দেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, গত আগস্টের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে। একটা অস্থির পরিস্থিতি চলছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য আবদুল মঈন খান এসব কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথভাবে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে বলেছে গণতন্ত্র, বাস্তবে ছিল স্বৈরতন্ত্র। এভাবে রাজনীতি হয় না। সে অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি, বের হয়ে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু.

..আমরা নতুন আরেকটি ফাঁদে না পড়ি। গত আগস্টের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে। একটি অস্থির পরিস্থিতি চলছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে সংস্কার করব, তারপর বিচার করব, তারপর নির্বাচন করব। এসব বলে আসলে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।’

তরুণদের উদ্দেশে মঈন খান বলেন, তরুণদের প্রতিনিধিত্ব দেশ পরিচালনা করবে এটা তো দাবি করার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির নিয়মে আমরা চলে যাব এবং সেখানে তরুণেরাই আসবে।...তারা দেশ পরিচালনা করবে।...জোর করে কোটা দিয়ে এটা হবে না। আর কোটা দিয়েই যদি এখন আবার নতুন করে কিছু করতে হয়, তাহলে কোটা আন্দোলন কেন হয়েছে।’

মঈন খান বলেন, ‘আমরা বিএনপি ও ব্যক্তিগতভাবে এই শহীদদের (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের) শ্রদ্ধা করি এবং আহতদের সুচিকিৎসা কামনা করি। আমরা বলতে চাই, বিএনপি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারে, এখন আমরা কথা দিচ্ছি, প্রতিটি শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।’

সেমিনারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল এবং অমিলের জায়গা রয়েছে; কিন্তু বিএনপি যদি আগের মতো তাদের অবস্থান সঠিক রাখতে পারে, তাহলে আগামী দিনেও ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা হাতে হাত রেখে চলতে পারব।’ হেফাজত নেতা মামুনুল হক বলেন, বিএনপিকে সতর্ক করতে চাই, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের দুর্দিনে হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য খালেদা জিয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের আদেশ দিয়েছিলেন; কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীরা তা করেননি। সেদিন তাঁরা আদেশ মানলে ফ্যাসিবাদ এত বছর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারত না।

বিএনপির শুধু নিজেদের চিন্তা করলে হবে না বলে মন্তব্য করেন মামুনুল হক। বিএনপির বিভিন্ন নেতার কাছ থেকে মাঝেমধে৵ ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য চলে আসে উল্লেখ করে তিনি এ ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

সেমিনারে গণ–অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভূমিকা ছিল মুখ্য। তারা রাজপথে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, আজ সোশ্যাল মিডিয়া মূল যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। যেখানে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাদের ভিলেন (খলনায়ক) বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এটি প্রতিরোধে ছাত্রদলকে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথভাবে আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। ঢাকা, ২৭ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মঈন খ ন ব এনপ র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে বন্যার পানি কমেছে, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন

ফেনীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতর চিহ্ন।

সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি কমে যাওয়ায় নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা নিজ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে ঘরে কাঁদা থাকায় স্বাভাবিকভাবে বসবাস শুরু করতে আরও দু-তিনদিন সময় লাগবে। কর্দমাক্ত ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে অনেককে। 

এদিকে ফেনী থেকে ফুলগাজী পর্যন্ত যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে পরশুরাম সড়কে। যেসব এলাকা থেকে পানি সরে গেছে সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে। 

বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হতদরিদ্র, দিনমজুর ও প্রান্তিক কৃষকরা। মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সড়ক গুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, মুহুরী নদীর পানি পরশুরাম পয়েন্টে বিপৎসীমার তিন মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ছাগলনাইয়া পয়েন্টে হরিপুর এলাকা হয়ে মুহুরি নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঁইয়ার কিছু গ্রাম বেশ কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

এ দিকে গেল রাতে ফেনী শহরের পেট্রোবাংলা এবং আরামবাগ এলাকায় আবার কিছুটা পানি উঠেছিল। তবে সকালে নেমে গেছে। এ বন্যায় ৩৭ হাজার মানুষ পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এখনও সাড়ে চার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। ৫০০০ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরেছে। এখনও ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। উপজেলাগুলোতে ১৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে ২২০০ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার দেওয়া হয়েছে।

ফুলগাজীর মুন্সিরহাট আলী আজম বিদ্যালয় ও কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চার দিন পর বের হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।  তিনি বলেন, সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার সময় আমাদের ঘর পানিতে তলিয়ে ছিল। ৪ দিন পর পানি নেমে গেছে। তবে ঘরে কিছু পানি রয়ে গেছে। সেই পানি সেচে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্যার সময় পানির জন্য কোথাও যেতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরের দমদমার ওপরে ছিলাম। চিড়া-মুড়ি খেয়ে কষ্ট করে কোনোরকম দিন পার করেছি।’

গোসাইপুর গ্রামের বাসিন্দা খোদেজা আক্তার ও পাখি আক্তার বলেন, ‘বন্যার পানি প্রবেশ করে ঘরের সবকিছু নষ্ট করে ফেলেছে। চারদিন শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছি। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। রান্না করার মাটির চুলা বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়ায় টিনের চুলায় রান্না করছি।’

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় সর্বশেষ ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজীতে ৬৭, পরশুরামে ২৭, ছাগলনাইয়ায় ১৫, ফেনী সদর ও দাগনভূঞায় দুটি গ্রাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ