কক্সবাজারে বেলার গণশুনানিতে সোনাদিয়ার অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদের দাবি
Published: 27th, May 2025 GMT
কক্সবাজারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত এক গণশুনানিতে বক্তারা বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কক্সবাজার উপকূলকে রক্ষা করে ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবন। প্যারাবনকে বলা হয় রক্ষাকবচ। কিন্তু চিংড়িঘের ও লবণ উৎপাদনের মাঠ তৈরির নামে যেভাবে আগুন দিয়ে প্যারাবন ধ্বংস ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা হচ্ছে, তা দ্রুত বন্ধ করা না হলে সোনাদিয়ার মতো দ্বীপকে বাঁচানো যাবে না। বনায়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকে না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াতের নেতারা মিলেমিশে প্যারাবন ধ্বংসে যুক্ত থাকলেও তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয় না।
‘উপকূলীয় বন সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার’ শিরোনামে এই গণশুনানি আজ মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে বন, পরিবেশ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়ত হোসেন, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ডিএফও মারুফ হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
মুক্ত আলোচনায় মহেশখালীর সোনাদিয়ার পরিবেশকর্মী আজিজুল হক বলেন, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়ার কয়েক হাজার প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানে ৪৪টি চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়েছে। প্যারাবন যখন ধ্বংস করা হয় তখন বন বিভাগ কিংবা প্রশাসন তৎপর হয় না। প্যারাবন ধ্বংস হওয়ার পর তৎপরতা দেখায়। তখন করার কিছুই থাকে না।
জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ও অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক মকবুল আহমদ বলেন, ‘আগুন দিয়ে প্যারাবন ধ্বংসের ফলে সামুদ্রিক ও বন্য প্রাণী, জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঘটছে। পুনরুদ্ধার করে লাভ কী, যদি প্যারাবনই টিকিয়ে রাখা না যায়। প্যারাবন ধ্বংস হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীদের কারণে। কিন্তু দখলদার প্রভাবশালীদের নামের তালিকা দেখি না।’
সোনাদিয়ায় পরিবেশ ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে মহেশখালীর বেলার পরিবেশ সম্পাদক সুব্রত দত্ত বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। অথচ সেখানে ৪০টির বেশি খননযন্ত্র দিয়ে কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়েছে। দেখেও চুপ থাকে প্রশাসন। মহেশখালীর পাহাড়ে এখন কোনো গাছ নেই, প্রাণী নেই। বিষ প্রয়োগ করে হনুমানসহ বন্য প্রাণী মেরে ফেলা হয়েছে।
সোনাদিয়ায় প্যারাবন ধ্বংসের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর অন্তত ৫৬ দখলদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিদর্শক মুহিব ইবনে রহমান। তিনি বলেন,প্যারাবন রক্ষা করতে হলে সমন্বিত মনিটরিং দরকার। এ ক্ষেত্রে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিএফও বেলায়ত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১ লাখ ৯৫ হাজার একর প্যারাবনের মধ্যে ৩০ হাজার একর অবৈধ দখলে চলে গেছে। এর মধ্যে সোনাদিয়া, চকরিয়া এলাকার ১০ হাজার একর রয়েছে। সোনাদিয়ার প্যারাবন এত দিন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) দখলে ছিল। ওই সময় কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়। যে কারণে বন বিভাগ দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারছে না। এখন বেজার ওই জমি (প্যারাবন) বন বিভাগের কাছে আবার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তখন সোনাদিয়ার প্যারাবনের কর্মীরা দেখাশোনা করবেন।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘উপকূলীয় বন আছে বলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এলাকার মানুষ রক্ষা পাচ্ছেন। কিন্তু সোনাদিয়ার প্যারাবন আমরা রক্ষা করতে পারছি না নানা কারণে। আমরা বনায়ন করি, কিন্তু তদারকির ব্যবস্থা রাখি না। তদারকি থাকলে জীববৈচিত্র্যও সংরক্ষণ হয়। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কাজে লাগে, প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। এখন অবৈধ দখলে থাকা ৩০ হাজার একরের প্যারাবন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে। সবার আগে সোনাদিয়া থাকবে।’ সোনাদিয়ার প্যারাবনের দখলদারের তালিকা তৈরি হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় সোনাদিয়ার অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দ য় র প য র বন প য র বন ধ ব স প য র বন র হ জ র একর গণশ ন ন ত বন ব ভ গ ম হ ম মদ ধ ব স কর দখলদ র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজার ৭৭ শতাংশ এখন ইসরায়েলের দখলে
গাজা উপত্যকার ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এখন ইসরায়েল। শনিবার আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজা উপত্যকার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, “এটি সরাসরি স্থল আক্রমণ এবং আবাসিক ও বেসামরিক এলাকায় দখলদার বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে, ভারী অগ্নিসংযোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অথবা অন্যায্য জোরপূর্বক উচ্ছেদ নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, যা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর, এলাকা, জমি ও সম্পত্তিতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গাজা উপত্যকার বিশাল অংশের উপর অব্যাহত গণহত্যা, জাতিগত নির্মূল, উপনিবেশবাদ, আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ সব আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন করে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে চূড়ান্ত সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার ইসরায়েলি রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়।”
গাজা উপত্যকার সরকারি মিডিয়া অফিস বিবৃতিতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলি সম্প্রসারণ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ