বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লোকজনকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়া বা পুশইন অব্যাহত রেখেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। মঙ্গলবারও পাঁচ সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ আরও ৯৩ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ৪ মে থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৮৩৩ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ। 

এ দিন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বিএসএফের এ তৎপরতা ঠেকিয়ে দিয়েছে বিজিবি। বিষয়টি ঘিরে সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ওই সীমান্তে। বিশেষ করে সীমান্তের ভারতীয় অংশে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিএসএফ। আকাশে উড়তে দেখা গেছে ড্রোন। অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম ঠেকাতে বড়াইবাড়ীতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। 

এদিকে ভারত থেকে লোকজনকে ঠেলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রাজশাহীর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত নবীন রিক্রুট ১৪তম ব্যাচ ডেপুটি জেলার এবং ৬২তম ব্যাচ কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। 

উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্তে পুশইনের সংখ্যা বেড়েছে, এ জন্য আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা ভারতকে বলেছি, বাংলাদেশিদের প্রোপার চ্যানেলে ফেরত পাঠানোর জন্য; কিন্তু তারা তা করছে না। এ জন্য আমরা ভারতের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেছি। আমরা বলেছি, প্রোপার চ্যানেলে পাঠালে তারা আমাদের নাগরিক হলে তাদের গ্রহণ করব।’ সীমান্তে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের বাহিনী প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোর ৫টার পর থেকে বড়াইবাড়ী সীমা‌ন্তের ১০৬৭ সীমানা পিলা‌রের নোম্যান্সল্যান্ড দিয়ে ৯ পুরুষ ও পাঁচ নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাধা দেয় বি‌জি‌বি। এ নি‌য়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা বি‌জি‌বি ও বিএসএফের ম‌ধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতির সৃ‌ষ্টি হয়। ঠেলে দেওয়া ১৪ জনকে আবার বিজিবি নোম্যান্সল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা বিজিবি সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিএসএফ তাদের সীমান্তে অন্তত ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে হঠাৎ সীমান্তে ড্রোনও উড়তে দেখা যায়।
 
বিজিবি জানায়, ১৪ জনকে ঠেলে দেওয়ার ঘটনায় বি‌জি‌বির পক্ষ থে‌কে পতাকা বৈঠ‌কের আহ্বান জানা‌নো হ‌লেও বি‌সএফের পক্ষ থে‌কে কো‌নো সাড়া মে‌লে‌নি। এলাকাবাসীর সহায়তায় বড়াইবাড়ী বি‌জি‌বি ক্যাম্পের সদস্যরা কঠোর অবস্থা‌নে র‌য়ে‌ছে।

বড়াইবাড়ী সীমান্তে বসবাসকারী নুরুল হক বলেন, ‘ভারত থে‌কে ক‌য়েক ব্যক্তিকে বাংলা‌দে‌শে ঠে‌লে দেওয়ার‌ ঘটনা‌কে কেন্দ্র ক‌রে ভোরে বিএসএফ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায়। বর্তমানে প‌রি‌স্থিতি কিছুটা থমথ‌মে।’

বিকেল ৫টায় ঘটনাস্থলে থাকা সংবাদকর্মী সোহেল রানা স্বপ্ন জানান, বিএসএফের ঠেলে দেওয়া ১৪ নারী-পুরুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা সবাই ভারতীয়। তারা দাবি করেন, তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে ধরে নিয়ে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে আজ ভোরে বড়াইবাড়ী সীমান্ত পথের গেট খুলে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। ১৪ জনের মধ্যে খাইরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ভারতের আসামের মরিগাঁও জেলার একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

বিজিবি জামালপুর ব্যাটা‌লিয়‌ন-৩৫-এর সহকারী প‌রিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডজু‌টেন্ট শামসুল হক বলেন, ‘ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা কোন দে‌শের নাগ‌রিক তা জানা যায়‌নি। তারা এখনও দুই দে‌শের শূন্যরেখায় রয়েছে। ঘটনাস্থ‌লে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গে‌ছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রৌমারীতে উত্তেজনার মধ্যে একইদিন ভোরে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরীর সীমান্ত দিয়ে ২২ নারী-পুরুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। ভুরুঙ্গামারীর সোনারহাট, বাবুরহাট ও নাগেশ্বরীর কেদার সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। ২৩ জনকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বিজিবি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভীষণ সীমান্ত দিয়ে এ দিন ভোরে ১৭ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে গোমস্তাপুর থানায় হস্তান্তর করেছে। গোমস্তাপুর থানার ওসি মো.

রইসউদ্দিন বলেন, আটক ছয় ব্যক্তি স্ত্রীদের নিয়ে প্রায় এক যুগ আগে কুড়িগ্রাম থেকে ভারতে কাজের জন্য গিয়ে থেকে যায়। সেখানে আটকরা একটি ইটভাটায় কাজ করত। সেখানে তাদের সন্তানরাও জন্ম নেয়। 

মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তে দুই দিনের ব্যবধানে আরও ৩০ নারী ও শিশুকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। মঙ্গলবার ভোরে মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে দেওয়া হয়। তারা সীমান্ত পার হয়ে উপজেলার কেদারগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করছে খবর পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করে মুজিবনগর থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। আটকরা সবাই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল। গত রোববার ভোরে একই সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল বিএসএফ। 

সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়েও এ দিন ২৩ বাংলাভাষীকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেয় বিএসএফ। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে দেওয়া হয়। কুশখালী বিওপির বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে ৩৩ ব্যাটালিয়ন সদরদপ্তরে পাঠিয়ে দেয়। আকটদের মধ্যে ৯ শিশু ও সাতজন করে নারী ও পুরুষ রয়েছে। তারা সবাই কুড়িগাম ও ঝালকাঠির বাসিন্দা বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। 

(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প শইন ব এসএফ য় ব এসএফ ম জ বনগর উপজ ল র ১৪ জন

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে। 

ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। 

বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি। 

অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক। 

পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। 

একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক। 

সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেট সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে খুঁটি উপড়ে ফেলে বিএসএফ, স্থানীয়দের প্রতিবাদ
  • পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা নিয়োগ, বেতন ৫১,০০০ টাকা
  • জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক