শাড়ি না হলে বাঙালি নারীদের উৎসব যেন পূর্ণতা পায় না। সেই উৎসব যদি হয় ঈদ তাহলে তো কথাই নেই। কাজকর্মের চাপে কোরবানি ঈদের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন হলেও নতুন পোশাকের রয়েছে আলাদা আবেদন। বিশেষ করে শাড়ির সাজে নারীর সৌন্দর্য কিংবা ব্যক্তিত্বে আলাদা মাত্রা যোগ করে।
শাড়ি, যা শুধু একখণ্ড কাপড় নয়। এটি এক আত্মিক পরিচয়, যা নারীকে তাঁর মাটি, শিকড় আর নিজস্বতাকে আলিঙ্গন করতে শেখায়। কোরবানির ঈদের মতো একটি শান্ত, গভীর ভাবনার দিনে শাড়ির ফ্যাশন হয়ে ওঠে আরও বেশি অর্থবহ । এটি শুধু সৌন্দর্যের নয়, রুচির, পরিপক্বতা ও দায়িত্বশীলতারও বহিঃপ্রকাশ।
ঈদের ব্যস্ততায় আরামের ছোঁয়া
কোরবানির ঈদের সকালের চিত্রটা বেশ ব্যতিক্রম। একদিকে ধর্মীয় আবহ, অন্যদিকে মাংস কাটা, রান্নাবান্না, অতিথি আপ্যায়ন– সব মিলিয়ে নারীর ব্যস্ততা যেন চারদিকেই ছড়িয়ে থাকে। তবুও সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে পছন্দের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে, হালকা সাজে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে যেন নিজেই মুগ্ধ হয়। ফ্যাশন মানে হতে হয় আরামের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে এবারের ঈদের শাড়ির ফ্যাশনে দেখা যাচ্ছে নরম কাপড়ের জয়জয়কার। সুতি, খাদি, মসলিন, মালাই কটন কিংবা মিক্সড হ্যান্ডলুম কাপড় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কারণ এগুলো শুধু আরামদায়কই নয়, রুচিশীলও।
রঙে এসেছে সংযম, নকশায় কথা বলে মাটির গন্ধ
কোরবানির ঈদের শাড়িতে এবার রঙের প্যালেট অনেকটাই প্রাকৃতিক ও সংযত। চোখ ধাঁধানো ঝলক নয়, বরং শীতল অথচ গভীর রঙের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। সবুজ, বাদামি, সাদা, গাঢ় ধূসর, গাঢ় নীল কিংবা বিভিন্ন রঙের মিশ্রণের শেডগুলো ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনারদের হাতের ছোঁয়ায় শাড়ির জমিনে উঠে এসেছে। শাড়ির পাড় ও আঁচলে এখন দেখা যাচ্ছে হাতে আঁকা মিনিমাল মোটিফ পাখি, গাছ, নদী বা নকশা করা গম্বুজের ইঙ্গিত।
শাড়ির ধরনে এসেছে সময়ের বাস্তবতা
অনেকেই এখন ঈদের দিনের কাজের জন্য পছন্দ করছেন ইজি-ড্রেপ শাড়ি, পিন-ফ্রি স্টাইল কিংবা কুর্তির সঙ্গে ম্যাচিং করা সেমি-শাড়ি লুক। আবার অনেকে বেছে নিচ্ছেন বেল্ট দিয়ে বাঁধা স্টাইল, যা একদিকে স্টাইলিশ, অন্যদিকে কাজে সুবিধাজনক।
কোরবানির ঈদের বাস্তবতা মাথায় রেখেই এবার ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো শাড়িকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেছে– ‘জমকালো নয়, বরং ব্যবহারযোগ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ ফ্যাশন হোক নারীর মুগ্ধতার বহিঃপ্রকাশ ।’
ঐতিহ্যে ফিরে যাওয়ার টান
শহরের ব্যস্ত নারী, যিনি হয়তো সারাবছর জিন্স আর টপে অভ্যস্ত, তিনিও ঈদের দিনটিতে নিজের শিকড়ে একটু ফিরে যেতে চান। সেই ফেরার সবচেয়ে সহজ পথ একটা খাঁটি বাংলার শাড়ি। তাই দেখা যাচ্ছে, মায়ের পুরোনো কাতানকে একটু পাল্টে পরার প্রবণতা, কিংবা দাদির সুতি শাড়িকে নতুনভাবে সাজিয়ে নেওয়া। এই ফিরে যাওয়া নিছক ফ্যাশন নয়, বরং এক আত্মিক যাত্রা।
‘সারা লাইফস্টাইল’-এর ডিজাইনার মেহেরুবা আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘এবার কটন, হ্যান্ড লোম, গর্জিয়াস জরি ওয়ার্ক কটন, সিরাজগঞ্জ কটন, হাফ সিল্ক, জামদানি এবং ফ্যান্সি স্টাইলের নরম শাড়ি বেশ চলছে।’ তিনি জানান, তাদের শাড়িগুলোয় কটন ফেব্রিকের ওপর স্কিন প্রিন্ট, কারচুপির কাজ করা হয়েছে।
অনলাইন পেজ ‘ভার্সাটাইল লেডিস’-এর স্বত্বাধিকারী প্রমি চাকমা জানান, ‘এবারের ঈদের সময়টায় গরম একটু বেশি হওয়ায় নারীরা আরামদায়ক শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। শাড়ির ক্ষেত্রে কটন গাদোয়াল, মুলমুল কটন আর কালামকারির চাহিদা ক্রেতাদের কাছে খুব বেশি। এর সঙ্গে আমরা মহেশ্বরী সিল্ক ও মোডাল সিল্ক আজরাখে বেশ সাড়া পাচ্ছি ।’
তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা খুব বেশি কালারফুলের চেয়ে হাওয়াই মিঠাই মিষ্টি শুভ্র রংগুলো বেশি চাচ্ছে। এ ছাড়া ন্যাচারাল ডাই কালার কাপড় তুলনামূলক নরম হওয়ায় সেগুলোর চাহিদাও একটু বেশি। দামের ক্ষেত্রে আমাদের মনে হয়েছে, হাইরেঞ্জের থেকে মিডরেঞ্জের ডিমান্ড বরাবরের মতোই বেশি।’
বগুড়ার ‘প্রিয় শাড়ি হাউস’-এর বিক্রয়কর্মী আবু সাঈদ জানান, সাধারণত কাতান শাড়িটা বেশি চলছে এবারের ঈদে। সঙ্গে জামদানিরও চাহিদা আছে। অনেকেই জর্জেট শাড়ির খোঁজ করছেন। কিন্তু রোজার ঈদে যেমন শাড়ি কেনার ধুম পড়ে, এ ঈদে কিছুটা কম। তবে শিফন শাড়ির আলাদা একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ ঈদেও সেই চাহিদা রয়েছে।
কোথায় পাবেন
যারা ফিউশনধর্মী শাড়ি পরতে পছন্দ করেন, তারা যেতে পারেন আড়ং, দেশীদশসহ দেশীয় ফ্যাশন হাউসের বিভিন্ন শোরুমে। অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন পছন্দের শাড়ি। যাদের বাজেট কিছুটা কম, তারা চলে যেতে পারেন ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেটে। একটু যাচাই-বাছাই করে স্বল্প দামের মধ্যে পছন্দের ঈদের শাড়ি কিনতে পারেন আশপাশের শপিং মল থেকেও। v
মডেল: আয়েশা লাবণ্য; পোশাক: সারা
মেকওভার: পারসোনা; ছবি: কাব্য
দরদাম
নানা রঙ, ডিজাইন ও কাপড়ে তৈরি শাড়িগুলোর দাম ভিন্ন হয় কাপড়, কারুকাজ, ব্র্যান্ড এবং জায়গার উপর নির্ভর করে। গরম আবহাওয়ার জন্য উপযোগী কটন শাড়ি ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। সিল্ক শাড়ির দাম ৪ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। জামদানি শাড়ির দাম ৫ হাজ়ার থেকে শুরু করে ৫০ হাজ়ার টাকা পর্যন্ত হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে এর মূল্য আরও বেশি হতে পারে
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরাক, ইরান থেকে ফিলিস্তিন, কানে চমক মধ্যপ্রাচ্যের সিনেমার
স্বর্ণপাম
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’, ইরান
বছরের পর বছর ধরে ইরানে গোপনে সিনেমা বানিয়েছেন জাফর পানাহি। ‘পাচার’ করেছেন বিদেশি উৎসবে। নিজেই এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হলেন নির্মাতা। রাজনৈতিক থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ দিয়ে ২২ বছর পর কান উৎসবে ফিরলেন ইরানি নির্মাতা। দীর্ঘ বিরতির পর তাঁর প্রত্যাবর্তন হয়ে রইল স্মরণীয়। ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ জিতল উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার।