হাসনাতের উপর হামলা: থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা
Published: 5th, May 2025 GMT
গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৫৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানায় একটি হত্যার চেষ্টা মামলা করা হয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহর পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন খন্দকার আল আমিন। মামলা দায়ের করার সময় এনসিপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন৷ সোমবার (৫ মে) বিকেলে মামলাটি রুজু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান। মামালায় ৪৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ গত ৪ এপ্রিল সোয়া ৬টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে সাদারঙের নোয়া গাড়িতে ঢাকা ফিরছিলেন। গাড়িটির পেছন থেকে অজ্ঞাতনামা আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল যোগে তাকে আক্রমণের উদ্দেশ্য পিছু নেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাসন থানাধীন আউটপাড়া উল্লা সিনেমা হলের দক্ষিণপাশে পৌঁছালে আটককৃত আসামিরা পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহকে হত্যার উদ্দেশ্যে পথরোধ করে৷ তিনি কিছু বোঝার আগের তার গাড়িতে আসামিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ির গ্লাস ভেঙে ক্ষতিসাধন করে৷ এরপর আসামিরা গাড়ির ভাঙা গ্লাসের ভেতর দিয়ে তাকে (হাসনাত) হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা ও রড দিয়ে আঘাত করে৷ এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দম্পতি আদালতে
শিশু ধর্ষণ মামলায় জামালপুরে একজনের যাবজ্জীবন
রবিবার (৫ মে) রাত ৭টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে এসে সন্ত্রাসীরা হাসনাতের উপর হামলা করেন। হাসনাত ব্যক্তিগত কাজে গাজীপুরে এসেছিলেন। ফেরার পথে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আসলে কয়েকটি মোটরসাইকেল পেছন হতে এসে তার গাড়িতে হামলা করে। হামলার পরে তার গাড়িতে পেছনে তারা ধাওয়া করে। একপর্যায়ে হাসনাত গাজীপুরের বোর্ডবাজার আইইউটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নেমে গেলে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে। পরে তাকে সেখান হতে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। এ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গাজীপুরে রাতেই বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করে এনসিপি, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষেরা।
পুলিশ জানান, হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় রাতভর চিরুনী অভিযানে ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে।
ঢাকা/রেজাউল/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ডলারের দরে নমনীয়তা দেখায়নি সরকার, আইএমএফের সঙ্গে আজ আবার বৈঠক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে– এ মুহূর্তে ডলারের দর বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠক হবে। আজও ইতিবাচক কোনো বার্তা না এলে আগামী ১৯ মে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির চূড়ান্ত সুরাহা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা দেখাতে চাচ্ছে না। এ কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। গতকাল এ নিয়ে আবার ভার্চুয়াল সভা হয়। সোমবারের এ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কবির আহাম্মদ যুক্ত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ডলারের দরে নমনীয়তা না দেখানোর নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দরের তেমন পার্থক্য নেই। আবার বৈধ পথে রেমিট্যান্সে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে ডলারের দরে সামান্য নমনীয়তা দেখালেই দর বাড়তে শুরু করবে। ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।
এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা ছাড় নিয়ে আলোচনার সময়ও আইএমএফের কিস্তির বিষয়ে সমাধানের তাগিদ দেয় সংস্থাটি। গত রোববার ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভায় সংস্থার দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট সহায়তার বিষয়ে আলোচনার সময় এডিবি আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি, আইএমএফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করা হবে না। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো করতে চাই না। আইএমএফের কিস্তি ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই, তাও নিজেদের মতো করে বাস্তবসম্মত বাজেট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী দু’জনেই সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না। তবে সব শর্ত মানা হবে না।
আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার অন্য সব শর্ত মেনে নিলেও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিকের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে আসছে।