আন্দোলনে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ লাখ টন পণ্যের জট
Published: 27th, May 2025 GMT
কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১০ দিনের আন্দোলনে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ লাখ টন পণ্যের জট লেগেছে। ঈদ সামনে রেখে আনা ভোগ্যপণ্যও এর মধ্যে রয়েছে। দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে আসা ৬৭টি বড় জাহাজ পণ্য নিয়ে সাগরে ভাসছে। এর মধ্যে কার্গো পণ্যবোঝাই ৩৭টি, খাদ্যসামগ্রী বোঝাই ৭টি ও কনটেইনার বোঝাই জাহাজ আছে ২৫টি। এর বাইরে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে আছে ৪৫ হাজার ৩৭৭ কনটেইনার। এসব কনটেইনারের প্রায় ৪০ হাজারই আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবোঝাই। ২০ ফুট এককের একটি কনটেইনারে গড়ে ১৩ টন পণ্য লোড করা যায়।
এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৪ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান। গত রোববার রাতে এই কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেন তারা। তবে কয়েকদিনের আন্দোলনের প্রভাব পড়ে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে। খালাস কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক থাকলেও জট খুলতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সামনে টানা ১০ দিন ঈদের ছুটি। বিশেষ ব্যবস্থায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না সার্বিক কাজে। কারণ ঈদের বন্ধে মহাসড়কে কাভার্ডভ্যানের মতো বড় যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তাই বন্দরে জট লাগা পণ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘ঈদের আগে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মসূচি আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ৯ দিন আগে আমার সাত কনটেইনার পণ্য বন্দরে আসে। এগুলোতে আছে কারখানার কাঁচামাল। পাঁচটি কনটেইানর খালাস করতে সাত দিন লেগেছে আমার। এখনও দুটি কনটেইনার পড়ে আছে। সময়মতো কাঁচামাল খালাস করতে না পারায় প্রভাব পড়বে উৎপাদনেও।’
জে কে শার্টের স্বত্বাধিকারী কায়কোবাদ বলেন, ‘১২ দিন আগে আমার ছয় কনটেইনার ফেব্রিকস আসে। আন্দোলন স্থগিত হলেও জটের মধ্যে পড়ে এখনও সেই পণ্য খালাস করতে পারিনি। অথচ প্রতিদিন ৯৮ ডলার ডেমারেজ দিতে হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। ঈদের ছুটি শুরুর আগে যদি এসব পণ্য কারখানায় আনতে না পারি, তাহলে বিপুল ক্ষতি হবে।’
একের পর এক কর্মসূচি ও আন্দোলনের কারণে মারাত্মক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। প্রতিদিন অন্তত ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা এই প্রতিষ্ঠানে ১০ দিন ধরে ছিল অচলাবস্থা। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ছিল স্থবিরতা। কাস্টমস কর্মকর্তারা অফিসে থাকলেও করেননি শুল্কায়নের কাজ। ৫টার পর সীমিত পরিসরে শুল্কায়নের কিছু কাজ করেছেন তারা। প্রতিদিন গড়ে চার হাজার কনটেইনার খালাস করা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গত ১০ দিনে খালাস হয়নি প্রত্যাশার অর্ধেক পণ্যও।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে জমেছিল ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক (টিইইউস) ৪৫ হাজার ৩৭৭ কনটেইনার। এর মধ্যে একই আমদানিকারকের পণ্য ভর্তি এফসিএল (ফুল কনটেইনার লোডেড) কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৮২১। আর একাধিক আমদানিকারকের পণ্যবোঝাই এলসিএল (লুজ কনটেইনার লোডেড) কনটেইনার ছিল ৮৩৬ টিইইউস। খালি কনটেইনার আছে ৫ হাজার ৭০৮ টিইইউস। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্দরে পণ্যবোঝাই রপ্তানি কনটেইনার ছিল ১ হাজার ৪২৬ টিইইউস। পানিতে থাকা ২৪টি কনটেইনার পণ্যবোঝাই জাহাজের মধ্যে জেটিতে নোঙর করা অবস্থায় ছিল ১২টি। আর বহির্নোঙরে ছিল ১২টি। বহির্নোঙরে থাকা জাহাজে পণ্য ভর্তি কনটেইনার আছে ১৫ হাজার ৭০৩ টিইইউস। কনটেইনার জাহাজের বাইরে বন্দরে জেনারেল কার্গো পণ্যবোঝাই জাহাজ আছে ৩৭টি। খাদ্য পণ্যবোঝাই জাহাজ আছে ৭টি। এ ছাড়া সারবোঝাই দুটি, সিমেন্ট ক্লিংকার বোঝাই ২৫টি, চিনিবোঝাই একটি ও ওয়েল ট্যাঙ্কার আছে ৮টি। সব মিলিয়ে ১২৫ জাহাজ বন্দরসীমায় থাকলেও পণ্য খালাসের কার্যক্রম চলা জাহাজ গতকাল ছিল ৬৭টি।
চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো.
ছুটি। বন্দর ও কাস্টম খোলা থাকলেও তখন আসলে পণ্য খালাস কার্যক্রম নেমে আসে এক-তৃতীয়াংশে। বন্দরের জট খুলতে তাই কিছু দিন সময় লাগতে পারে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত খ ল স কর থ কল ও ১০ দ ন কনট ই আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে সুখবর দিল বিসিবি
আইসিসির শর্ত পূরণ করে ২০১৫, ২০১৯ এমনকি ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সরাসরি কোয়ালিফাই করেছে। ২০১৫ থেকে লম্বা সময় ধরে ওডিআই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ৭ নম্বরে। সেখান থেকে অবনমন হতে হতে এখন ১০ নম্বরে। তাইতো প্রশ্ন উঠছে ২০২৭ বিশ্বকাপে সরসরি খেলতে পারবে তো বাংলাদেশ?
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর এই স্বপ্নও ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, এখনও পর্যাপ্ত ম্যাচ আছে বাংলাদেশের। যেগুলোতে ভালো করলে রাংকিংয়ে অবস্থান ভালো হবে। তাতে বাংলাদেশ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারবে বলে আশাবাদী বিসিবি।
আরো পড়ুন:
শারমনি-শর্নার ফিফটিতে ২৩৩ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ
টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে দুই পরিবর্তন
২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করতে হলে র্যাংকিংয়ে সেরা আট দলের মধ্যে থাকতে হবে। ১৪ দলের টুর্নামেন্টে বাকি দলগুলোকে বাছাইপর্বের বাধা পেরোতে হবে। ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ে ছাড়া ওডিআই র্যাংকিংয়ের সেরা আটে থাকা দলই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে সেরা আটের মধ্যে থাকলে র্যাংকিংয়ে দশ নম্বর পর্যন্ত থাকা দলগুলো সরাসরি অংশগ্রহণ করবে।
এই সময়কালের মধ্যে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সেরা অবস্থানের মধ্যে না থাকতে পারলে তখন ১০ দলের বাছাইপর্ব খেলতে হবে। যা গত বিশ্বকাপে পেরোতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এই মুহূর্তে আফগানিস্তান ৯৪ রেটিং নিয়ে আছে সপ্তমে। ৮৮ রেটিংয়ে আটে অবস্থান ইংল্যান্ডের। ৮০ রেটিংয়ে নয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর এর পরেই দশম অবস্থানে বাংলাদেশ, রেটিং ৭৫।
বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জনের পথটা বাংলাদেশের জন্য এখন বেশ জটিল। প্রতিটি সিরিজ, প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পর্যাপ্ত সুযোগও আছে।
বিসিবি জানিয়েছে ২০২৫-২৬ সময়কালে বাংলাদেশ আরও ২৪টি ওয়ানডে খেলবে। ফলে র্যাংকিংয়ে উন্নতি করে এখনও সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের বাকি থাকা ম্যাচগুলো- আফগানিস্তান – ১ ওয়ানডে (চলমান সিরিজ), ওয়েস্ট ইন্ডিজ – ৩ ওয়ানডে (হোম), পাকিস্তান – ৩ ওয়ানডে (হোম), নিউ জিল্যান্ড – ৩ ওয়ানডে (হোম), অস্ট্রেলিয়া – ৩ ওয়ানডে (হোম), জিম্বাবুয়ে – ৫ ওয়ানডে (অ্যাওয়ে), আয়ারল্যান্ড – ৩ ওয়ানডে (অ্যাওয়ে) ও ভারত – ৩ ওয়ানডে (হোম)।
এই ম্যাচগুলি আইসিসি এফটিপি’র অধীনে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের অংশ এবং ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল