গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৫৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানায় একটি হত্যার চেষ্টা মামলা করা হয়েছে।

হাসনাত আব্দুল্লাহর পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন খন্দকার আল আমিন। মামলা দায়ের করার সময় এনসিপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন৷ সোমবার (৫ মে) বিকেলে মামলাটি রুজু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান। মামালায়  ৪৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ গত ৪ এপ্রিল সোয়া ৬টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে সাদারঙের নোয়া গাড়িতে ঢাকা ফিরছিলেন। গাড়িটির পেছন থেকে অজ্ঞাতনামা আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল যোগে তাকে আক্রমণের উদ্দেশ্য পিছু নেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে  বাসন থানাধীন আউটপাড়া উল্লা সিনেমা হলের দক্ষিণপাশে পৌঁছালে আটককৃত আসামিরা পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহকে হত্যার উদ্দেশ্যে পথরোধ করে৷ তিনি কিছু বোঝার আগের তার গাড়িতে আসামিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ির গ্লাস ভেঙে ক্ষতিসাধন করে৷ এরপর আসামিরা গাড়ির ভাঙা গ্লাসের ভেতর দিয়ে তাকে (হাসনাত)  হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা ও রড দিয়ে আঘাত করে৷ এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। 

আরো পড়ুন:

ঝিনাইদহে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দম্পতি আদালতে

শিশু ধর্ষণ মামলায় জামালপুরে একজনের যাবজ্জীবন

রবিবার (৫ মে) রাত ৭টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে এসে সন্ত্রাসীরা হাসনাতের উপর হামলা করেন। হাসনাত ব্যক্তিগত কাজে গাজীপুরে এসেছিলেন। ফেরার পথে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আসলে কয়েকটি মোটরসাইকেল পেছন হতে এসে তার গাড়িতে হামলা করে। হামলার পরে তার গাড়িতে পেছনে তারা ধাওয়া করে। একপর্যায়ে হাসনাত গাজীপুরের বোর্ডবাজার আইইউটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নেমে গেলে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে। পরে তাকে সেখান হতে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। এ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গাজীপুরে রাতেই বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করে এনসিপি, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষেরা। 

পুলিশ জানান, হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় রাতভর চিরুনী অভিযানে ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে।  তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে। 

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো

ইসলামে সুস্থতার লক্ষ্য হলো আল্লাহর ইবাদতের পথে অবিচল থাকা। যদি কোনো বাধা এই পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে তা দূর করা প্রয়োজন। ইসলাম বলে, মানসিক অসুস্থতা শুধু ক্লিনিক্যাল লক্ষণে সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলাম চরিত্রের ত্রুটি, যেমন অহংকার (কিবর), হিংসা (হাসাদ) বা দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা (হুব্বুদ দুনিয়া), যা ক্লিনিক্যাল মাত্রায় না পৌঁছালেও আধ্যাত্মিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)

কীভাবে চিকিৎসা নেবেন

ইসলামি ঐতিহ্যে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) এবং আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে কাজ করা আধ্যাত্মিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এই প্রশিক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন চাপ মোকাবিলার জন্য মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৌশল শেখায়।

যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫

যখন কেউ ক্লিনিক্যাল মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন, তখন প্রথমে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর আধ্যাত্মিক ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা শুরু হয়, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি (মারদাতিল্লাহ) অর্জন করতে পারে।

এ জন্য ভালো হলো, কোনো আল্লাহভীরু মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যপন্থীদের সান্নিধ্য গ্রহণ করো’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)।

শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

চারটি অভ্যাস আমাদের আত্মাকে পুষ্টি দেয় এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে:

১. চিন্তামূলক অভ্যাস: নামাজের আগে বা পরে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। প্রকৃতির মধ্যে বসে ‘আল্লাহ’ নাম জপ করুন, আল্লাহর প্রতি নিমগ্ন ধ্যান করুন; যাকে ইসলামে মুরাকাবা। এ ছাড়া বই পড়া (বিবলিওথেরাপি) মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মসচেতনতা বাড়ায়। যেমন: গাজার মুসলিমদের দুঃখের কথা ভেবে নিজের দুঃখকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে।

২. সৃজনশীল অভ্যাস: ধাঁধা, আসবাব তৈরি বা অঙ্কনের মতো সৃজনশীল উপকারী কাজ মননশীলতা বাড়ায়। এটি ইসলামের ইহসান (শ্রেষ্ঠত্ব) ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উদ্দেশ্য ও নিয়তের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই কাজগুলো মানসিক শান্তি দেয় এবং বার্নআউট প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুননামাজে দাঁড়িয়ে নানা চিন্তার আনাগোনা২২ জানুয়ারি ২০২৩শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

৩. শারীরিক অভ্যাস: ব্যায়াম, বাগান করা বা তিরন্দাজির মতো কার্যকলাপ আত্মার প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) দেয়। নবীজি (সা.) সাঁতার, ঘোড়দৌড়, এবং তিরন্দাজিকে উৎসাহিত করেছেন, কারণ এগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বাড়ায়। প্রকৃতিতে হাঁটা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগায় এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ গড়ে।

৪. আধ্যাত্মিক অভ্যাস: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আবশ্যক। এরপর রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ), সোমবার ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা রাখা এবং কোরআন তিলাওয়াতের মতো অভ্যাস বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন কয়েকটি পয়সা দিয়ে হলেও সামান্য সাদাকা আত্মার পুষ্টি জোগায়। এই অভ্যাসগুলো আমাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য বাড়ায়।

প্রতিবেশীদের ভূমিকা

মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা শিখি, নির্জনতা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তিনি একজন ব্যক্তির দুঃখ লক্ষ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং দোয়া শিখিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন।

আমাদেরও পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। জুমার নামাজ বা জামাতে নামাজে আমরা একে অপরের খোঁজ নিতে পারি। যদি কেউ দুর্বল মনে হয়, তবে তাদের সমর্থন দিন বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। এই সহানুভূতি ইসলামের শিক্ষার মূল।

 সূত্র: মুসলিম ডটএসজি

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ