ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছে।

শাহরিয়ার হত্যার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী বলেন, ডিবির একাধিক দল গত কয়েক দিনে কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন মেহেদী হাসান, রাব্বি ওরফে ‘কবুতর’ রাব্বি, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন। তাঁদের মধ্যে দুজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

রহস্য উদ্‌ঘাটনের যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মামলা তো ডিটেক্ট হয়ে গেছে।’ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা হত্যার ‘মোটিভসহ’ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, সেগুলোর উত্তর দেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।

ঘটনা সম্পর্কে ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তাঁর দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। মেহেদীর গ্রুপের একজন রাব্বি, যাঁর হাতে একটা ট্রেজারগান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) ছিল। ট্রেজারগানটা শো করলে সেটা দেখে সাম্য সেই ট্রেজারগানটা কী, সেটা জানতে চান। জানতে চাওয়ার একটা পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একটা পর্যায়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীর অন্য যারা আছে, তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের ভেতরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির একটা পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ডটা ঘটে। সাম্যকে (শাহরিয়ার) ছুরিকাঘাত করেন রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি।’

হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলমান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের তদন্ত এ পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটিও আমরা নিবিড়ভাবে দেখছি।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে কথা হয় শাহরিয়ার আলমের বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগরের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপন নামের এক আসামির জবানবন্দি দেখেছি। জবানবন্দিতে রিপন বলেছে যে সাম্যকে হত্যার পর মূল আসামিকে সে মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দিরের গেটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আরেকটি গ্রুপ তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তারা সবাই কক্সবাজারে পালিয়ে যায়। জবানবন্দি সত্য হয়ে থাকলে আমরা মনে করছি, শাররিয়ারকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই হাতাহাতি বা তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়।’

ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল আসামি মেহেদীকে রিমান্ডে আনার পর হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভটা’ কী ছিল, তাঁর কাছ থেকে সেটি বের করার চেষ্টা করা হবে। এর পাশাপাশি নেপথ্যে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটার বিষয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে। যেখানে যে ধরনের কানেকশন (সংযোগ) আছে, সব কানেকশন খুঁজে দেখা হবে। তারপর বলা যাবে নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কি না।

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার মেহেদীর দেওয়া তথ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ‘সুইচ গিয়ার’ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম।

১৩ মে দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার আলম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। এই হত্যার ঘটনায় এর আগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নতুন ৮ জনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদকের তিন গ্রুপ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্ত করতে গিয়ে যেটা দেখেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ওদের কথিত ভাষায় যেটা গ্রিপ বলে। তিনটা ভাগে ভাগ করা। একটা গ্রিপ হলো তিন নেতার মাজারের এখানে, আরেকটা মাঝখানে, আরেকটা ছবির হাটে। তিনটা গ্রিপের তিনটা গ্রুপ সেখানে দায়িত্বরত আছে। তারা মাদক ব্যবসা করে, এটা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। একটা গ্রিপের দায়িত্বে মেহেদী, গ্রেপ্তার আটজনই মেহেদীর গ্রিপের। আরও দুই গ্রুপ, তারা তাদের কার্যক্রম করে আমরা জানি।’

এ সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যেখানে মাদক ব্যবসা বা মাদকের ইউজার, সেখানে অস্ত্র থাকে। আপনি আমেরিকার কথা বলেন, কলম্বিয়ার কথা বলেন, সারা পৃথিবীতে মাদকের ব্যবসা আছে। মাদকসেবীও আছে, মাদক ব্যবসায়ীও আছে। যেখানে মাদক, ওইখানে অস্ত্র আছে।’

ঢাকা শহরে সম্প্রতি সংঘটিত কয়েকটি খুন ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আমরা ডিটেক্ট করি। অধিকাংশ ঘটনায় আমাদের ডিটেকশন আছে। যার ফলে ক্রাইম সিচুয়েশন, অপরাধের যে চিত্র, সেটা প্রমাণ করে যে অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।’ বাড্ডায় বিএনপি নেতা কামরুল আহসানকে খুনের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে দয়া করে সময় দেন। একটা ঘটনা ঘটলেই আমরা বলে ফেলাব, এ রকম কোনো জাদুমন্ত্র আমাদের নাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড ন পথ য ব শ বব র হত য আম দ র হত য র ঘটন য় তদন ত র ঘটন ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

শিরোপাজয়ী লিভারপুলের সমর্থকদের ভিড়ে উঠে পড়ল গাড়ি, হাসপাতালে ২৭ জন

ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব লিভারপুলের সমর্থকদের ভিড়ে একটি গাড়ি উঠে যাওয়ার ঘটনায় আহত ২৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তবে পুলিশ বলেছে, তারা ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্ট’ মনে করছে না।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এবারের শিরোপা জিতে নিয়েছে লিভারপুল। এই জয় উদ্‌যাপন উপলক্ষে গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লিভারপুল শহরে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। এই শোভাযাত্রায় ক্লাবটির হাজারো সমর্থক অংশ নেন। এই সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে একটি গাড়ি উঠে পড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় লিভারপুল থেকে ৫৩ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ পুরুষকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, ভিড়ে উঠে পড়া গাড়িটির চালক ছিলেন তিনি।

ঘটনাস্থলে ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। লিভারপুল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, ২৭ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে চারটি শিশু আছে। একটি শিশু ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর।

ঘটনার সময় ভিড়ে থাকা চারজন গাড়িটির নিচে চাপা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে গাড়িটি ঢুকে পড়লে লোকজন ছিটকে পড়ছেন।

ঘটনার বিষয়ে সাময়িক ডেপুটি চিফ কনস্টেবল জেনি সিমস সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা মনে করছেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে বলে তাঁরা মনে করছেন না। ঘটনাটিকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, লিভারপুল দলের খেলোয়াড়রা একটি ছাদখোলা বাসে প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি নিয়ে শহরের কেন্দ্র অতিক্রম করার ১০ মিনিট পর ঘটনাটি ঘটে।

লিভারপুলের সিটি কাউন্সিলের নেতা লিয়াম রবিনসন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেন, একটি আনন্দমুখর দিনের ওপর অন্ধকারের ছায়া ফেলেছে এই ঘটনা।

ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এই ঘটনার খোঁজখবর রাখছেন জানিয়ে তিনি আহতসহ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন।

করোনা মহামারির সময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল লিভারপুল। তবে তখন উদ্‌যাপনে বিধিনিষেধ ছিল। তাই এবারের শিরোপা জয় নিয়ে ক্লাবটির ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোরআন কেন আরবি ভাষায়
  • চেয়ারম্যানদের বাড়িতে ইউপি কার্যালয়
  • জুলাইযোদ্ধারা বিষপান করেছেন কি না, তদন্ত করছে সরকার
  • নেত্রকোনায় স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
  • যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি পুরুষ একাকিত্বে ভুগছেন: জরিপ
  • আল্লাহ কিছু নেওয়ার আগে কিছু দিয়েও দেন: পরীমণি
  • ৩১ বার এভারেস্টের চূড়ায়
  • মঞ্চে পড়ে গিয়েও প্রশংসা কুড়াচ্ছেন শাকিরা
  • শিরোপাজয়ী লিভারপুলের সমর্থকদের ভিড়ে উঠে পড়ল গাড়ি, হাসপাতালে ২৭ জন