কোরবানিকে সামনে রেখে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পশুর হাটগুলোতে ইজারাদারেরা তিন-চারগুণ হাসিল বা খাজনা আদায় করছেন। তারা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ইজারা শর্ত মানছেন না। নীতিমালায় শুধু ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায়ের কথা থাকলেও বিক্রেতাকেও রেহাই দিচ্ছেন না তারা। এমনকি খাজনার রসিদে
টাকার পরিমাণ লেখা হচ্ছে না। রাজশাহীর চারঘাটের পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
উপজেলায় ১৪টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে পশুরহাট একটি। নন্দনগাছী নামের এ হাট বসে প্রতি শুক্র ও সোমবার। নিমাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অবস্থিত এ হাটে ছাগল-ভেড়া কেনাবেচা হয়। প্রতিটি ছাগল ও ভেড়ার জন্য ২০০ টাকা খাজনা নির্ধারণ হয়েছে। এ ছাড়া গবাদি পশুর জন্য শুধু ক্রেতারাই খাজনা দেবেন বলা আছে। বাংলা ১৪৩২ অর্থবছরে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সর্বোচ্চ ৭৮ লাখ টাকা দিয়ে হাটটি ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষক মো.
গত সোমবার হাটে গিয়ে দেখা যায় কোথাও খাজনা আদায়সংক্রান্ত কোনো নিয়মাবলি বা তালিকা সাঁটানো হয়নি। ক্রেতা-বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত খাজনার পরিমাণ জানতে পারছেন না। এ সুযোগে ছোট ছাগলের ক্ষেত্রে ৬০০ টাকা ও মাঝারি-বড় ছাগলের ক্ষেত্রে ৭০০-৮০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০-৭০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। উপজেলায় আর কোনো পশুর হাট না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রতারিত হলেও ওই হাটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাটে ছাগল কিনতে এসেছিলেন চামটা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ছাগল কিনেছেন। হাসিল বাবদ তাঁর কাছে ৬০০ টাকা চাওয়া হয়। একশ টাকা কম
দিতে চাইলে ছাগল আটকে রাখে ইজারাদারের লোকজন। শেষ পর্যন্ত ৬০০ টাকা পরিশোধ করলেও ফাঁকা রসিদ দেওয়া হয়েছে। বিক্রেতাকেও ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।
মিয়াপুর গ্রামের মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাড়ে ৯ হাজার টাকা দিয়ে ছোট একটা ছাগল কিনেছি। খাজনা দিতে হলো ৫০০ টাকা। বিক্রেতাও দিলেন ১০০ টাকা। প্রকাশ্যে ঠকানো হচ্ছে কিন্তু প্রতিকার নেই। অতিরিক্ত টাকা নিলেও রসিদের খাজনার জায়গাটি ফাঁকা রাখা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব না।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ইজারাদার কাউকে তোয়াক্কা করেন না। হাটের দিন পুরো এলাকা তাদের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। উপজেলায় একাধিক পশুর হাট না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা জিম্মি। অতিরিক্ত খাজনা নিলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে খাজনার দ্বন্দ্বে ক্রেতা-বিক্রেতাকে হেনস্থা করছে ইজারাদারের লোকজন।
নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে হাট বসিয়ে সেখানে তিনগুণ খাজনা নেওয়া হলেও ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এমনটা তিনি শোনেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাটে তো সঠিক নিয়মে খাজনা নেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। অতিরিক্ত খাজনা নেওয়ার বিষয়ে কেউ কখনও অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ না পেলে কী ব্যবস্থা নেব!’
নন্দনগাছী হাটের ইজারাদার স্থানীয় ধর্মহাটা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ছাগলপ্রতি আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা খাজনা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে না। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারাও একটু খেয়াল রাইখেন আমাদের প্রতি, কারণ অনেক টাকা দিয়ে হাট নিয়েছি। নয়তো লোকসানে পড়তে হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ইজারাদারদের নির্দেশনা মেনে হাট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইজ র দ র খ জন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’