জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক শিক্ষক : শুভ্র সাগরের বিরল রোগের করুণ লড়াই
Published: 8th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শুভ্র সাগর আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। একসময় স্কুলের শ্রেণিকক্ষে জ্ঞানের আলো ছড়ানো এই তরুণ শিক্ষক এখন নিজেই এক ভয়াবহ ও বিরল রোগের শিকার।
২০১৩ সালে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন শুভ্র সাগর। শিক্ষকতার এক বছর পর, ২০১৪ সালে হঠাৎ একদিন ক্লাস নেওয়ার সময় তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করেন।
এই স্ট্রোক তার জীবনে এক ভয়াবহ মোড় নিয়ে আসে। স্ট্রোকের পর থেকেই তিনি এক অজানা ও বিরল রোগে আক্রান্ত হন, যা তাকে দিনের পর দিন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শুভ্র সাগরের অসুখটির নাম "হিমোল্যক্রিয়া", যা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিরল। এই রোগের ফলে তার চোখ, মাথার তালু, নাক, কান, হাতের তালু এবং শরীরের পশমের গোড়া দিয়ে অঝোর ধারায় রক্ত ঝরে। তার রক্তচাপ হঠাৎ করে বেড়ে যায়, এবং সেই সময় শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তপাত হতে থাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। শুভ্র সাগরসহ এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ জনের এ রোগ শনাক্ত হয়েছে।
চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ লড়াই
রোগ নিরাময়ের জন্য দেশের নামকরা চিকিৎসক থেকে শুরু করে ভারতের চেন্নাই পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, এখনো পর্যন্ত এই রোগের কোনো কার্যকর ওষুধ বা স্থায়ী চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি।
চিকিৎসকরা শুধুমাত্র উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এই তরুণ শিক্ষক এখন চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে, কিন্তু তিনি এখনো বেঁচে থাকার আশা ছাড়েননি।
তার স্বপ্ন ছিল আরও অনেক শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার, কিন্তু এখন তিনি নিজেই বাঁচার জন্য লড়াই করছেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
সোহরাওয়ার্দীতে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ শুরু
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। এতে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
শনিবার (৩ মে) সকাল ৯টায় মহাসমাবেশ শুরু হয়। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এতে সভাপতিত্ব করছেন।
এর আগে ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তার আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন সংগঠনটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
এ সমাবেশের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০১৩ সালের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কুরআন বিরোধী প্রতিবেদন বাতিল এবং কমিশন বিলুপ্ত করা, সংবিধানে প্রস্তাবিত বহুত্ববাদ বাতিল, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি।
নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।
শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তাণ্ডব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়।
শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে মারা যান ১১ জন।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
ওই মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড হয় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। এক মাস জেলে ধাকার পর তারা জামিনে মুক্তি পান।
আদিলুর রহমান খান বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।
২১ সদস্যের এ সরকারে ধর্ম উপদেষ্টা হয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির ও সুন্নি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আ ফ ম খালিদ হাসান।
ঢাকা/রায়হান/ইভা