জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আদালতের রায়ে মুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বামপন্থি কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক, শাহবাগ মোড় ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিক্ষোভ মিছিল।  

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা।

এসব নেতারা স্লোগান দেন, ‘হাসিনা আর আজহার বাংলাদেশে গাদ্দার’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’, ‘রাজাকারের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘হেরে গেছে হাসিনা একাত্তর হারেনি’।

জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম স্বাধীন বিচার বিভাগের আকাঙ্ক্ষায় শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ড.

ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত করেছে। এখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দণ্ডিতদের ওকালতি করা আইনজীবীদের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বানিয়েছে। একজন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুলি হয়ে উঠলেন এটিএম আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম। ফলে আমরা বিশ্বাস করি না, ন্যায়বিচার হতে পারে। দশ বছর যে ব্যক্তি এটিএম আজহার আলবদর না, নিরপরাধ- এজেন্ডা নিয়ে লড়াই করেছেন তিনি এখন রাষ্ট্রপক্ষের উকিল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।’

ছাত্রমৈত্রীর এই নেতা আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি অপরাধে ফাঁসির অপরাধে দণ্ডিত, তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা সবাই জানি, উত্তরাঞ্চলের সবাই জানে, ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের রংপুর জেলার সভাপতি হিসেবে আলবদর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন আজহার। সেই আলবদর চব্বিশের পরে দেখলাম তার হাতে একাত্তরের কোনো কাঁদা নাই, গণহত্যার চিহ্ন নাই। তিনি একজন ফেরেস্তা হিসেবে ইন্টেরিম রায় দিল। কীসের ভিত্তিতে দিল, আমরা নিশ্চিত না।’
 
ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘দশ মাস পর দেখতে পেলাম গণহত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন রাজাকার-আলবদরের কমান্ডার আজহারুলকে সরকার বেকসুর খালাস করেছে। তিনি নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছেন, আজকে ৫৪ বছর পরে আমাদেরকে এ গল্প শোনানো হচ্ছে। আমরা ইন্টেরিমকে ধিক্কার জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাখো জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। একাত্তরে লাখো জনতা প্রাণ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছে, নব্বইয়ে স্বৈরাচারের পতন এবং চব্বিশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। এই বাংলাদেশে কোনো রকম গণহত্যাকারীদের ঠাঁই হবে না। বাংলাদেশের জনতা একাত্তরের রাজাকার, নব্বইয়ের দালাল, চব্বিশের শত্রুদের বাংলাদেশে ঠাঁই হবে না।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল খালাস পাওয়ায় বাম জোটের উদ্বেগ

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসসহ সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। এর আগে আজ সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারকে খালাস দেন।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, আলবদর–আলশামস বাহিনী গঠন করে খুন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের সবার বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও যাদের বিচার হয়েছে, তাদের সবার রায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে কার্যকর করেনি। গণ অভ্যুত্থানপরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আমলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের সেই রায় বাতিল করে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় দেশবাসীর মনে প্রশ্ন, বর্তমান সরকারের সময়েও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে কি না।

দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে একাত্তরের গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছে বাম জোট। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এবং একাত্তর ও চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জোটের নেতারা।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত আওয়ামী শাসনামলে যেমন বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে, গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, গণহারে আসামি করে ফরমায়েশি রায়ে নাগরিকদের হয়রানি করা হয়েছে, জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পুরে রাখা হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর গণহত্যার জন্য প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা না করে ঢালাও–গণহারে মামলা দিয়ে বাস্তবে বিচারপ্রক্রিয়াকে দুর্বল বা প্রকৃত অর্থে বিচারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও গণমামলার আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ ও কিছু রাজনৈতিক দলের লোকজনকে চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

বিগত আমলে যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গণহারে সবাইকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বেশ কিছু মামলায় সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ করে বাম জোট বলেছে, এতে করে বিচার ও আইনের শাসন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথে এক অশনিসংকেত।

সচিবালয়, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে জোটের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল দেশে গণতান্ত্রিক আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু সর্বত্র অরাজক পরিস্থিতি দেখে দেশবাসী উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত এই ভেবে যে এত রক্তপাত ও আত্মত্যাগের পরেও গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার অধরাই থেকে যাবে কি না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘রক্তের ওপর দাঁড়ানো সরকার আমাদের সঙ্গে বেইমানি করছে’
  • ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ৮০০ বিচারক-আইনজীবীর চিঠি
  • জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল খালাস পাওয়ায় বাম জোটের উদ্বেগ
  • গাজায় হত্যাযজ্ঞ: ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৮০০ বিচারক-আইনজীবীর চিঠি
  • হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের অপমানের রাজনীতি
  • প্রজেক্ট এসথার: যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিবাদ রক্ষায় রহস্যময় অস্ত্র
  • ইসরায়েলকে থামাতেই হবে
  • গণহত্যার প্রহরী
  • ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর: কুকুর লেজ নাড়ছে, নাকি লেজ কুকুরকে