যাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
প্রথাগতভাবেই সরকারি কর্মচারীরা রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি অনুগত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় সরকারি কর্মচারীরা ১৯৯০ ও ১৯৯৬ সালে দু’বার সরকারের বিরুদ্ধে অনানুগত্য পোষণ করেন এবং দু’বারই সরকারের পতন ঘটে। তারপরও রাজনৈতিক সরকারগুলো কর্মচারীদের আনুগত্যের প্রশ্নে বিধান করেনি। সেখানে অরাজনৈতিক সরকারের সময়ে এই প্রশ্নে অধ্যাদেশ ভাবনার দাবি রাখে। তবে কি আইনটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রতি অনানুগত্য প্রশ্নে? সে ক্ষেত্রে অসদাচরণই তো মারণঘাতী অস্ত্র হিসেবে এযাবৎকাল ব্যবহৃত হয়ে এসেছে!
বস্তুত নতুন অধ্যাদেশের প্রয়োজনই ছিল না। এটি খুঁচিয়ে ঘা তৈরির নামান্তর। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কেউ হয়তো সরকার ও সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে। এই আইন বহাল থাকলে সরকারি কর্মচারীরা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী বা দলের প্রতি অনুগত বলে গণ্য হবেন এবং সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকারের অনুগত ‘ট্যাগ’ খেয়ে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন। সরকারি কর্মচারী পক্ষপাতহীনভাবে রাষ্ট্রের চাকরি করবেন– এটাই সব নাগরিকের কাম্য। তা বাস্তবানুগ করতে বিতর্কিত অধ্যাদেশটি অবিলম্বে বাতিল করাই শ্রেয়।
আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী:
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ সরক র র প কর মকর ত অসদ চরণ র জন য র কর ম অপর ধ তদন ত আইন র
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া