ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছে।

শাহরিয়ার হত্যার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী বলেন, ডিবির একাধিক দল গত কয়েক দিনে কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন মেহেদী হাসান, রাব্বি ওরফে ‘কবুতর’ রাব্বি, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন। তাঁদের মধ্যে দুজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

রহস্য উদ্‌ঘাটনের যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মামলা তো ডিটেক্ট হয়ে গেছে।’ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা হত্যার ‘মোটিভসহ’ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, সেগুলোর উত্তর দেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।

ঘটনা সম্পর্কে ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তাঁর দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। মেহেদীর গ্রুপের একজন রাব্বি, যাঁর হাতে একটা ট্রেজারগান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) ছিল। ট্রেজারগানটা শো করলে সেটা দেখে সাম্য সেই ট্রেজারগানটা কী, সেটা জানতে চান। জানতে চাওয়ার একটা পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একটা পর্যায়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীর অন্য যারা আছে, তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের ভেতরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির একটা পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ডটা ঘটে। সাম্যকে (শাহরিয়ার) ছুরিকাঘাত করেন রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি।’

হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলমান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের তদন্ত এ পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটিও আমরা নিবিড়ভাবে দেখছি।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে কথা হয় শাহরিয়ার আলমের বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগরের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপন নামের এক আসামির জবানবন্দি দেখেছি। জবানবন্দিতে রিপন বলেছে যে সাম্যকে হত্যার পর মূল আসামিকে সে মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দিরের গেটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আরেকটি গ্রুপ তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তারা সবাই কক্সবাজারে পালিয়ে যায়। জবানবন্দি সত্য হয়ে থাকলে আমরা মনে করছি, শাররিয়ারকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই হাতাহাতি বা তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়।’

ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল আসামি মেহেদীকে রিমান্ডে আনার পর হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভটা’ কী ছিল, তাঁর কাছ থেকে সেটি বের করার চেষ্টা করা হবে। এর পাশাপাশি নেপথ্যে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটার বিষয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে। যেখানে যে ধরনের কানেকশন (সংযোগ) আছে, সব কানেকশন খুঁজে দেখা হবে। তারপর বলা যাবে নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কি না।

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার মেহেদীর দেওয়া তথ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ‘সুইচ গিয়ার’ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম।

১৩ মে দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার আলম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। এই হত্যার ঘটনায় এর আগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নতুন ৮ জনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদকের তিন গ্রুপ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্ত করতে গিয়ে যেটা দেখেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ওদের কথিত ভাষায় যেটা গ্রিপ বলে। তিনটা ভাগে ভাগ করা। একটা গ্রিপ হলো তিন নেতার মাজারের এখানে, আরেকটা মাঝখানে, আরেকটা ছবির হাটে। তিনটা গ্রিপের তিনটা গ্রুপ সেখানে দায়িত্বরত আছে। তারা মাদক ব্যবসা করে, এটা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। একটা গ্রিপের দায়িত্বে মেহেদী, গ্রেপ্তার আটজনই মেহেদীর গ্রিপের। আরও দুই গ্রুপ, তারা তাদের কার্যক্রম করে আমরা জানি।’

এ সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যেখানে মাদক ব্যবসা বা মাদকের ইউজার, সেখানে অস্ত্র থাকে। আপনি আমেরিকার কথা বলেন, কলম্বিয়ার কথা বলেন, সারা পৃথিবীতে মাদকের ব্যবসা আছে। মাদকসেবীও আছে, মাদক ব্যবসায়ীও আছে। যেখানে মাদক, ওইখানে অস্ত্র আছে।’

ঢাকা শহরে সম্প্রতি সংঘটিত কয়েকটি খুন ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আমরা ডিটেক্ট করি। অধিকাংশ ঘটনায় আমাদের ডিটেকশন আছে। যার ফলে ক্রাইম সিচুয়েশন, অপরাধের যে চিত্র, সেটা প্রমাণ করে যে অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।’ বাড্ডায় বিএনপি নেতা কামরুল আহসানকে খুনের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে দয়া করে সময় দেন। একটা ঘটনা ঘটলেই আমরা বলে ফেলাব, এ রকম কোনো জাদুমন্ত্র আমাদের নাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড ন পথ য ব শ বব র হত য আম দ র হত য র ঘটন য় তদন ত র ঘটন ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে দুই প্রস্তাব

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে একমত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ সব দল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ পদ্ধতিতে মতভিন্নতা রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন প্রধান উপদেষ্টা।

বিএনপি এখনও প্রস্তাবের বিষয়ে অবস্থান জানায়নি। তবে অতীত বিতর্কের কারণে তত্ত্বাবধায়ক থেকে বিচার বিভাগকে দূরে রাখতে আপত্তি নেই দলটির। জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আগের কাঠামো পুনর্বহাল চাইলেও এখন তারা নতুন প্রস্তাব দেবে। এনসিপি সংসদের নিম্নকক্ষের সর্বদলীয় কমিটি এবং উচ্চকক্ষের ভোটের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করতে চায়। চলতি সপ্তাহের সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।

২০১০ সালে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেও পরবর্তী দুই নির্বাচন এ ব্যবস্থায় হওয়ার পরামর্শ ছিল রায়ের পর্যবেক্ষণে। বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক থেকে দূরে রাখার নির্দেশনা ছিল আদালতের। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়।

দলীয় সরকারের অধীনে পরের তিন নির্বাচন ছিল বিতর্কিত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর, ডিসেম্বরে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো আখ্যা দেয়। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনায় বিএনপি ও জামায়াতের আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

ফিরছে তত্ত্বাবধায়ক, দুই ফর্মুলা
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছিল– রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সংসদের উভয় কক্ষের স্পিকার ও বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সরকারি ও প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত অন্য দলের একজন সদস্যকে নিয়ে গঠিত ৯ সদস্যের জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নিয়োগ দেবে প্রধান উপদেষ্টা।

তবে বিএনপি এনসিসি গঠনে সায় দেয়নি। ফলে, গত বৃহস্পতিবারের সংলাপে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ অবসানের ১৫ দিন পূর্বে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

সংসদের মেয়াদ অবসানের ৩০ দিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, নিম্নকক্ষের বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী মনোনীত উচ্চকক্ষের একজন সদস্য,  বিরোধীদলীয় নেতা মনোনীত উচ্চকক্ষের একজন সদস্য, প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত অন্যান্য বিরোধী দলের একজন উচ্চকক্ষের সদস্যকে নিয়ে সাত সদস্যের ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে।

কমিটি গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সরকারি দল কিংবা জোট পাঁচজন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। প্রধান বিরোধী দল কিংবা জোটও পাঁচটি নাম প্রস্তাব করবে। সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য দল কিংবা জোট দু’জন করে মোট চারজনের নাম প্রস্তাব করবে। 

বাছাই কমিটি প্রস্তাবিত ১৪ ব্যক্তির নাম নিয়ে শুনানি হবে। যাতে উচ্চকক্ষের সদস্যরা অংশ নেবেন। শুনানি সম্পন্নের এক ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল কিংবা জোটের প্রস্তাবিত পাঁচজনের তালিকা থেকে প্রধান বিরোধী দল কিংবা জোট একজনের নাম বাছাই করবে। বিরোধী দল বা জোটের তালিকা থেকে একজনের নাম বাছাই করবে সরকারি দল বা জোট। অন্যান্য দল বা জোটের প্রস্তাবিত নাম থেকে সরকারি দল বা জোট একজনের এবং প্রধান বিরোধী দল বা জোট যে কোনো একজনের নাম বাছাই করবে। এই পদ্ধতিতে কোনো দল বা জোট অভিন্ন ব্যক্তির নামও প্রস্তাব করতে পারবেন।

এই পদ্ধতিতে যদি অভিন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবিত হয়, তবে তিনিই হবেন প্রধান উপদেষ্টা। আর যদি অভিন্ন ব্যক্তির নাম না আসে, তবে উচ্চকক্ষের সদস্যরা ‘র‍্যাঙ্ক চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক পছন্দ পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একজনকে  প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত করবেন। যাকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি। মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ১৫ দিনের মধ্যে বিলুপ্ত সংসদের উভয় কক্ষ একই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত করবে। ৯০ থেকে ১২০ দিন মেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হবেন, সর্বোচ্চ ১৫ জন।

দ্বিতীয় ফর্মুলায় বলা হয়েছে, সংসদ বিলুপ্তির ৯০ দিন পূর্বে উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান অথবা স্পিকার, ডেপুটি চেয়ারম্যান অথবা ডেপুটি স্পিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, সংখ্যালঘু দলের নেতা, উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য দলের একজন প্রতিনিধি, নিম্নকক্ষের স্পিকার, সংসদ নেতা এবং নিম্নকক্ষের বিরোধী দলের নেতারা সমন্বয়ে একটি ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন’বিষয়ক সর্বদলীয়  কমিটি গঠন করা হবে।

কমিটির কাছে দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার নাম প্রস্তাব করবে। নাম নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার পর কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য একজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত না হলে, উচ্চকক্ষের সদস্যরা ক্রমভিত্তিক পছন্দ পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবেন।

ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সমকালকে বলেছেন, র‌্যাঙ্ক চয়েজ পদ্ধতিতে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নাম থেকে একজন না একজন নির্বাচিত হবেনই। অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে না। তবে দুটি ফর্মুলাই কমিশনের প্রস্তাব মাত্র। রাজনৈতিক দলগুলোও নিজ নিজ ফর্মুলা দেবে। এর পর আলোচনায় ঐকমত্যে একটি পদ্ধতি চূড়ান্ত হবে। 

বিএনপি নিজের কার্ড দেখাচ্ছে না
১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়কে একমত হলেও গঠন পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের মতামত দিচ্ছে না। বরং অন্য দলগুলোর প্রস্তাব দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। ত্রয়োদশ সংশোধনীর রিভিউ রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, কমিশন যে দুটি ফর্মুলা দিয়েছে, তাতে উচ্চকক্ষের ভোটে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হবেন। তাই আগে ঠিক করতে হবে, কীভাবে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।

জামায়াত, এনসিপিসহ ২২টি দল চায় প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন করা হবে। বিএনপি চায়, সংসদে দলগুলো প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। এনিয়ে চার দিন সংলাপ হলেও ঐকমত্য হয়নি।

অতীতে প্রধান বিচারপতিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দেওয়ায় বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা দেখা গেছে– এ যুক্তিতে এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকারসহ কয়েকটি দল বিচার বিভাগকে দূরে রাখার পক্ষপাতী। আগের নিয়মে কাউকে না পাওয়া গেলে রাষ্ট্রপতি হতেন প্রধান উপদেষ্টা। ২০০৬ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতায় জামায়াত চায়, কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ রাখা যাবে না।

সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, আপিল বিভাগের রিভিউ শুনানিতে সংবিধানের ৫৮(ক), (খ) ও (গ) বহাল হবে বলে আশা করছেন। এতে প্রধান বিচারপতির প্রধান উপদেষ্টার হওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে, বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়কের বাইরে রাখার প্রস্তাবটি ভালো। যদি সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের একাধিক বিকল্প পাওয়া যায়, বিএনপি গ্রহণ করবে। সব দল বিকল্প প্রস্তাব দেবে, বিএনপিও দেবে। আগে তিন-চারটি বিকল্প রেখে, এর পর বিচার বিভাগকে যুক্ত করার বিধান রাখা যেতে পারে। সবশেষ বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে রাখা যায়। তবে তা রাখার জন্য রাখা। 

অন্য দল কী বলছে
নিজেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার দাবি করে জামায়াত আগের পদ্ধতিই বহাল রাখার পক্ষে ছিল। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেছেন, জামায়াত চলতি সপ্তাহেই দলীয় প্রস্তাব দেবে। তবে রাষ্ট্রপতিকে কোনোভাবেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। বিচার বিভাগের পরিবর্তে গ্রহণযোগ্য বিকল্প পাওয়া গেলে জামায়াতের আলোচনায় আপত্তি নেই। 

এনসিপি ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদলের রূপরেখা দিয়েছে জানিয়ে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে একটি ১১ সদস্যের সংসদীয় সর্বদলীয় কমিটি গঠন হবে। কমিটি সরকারি দল, বিরোধী দল ও অন্য দলের প্রস্তাবিত তিনজন করে মোট ৯ জনের নাম থেকে একজনকে আট-তিন ভোটে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবে। এই পদ্ধতি ব্যর্থ হলে উচ্চকক্ষের সদস্যদের ‘র‍্যাঙ্ক চয়েজ’ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা হবে।

আখতার হোসেন বলেছেন, অতীতে প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করায় বিচার বিভাগ কলুষিত হয়েছিল। এর পুনরাবৃত্তি রোধে সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একের পর এক অমানবিকতা ও হিংস্রতা আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে: আনিসুল ইসলাম
  • পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী হত্যার দ্রুত বিচারের দাবিতে জবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ
  • চট্টগ্রামে করোনায় একজনের মৃত্যু
  • ‘৫ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে’ পল্লবীতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-গুলি,আহত এক
  • সুপারম্যান ট্রাম্প
  • ব্যবসায়ী হত্যার শাস্তি দাবি জবি ছাত্রদলের
  • কীভাবে একজন মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, পুরান ঢাকায় হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বাঁধন
  • পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের মারধরে মার্কিন নাগরিক নিহত, তদন্তের দাবি
  • জামা-জুতাও নিয়ে গেল ছিনতাইকারীরা, ভিডিও ভাইরাল
  • প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে দুই প্রস্তাব