বার্লিনে চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক বাংলাদেশের বিধান
Published: 10th, January 2025 GMT
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হচ্ছে ৭৫তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এই উৎসবে জুরি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে থাকছেন চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। ফিপ্রেসি জুরি হিসেবে উৎসবের প্যানারোমা বিভাগের বিচারক থাকবেন তিনি। আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে খবরটি জানিয়েছেন বিধান। জানান, উৎসবে অংশ নিতে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ছাড়বেন তিনি।
আরও পড়ুন২২০ চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব০৯ জানুয়ারি ২০২৫এর আগে বিধান রিবেরু ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপ্রেসি জুরি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন।
বিধান বলেন, ‘চলচ্চিত্রকে ভালোবাসার জায়গা থেকে চলচ্চিত্র দেখা। এ ধরনের উৎসবে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্র সম্পর্কে অন্য মানুষের মতামত জানা যেমন যায়, তেমনি নিজের মতামতকেও ঝালাই করে নেওয়া যায়। এত বড় উৎসবে আমি যখন যাচ্ছি, এর মাধ্যমে নিজের যেমন অংশগ্রহণ হচ্ছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশেরও প্রতিনিধিত্ব করছি। এটা একটা বড় ব্যাপার এই কারণে যে বাংলাদেশ থেকে একজন চলচ্চিত্র সমালোচক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে, জুরি হিসেবে কাজ করছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আমি মনে করি যে এটা আমার জন্য আনন্দের, ভালো লাগার ব্যাপার। তবে দেশের মানুষ কীভাবে দেখে, সেটা অবশ্য আমি জানি না।’
কথায় কথায় বিধান রিবেরু জানান, এ ধরনের উৎসবে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগতভাবেও লাভবান হয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রজগতে নতুন যেসব ছবি আসছে, বিশ্বের খ্যাতনামা সব নির্মাতাদের, একেবারে ক্ল্যাসিক ঘরানার ছবি, সেসব ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয় এ ধরনের বড় সব উৎসবে। সবার আগে এসব ছবি জুরি হিসেবে দেখার একটা সুযোগ তৈরি হয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এ বছর ফিপ্রেসি ১০০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক বড়মাপের চলচ্চিত্র নির্মাতাও বেরিয়ে এসেছে ফিপ্রেসি পুরস্কারের মাধ্যমে। এই পুরস্কারের মধ্য দিয়ে আগামীতেও ভালো ও প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাতারা উঠে আসবেন—যা কোনো একদিন হয়তো আমিও বলতে পারব। ফিল্মের প্রতি যেহেতু আমার ভালোবাসা আছে, এতে করে আমারও একধরনের সন্তুষ্টি ঘটে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শুভেচ্ছার মোড়কে ছাপা রাজনীতি
ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে, বেশি দিন হয়নি। নির্বাচন সামনে রেখে এই ঈদে যেমন দেখা গেল শুভেচ্ছার রাজনীতি, তেমনটি এর আগেও আমরা দেখেছি। এলাকায় একই ব্যক্তির ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডজুড়ে মুখচ্ছবি আর নাম-পরিচয়! একদিকে ঈদের অনাবিল আনন্দ, অন্যদিকে রাস্তায় হঠাৎ দেখা যায়, ‘অমুক সাহেবের পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক’ কিংবা ‘জনপ্রতিনিধি পদপ্রার্থী তমুক ভাইয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা’। অবশ্য শুধু ঈদে নয়, এর বাইরেও এ ধরনের শুভেচ্ছা দেখা যায়। তবে ঈদ মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব, সেহেতু এ সময়ে প্রবণতা বেশি থাকে।
এত বড়মাপের আয়োজন, ছাপানো, টাঙানো সবই ব্যয়সাধ্য। সাধারণ একজন রাজনৈতিক কর্মী কীভাবে এত খরচ করেন? নাকি এটি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ? রাজনৈতিক পুঁজি সঞ্চয়ের একটি চতুর পদ্ধতি? যারা ভোট চান, তারা জানেন ঈদ হলো মানুষের অনুভূতির সময়। এ সময়কে কাজে লাগিয়ে মানুষের মাঝে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া যায় নীরবে, আত্মীয়ের মতো করে। তাই ‘ঈদ মোবারক’ লেখার চেয়েও বড় করে লেখা থাকে প্রার্থীর নাম, তার ছবি, দলের প্রতীক কিংবা নেতার ছবির পাশে নিজের ঠাঁই। এক অর্থে, এটি নিজের চেহারা ও অবস্থানকে জনগণের মনে গেঁথে দেওয়ার কৌশল; ঈদের মোড়কে!
এত ব্যানার-ফেস্টুনের মাঝে ঈদের মূল বার্তাটি কোথায়? রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছেঁড়া ব্যানার, বাতাসে উড়তে থাকা ছিন্ন ফেস্টুন কি ঈদের শোভা বাড়ায়, নাকি নগরজীবনে দৃষ্টিকটু মাত্রা যোগ করে? প্রশাসন অনেক সময় এগুলো অপসারণে উদ্যোগী হলেও প্রভাবশালী মহলের নাম লেখা থাকলে সে ব্যানার ছোঁয়া যেন সাহসের ব্যাপার। ফলে শহরের সৌন্দর্য বা সজ্জা হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতির বিজ্ঞাপনস্থল।
এই প্রবণতা শুধু শহরে নয়, গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কিংবা সম্ভাব্য চেয়ারম্যানও ঈদের আগে ছবি পাঠিয়ে দেন ছাপাখানায়। বাজারের মোড়ে তাদের ফেস্টুন ঝুলে যায়। সঙ্গে যুক্ত থাকে দলের প্রতীক, স্থানীয় নেতার নাম এবং অবশ্যই ঈদের শুভেচ্ছা। মানুষের অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেকে পরিচিত ও প্রভাবশালী করে তোলার এক নীরব প্রচারকৌশল এটি। তবে সবাই কি এসব ব্যানার-ফেস্টুনে বিরক্ত হন? অনেক সাধারণ মানুষও এটিকে স্বাভাবিকভাবে নেন। তারা বলেন, ‘যাক, অন্তত মনে তো করেছে!’ এই মানসিকতা রাজনৈতিক কর্মীদের উৎসাহিত করে। কিন্তু আশঙ্কা থেকে যায়, এই ছদ্ম-শুভেচ্ছার মাঝে যদি সত্যিকারের দায়বদ্ধতা না থাকে, তবে জনগণ কবে বুঝবে, তারা প্রতারিত হচ্ছে?
এটা ঠিক, যে কেউ ঈদে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ে কার্ড পাঠানো হৃদয় ছোঁয়া বার্তার অভাব নেই। কিন্তু যান্ত্রিকভাবে, দখলদারির মতো করে শহর কিংবা গ্রামজুড়ে মুখের ছবি ঝুলিয়ে দেওয়া কতটা শোভন? এসব ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে কে কোথায় কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন, তার একটি ম্যাপ তৈরি হয়। কার ব্যানার সবচেয়ে বড়, কার ছবি কেন্দ্রীয় স্থানে, এসব বিশ্লেষণ করেই স্থানীয় রাজনীতিতে কে কতটা শক্তিশালী, তা বোঝা যায়। ফলে ঈদ এক সময় হয়ে পড়ে রাজনৈতিক পরিমাপের বারোমাসি দিনপঞ্জির একটি কৌশলগত দিন। এখন সময় এসেছে এই প্রবণতা নিয়ে ভাববার।
ঈদ আমাদের আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও ভালোবাসার উৎসব। এটি হোক মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর এক আন্তরিক উপলক্ষ। নিছক ব্যানার-ফেস্টুনে আটকে না থাকুক এই পবিত্র বার্তা। শুভেচ্ছা জানানো হোক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে; চোখে পড়ার জন্য নয়; হৃদয়ে গেঁথে যাওয়ার জন্য। সত্যিকারের নেতৃত্ব তো জন্ম নেয় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে; কৃত্রিম ব্যানারে নয়। রাজনীতি যদি মানুষের সেবার মাধ্যম হয়, তবে ঈদের সময় সেই সেবা প্রতিফলিত হোক কাজে; শুধু মুখে কিংবা ব্যানারে নয়। তাহলেই ঈদ, রাজনীতি দুটোই পাবে প্রকৃত সম্মান।
জুয়েল হাসান: প্রকৌশলী