দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বগুড়া শহর শাখার সভাপতি আবির হাসান বিদ্যুৎকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার (৩ মে) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা পু‌লি‌শের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতোয়ার রহমান।

গ্রেপ্তার আবির শহরের ঠনঠনিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি বর্তমানে মালতিনগর দক্ষিণপাড়ায় বসবাস করছিলেন।

হামলার শিকার সংবাদিকরা হলেন- মাছরাঙা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম এবং অনলাইন পোর্টাল বগুড়া লাইভের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আসাফ-উদ-দৌলা নিওন। 

আরো পড়ুন:

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতার নেতৃত্বে হাসপাতালে হামলার অভিযোগ

দাওয়াত খেতে গিয়ে হামলার শিকার জেলা আ.

লীগ নেতা 

স্থানীয় সূত্রে জানা গে‌ছে, গত ৬ এপ্রিল জলেশ্বরীতলা এলাকাস্থ জেলখানা মোড়ে অবস্থিত ফ্রেস জুস বারের সামনে সাংবাদিক খোরশেদ আলম এবং আসাফ-উদ-দৌলা নিওনের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করে বগুড়া সদর থানায় আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আসাফ-উদ-দৌলা নিওন। হামলার পর পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাকিবুল ইসলাম রাকিব নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার রাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। 

ওই মামলায় আজ শনিবার ভোরে ডিবি পুলিশের একটি টিম আবির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আবিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে।

বগুড়া জেলা পু‌লি‌শের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতোয়ার রহমান ব‌লেন, “আবির হোসেনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত এজাহার নামীয় দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।”

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

আটাব সভাপতি-মহাসচিবের বিরুদ্ধে এয়ার টিকিটের মূল্য কারসাজির অভিযোগ  

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে এয়ার টিকিটের মূল্য কারসাজিও রয়েছে। আটাব সংস্কার পরিষদ থেকে তিন মন্ত্রণালয়ে এসব লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেন আটাবে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না, তা জানতে শোকজ (কারণ দর্শাও) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২২ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহকে শোকজ পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তাহসিনা বেগমের সই করা নোটিশে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।

এর আগে গত ১৮ মার্চ আটাব সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক ও মঈন ট্রাভেলসের মালিক গোফরান চৌধুরী অভিযোগপত্র জমা দেন। এটা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে। এ আবেদনে সভাপতি ও মহাসচিবকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ বলা হয়। কমিটি বাতিল করে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। একই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (বিমান ও সিএ) কাছে একই অভিযোগ করে সংস্কার পরিষদ। ১ মার্চ গোফরান চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং আমির হোসেন আরিফকে সদস্য সচিব করে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট আটাব সংস্কার পরিষদ গঠন করা হয়।

অভিযোগগুলো কী
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ সংগঠনের মহাসচিব থাকাকালে ২০১৯ সালে আটাব অনলাইন (ওটিএ-অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি) প্রতিষ্ঠা করেন। এটা বাণিজ্য সংঘবিধি ও আটাব সদস্যদের স্বার্থের পরিপন্থি। আটাব অনলাইনকে ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ জন্য আব্দুস সালাম আরেফের এয়ার স্পিড (প্রা.) লি. এবং মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহর সায়মন ওভারসিজের নামে চেক ইস্যু করা হয়। ভিন্ন চেকে এয়ার স্পিডের নামে ৯৭ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৬ টাকা এবং সায়মন ওভারসিজের নামে ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১১৭ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। পরে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আটাব অনলাইন বিলুপ্ত করা হলেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।

এর আগে ২০২২ সালে আটাব অনলাইন গঠনের নামে তৎকালীন সভাপতি এসএন মনজুর মোরশেদ মাহবুব এবং মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তখন এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন কমিটির কয়েকজন নেতা।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বর্তমান কমিটির সময় নির্বাচন ও আটাব মেলাসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর পক্ষে কোনো বিল জমা দেওয়া হয়নি। আরেফ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে ব্লক করে এয়ার স্পিড নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে প্রচার করেন। চড়া দামে বিক্রি করেন। ২০২৩-২৪ সালে মালয়েশিয়াগামী এবং ২০২৫ সালে সৌদি আরবগামী যাত্রীদের টিকিট গ্রুপ ব্লক করে দাম বাড়িয়ে বেচেন। এ ছাড়া আটাব সদস্যদের বিদেশে ফেম ট্রিপের নামে অর্থ পাচার করেছেন সভাপতি ও মহাসচিব।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের আত্মীয় পরিচয় দিতেন। প্রশাসনের সহায়তায় ২০১১ সাল থেকে ‘নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে’র মাধ্যমে দুবার মহাসচিব এবং সভাপতি হন। আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মরহুম মুহায়মিন সালেহর মেয়ে। আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয়ে তিনি একাধিকবার সহসভাপতি ও মহাসচিবসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হন।

সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক গোফরান চৌধুরী সমকালকে বলেন, সভাপতি ও মহাসচিব আটাব অনলাইন থেকে চেকের মাধ্যমে নিজ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে এটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে শেয়ারহোল্ডারদের টাকা ফেরত দেননি।

আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ সমকালকে বলেন, ‘সংস্কার পরিষদ ভুঁইফোঁড় সংগঠন। এর সঙ্গে জড়িতদের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় পরিচিতি নেই। নানা অভিযোগে এরই মধ্যে ৩০ জনের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। এখন তাদের কেউ কেউ সংস্কার পরিষদের নামে আটাবের নির্বাচিত কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে সরকার, মিডিয়া ও জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।’

নিয়মরক্ষার নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৪ সালের ৫ মার্চ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। এতদিন পর অভিযোগ করা অবান্তর।’

অনলাইনের নামে চেক ইস্যু করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে সালাম বলেন, ‘এটা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০১৯ সালে এস এন মনজুর মোরশেদ মাহবুবের উদ্যোগে। সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে অনলাইন বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য মনজুর মোরশেদ মাহবুবের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। আটাব অনলাইনের নামে আমরা কোনো চেক ইস্যু বা টাকা আত্মসাৎ করিনি।’

অর্থ পাচার ও টিকিট ব্লকিংয়ের বিষয়ে সভাপতি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নই। এখন আমাদের যদি ফ্যাসিস্টের সহযোগী তকমা লাগানো হয়, তাহলে তো বলব, গত ১৬ বছর যারা এখানে ছিলেন ও ব্যবসা করেছেন, সবাই তাই।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নোটিশের জবাব যথাসময়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ