জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের মুক্তির প্রতিবাদে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের বিক্ষোভ
Published: 27th, May 2025 GMT
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আদালতের রায়ে মুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বামপন্থি কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক, শাহবাগ মোড় ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিক্ষোভ মিছিল।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা।
এসব নেতারা স্লোগান দেন, ‘হাসিনা আর আজহার বাংলাদেশে গাদ্দার’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’, ‘রাজাকারের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘হেরে গেছে হাসিনা একাত্তর হারেনি’।
জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম স্বাধীন বিচার বিভাগের আকাঙ্ক্ষায় শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড.
ছাত্রমৈত্রীর এই নেতা আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি অপরাধে ফাঁসির অপরাধে দণ্ডিত, তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা সবাই জানি, উত্তরাঞ্চলের সবাই জানে, ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের রংপুর জেলার সভাপতি হিসেবে আলবদর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন আজহার। সেই আলবদর চব্বিশের পরে দেখলাম তার হাতে একাত্তরের কোনো কাঁদা নাই, গণহত্যার চিহ্ন নাই। তিনি একজন ফেরেস্তা হিসেবে ইন্টেরিম রায় দিল। কীসের ভিত্তিতে দিল, আমরা নিশ্চিত না।’
ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘দশ মাস পর দেখতে পেলাম গণহত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন রাজাকার-আলবদরের কমান্ডার আজহারুলকে সরকার বেকসুর খালাস করেছে। তিনি নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছেন, আজকে ৫৪ বছর পরে আমাদেরকে এ গল্প শোনানো হচ্ছে। আমরা ইন্টেরিমকে ধিক্কার জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাখো জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। একাত্তরে লাখো জনতা প্রাণ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছে, নব্বইয়ে স্বৈরাচারের পতন এবং চব্বিশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। এই বাংলাদেশে কোনো রকম গণহত্যাকারীদের ঠাঁই হবে না। বাংলাদেশের জনতা একাত্তরের রাজাকার, নব্বইয়ের দালাল, চব্বিশের শত্রুদের বাংলাদেশে ঠাঁই হবে না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
রাজধানীর সার্ক ফোয়ারা মোড় সংলগ্ন ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপাতত বহাল থাকছে। ফলে যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায়ই থাকবে, অর্থাৎ নির্মাণ কার্যক্রম চলবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আজ মঙ্গলবার নট দিজ উইক (চলতি সপ্তাহে নয়) বলে আদেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করতে বলা হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়ে ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেন। ফলে হাতিরঝিলের যে অংশে কাজ চলছিল বা চেষ্টা করছিল, সেই অংশে এবং পান্থকুঞ্জে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলবে না বলে তখন জানান রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আজ আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় ১৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানিতে ছিলেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া।
পরে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট নির্মাণ কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছিলেন। যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে, অর্থাৎ নির্মাণকাজ চলবে না। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। এতে করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল আছে। হাইকোর্টের প্রত্যায়িত আদেশ ইতিমধ্যে হাতে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছিল। যেহেতু হাইকোর্টের আদেশের প্রত্যায়িত অনুলিপি ইতিমধ্যে বেরিয়েছে, তাই নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণকাজের বৈধতা নিয়ে পরিবেশসচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের’ সমন্বয়ক আমিরুল রাজীবসহ ৯ বিশিষ্ট নাগরিক ৯ সেপ্টেম্বর রিটটি করেন। অপর আবেদনকারীরা হলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম, লেখক ও গবেষক ফিরোজ আহমেদ ও গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং হাতিরঝিলে বিনোদন ও অন্য উদ্দেশ্যে জনসাধারণের প্রবেশাধিকারে হস্তক্ষেপ না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল এলাকার ভেতরে নির্মাণকাজ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণকাজ অন্য কোনো উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে এবং মগবাজার থেকে এফডিসি পর্যন্ত হাতিরঝিল জলাধার পুনরুদ্ধারে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুসচিব, সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।