নষ্টের পথে রাবার ড্যাম ক্ষুব্ধ সেচবঞ্চিত কৃষক
Published: 8th, May 2025 GMT
রৌমারীতে ১৬ বছরেও রাবার ড্যাম প্রকল্প চালু না হওয়ায় সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। নষ্ট হওয়ার পথে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ব্যাগটি। দীর্ঘ দিনেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের দোষারোপ করছেন কৃষিজীবীরা। অপরিকল্পিতভাবে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সিসি ব্লক ও সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বাঁধে পানি আটকিয়ে জমিতে সেচ দেওয়ার মতো ড্রেনও নির্মাণ করা হয়নি। এসব কারণেই রাবার ড্যামটি চালু করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, যাদুরচর ইউনিয়নের খেওয়ারচর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। এ প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। প্রথম দফায় ১২ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত আরও ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে ফসলি জমিতে। সেতুর দুই পাশের সিসি ব্লক ধসে গেছে। এ কারণে প্রতি বছর বন্যায় ভেঙে যায় পাশের বসতবাড়ি। বাঁধের রাবার ব্যাগ না ফোলানোর কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প এলাকার লালকুড়া খেয়াঘাট থেকে বিক্রিবিল হয়ে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম সেতু পর্যন্ত রয়েছে তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল।
খেওয়ারচর এলাকার কৃষক শহিদুর রহমান জানান, প্রকল্প এলাকায় তাঁর দুই বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। শ্যালো মেশিন ভাড়া নিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এতে তাঁর ব্যয় হবে ১১ হাজার টাকা। রাবার ড্যামটি চালু হলে অল্প খরচে সেচ দিতে পারতেন বলে দাবি তাঁর।
কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনিও দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচ দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। রাবার ড্যাম চালু থাকলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন বিক্রিবিল এলাকার কৃষক রঞ্জু মিয়া। ওই জমিতে সেচ দিতে হয় শ্যালো মেশিন দিয়ে। এতে তাঁর খরচ হবে ১৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি শ্যালো মেশিন ভাড়া দিতে হয় ছয় হাজার টাকা।
প্রকল্প এলাকার কৃষক আব্দুল মালেক মণ্ডল, নজরুল ইসলাম জানান, সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে রাবার ড্যাম প্রকল্পের জন্য, কিন্তু আজও তাদের কাজে আসেনি প্রকল্পটি। সামান্য খরচে জমিতে সেচ দেবেন তারা। এ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু ১৬ বছরেও চালু হচ্ছে না প্রকল্পটি।
রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকার সড়কে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন খেওয়ারচর সেতু এলাকার রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কের অবস্থা বেহাল। বন্যা মৌসুমে কাদা পানি ও শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি জমে থাকে। অনেক কষ্টে গাড়ি চালাতে হয়। যেদিন গাড়ি নষ্ট হয়, সেদিন সারাদিনের রোজগার করা টাকা খরচ হয়ে যায় গাড়ি মেরামতে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
কথা হয় খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি জাফর ইকবাল রিপনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় সদস্য রয়েছেন ৪২০ কৃষক। এ ছাড়া সমিতির বাইরে রয়েছেন ১ হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার কৃষক। এ প্রকল্প চালু করা হলে সেচ সুবিধা পাবেন তারা। তবে প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরীর দাবি, প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩২০ হেক্টর আবাদি জমি। প্রকল্পটি চালু করা হলে ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহার করতে পারবেন কৃষক। অল্প খরচে চাষাবাদ করতে পারবেন তারা। দ্রুত রাবার ড্যাম প্রকল্পটি চালু করার জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এলজিইডির রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী মনছুরুল হকের ভাষ্য, রাবার ড্যাম ২০১৬ সালে সমিতির নীতিমালা অনুসারে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিচালনার ব্যবস্থা করার কথা। যদি কারিগরি ত্রুটি থাকে, তা সরেজমিন পরিদর্শন করে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব র ড য ম প রকল প প রকল প র এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েত, বাহরাইন, আমিরাতের আকাশপথ আবার সচল
কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কুয়েত, বাহরাইন ও আমিরাতের আকাশপথ। পরে এই তিন দেশ তাদের আকাশপথ আবার সচল করেছে। কুয়েত ও বাহরাইনের আকাশপথ আবারো খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশ দুটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর আকাশপথ বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরগুলোর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার কথা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষও।
ইরাক ও কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কথা নিশ্চিত করেছে ইরান। এক বিবৃতিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, ‘ইয়া আবা আব্দুল্লাহ আল হুসেইন’ সাংকেতিক নাম ধারণ করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ‘বাশারাত ফাতেহ’ অপারেশনে কাতারের উদেইদ ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু’ করে ‘বিধ্বংসী ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে।
বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, কাতারের আল উদেইদে অবস্থিত আমেরিকান ঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। গত সপ্তাহে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে, কাতার নিশ্চিত করেছে ইরান থেকে মোট ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র একটি ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে।
হামলার পর ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) বলেছে, হোয়াইট হাউস ও তাদের মিত্রদের প্রতি ইরানের বার্তা ‘সুস্পষ্ট’। ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার উপর কোনো আক্রমণকে ‘খামোখা ছেড়ে দেওয়া হবে না’।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযান সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের নির্দেশে এবং খাতাম আল আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে।
এই বিবৃতির কিছু আগে কাতারের রাজধানী দোহা এবং এর উপকণ্ঠ লুসাইলে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আকাশে প্রজেক্টাইল দেখা গেছে।
সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই সফল অভিযানে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ বোমা ব্যবহার করেছিল তার সমান ছিল। শক্তিশালী ইরানি বাহিনীর হামলায় যে ঘাঁটিটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল তা কাতারের নগর স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকা থেকে অনেক দূরে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তারা ১৪টি বোমা দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এর কয়েক মিনিট আগে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানায়, কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ‘বিশারাত ফাতেহ’ এবং ‘ইয়া আবা আব্দুল্লাহ’ কোড নামে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে।
তাসনিম জানায়, ‘বিশারাত ফাতেহ’ ও ‘ইয়া আবা আবদুল্লাহ’ নামে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় একাধিক ওয়ারহেড বা ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম খাইবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
আইআরজিসির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানাচ্ছে, এই প্রথমবার এই ক্ষেপণাস্ত্র কোনো হামলায় ব্যবহার করা হলো। সেই সঙ্গে হামলায় আধুনিক ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।