ভোরের আলো ফুটতেই বসেছে হাট। কাকডাকা ভোরে অধিকাংশ মানুষের ঘুম না ভাঙলেও সরগরম দুই ঘণ্টার শ্রম বিক্রির হাট। কে কাকে নিবেন, তা নিয়ে চলছে দরদাম। হারভেস্টার মালিকরা ধান কাটতে হাওর অঞ্চলে চলে গেছেন। যে কারণে বেড়েছে শ্রমিকের চাহিদা। এমন কথাই বলেছে ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ।
চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান কাটতে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরপরই এই হাটে নিম্ন আয়ের মানুষের কোলাহল বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দূর থেকে লোকজনের জমায়েত দেখে কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশ মনে হলেও বাস্তবে এটি শ্রম বিক্রির হাট।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরশহরের সাবেক জননী সিনেমা হলের সামনে চৌরাস্তায় বসে শ্রম বিক্রির এ হাট। হাটে আসা শ্রমিকদের কেউ গেরস্থদের কাজ সম্পন্ন করার
চুক্তিতে কাজে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ দৈনিক হাজিরায় কাজে নিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে এই হাটকে সবাই ‘কামলার হাট’ বলেই জানেন।
সরেজমিন ফুলবাড়িয়া পৌর সদরের শ্রমিক হাট ও দেওখোলা বাজারের শ্রমিক হাট ঘুরে দেখা গেছে হাট দুটিতে নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ সদরসহ ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ধানকাটার শ্রমিক জড়ো হয়েছেন। এসব হাটে প্রতিদিন শত শত শ্রমিক বেচাকেনা হয়ে থাকে। সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত শ্রমিকের দাম উঠেছে। বেচাকেনার পর ওই শ্রমিকরা ইজিবাইক অথবা ভ্যানে চড়ে গেরস্থের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন কৃষক।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া গ্রাম থেকে আসা কৃষি শ্রমিক তাইয়েবুর রহমান বলেন, ‘আমগর এলাকায় কাজ কম, ময়নাও (মজুরি) কম। যে কাজ আছে, তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই এই এলাকায় ধানকাটা কাজের সন্ধানে এসেছি। ফুলবাড়িয়া বাজারের পাশেই ভালুকজান এলাকায় এক গেরস্থের বাড়িতে ৮৫০ টাকায় দিন হাজিরায় ধান কাটতে যাচ্ছি। সঙ্গে দুই বেলা খাবার দেবেন তিনি।’
কাজের জন্য আসা সারুটিয়া গ্রামের আব্দুল হক জানান, বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ব্যস্ত সময় এখন। মাঠভরা পাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষকের তোড়জোড় চলছে। তাই শ্রমিকের চাহিদা বেশি। ঝড় বৃষ্টি এলে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১ হাজার টাকার উপরে উঠতে পারে।
ফুলবাড়িয়ার জোরবাড়ীয়া গ্রামের মকবুল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ইচাইল বিলে তার ৮ কাঠা জমির ধান পেকে ঝরে পড়ছে। ধান কাটতে ৮৫০ টাকা দিন হাজিরা ও দুই বেলা খাবারের শর্তে ৪ জন শ্রমিক নিচ্ছেন। সামনে শ্রমিক সংকট হলে আরও বাড়তি টাকা গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, আবাদ করতে অনেক খরচ। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। শ্রমিকের মজুরি যেহেতু ৯০০ টাকা দিতে হচ্ছে। খাবার দিতে হচ্ছে দুই বেলা। পক্ষান্তরে প্রতিমণ ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা। ধানের দামের সমান শ্রমিকের মজুরি। এবারের বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও খরচ অনুসারে দাম না পাওয়ায় ধান আবাদ করে পোষাবে না।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবছর ফুলবাড়িয়া উপজেলার ২১ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। সরকার থেকে ভর্তুকি মুল্যে কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হলেও সাধারণ কৃষক সুফল বুঝতে না পারায় শ্রমিকের ওপর নির্ভর করছে। শ্রমিকের চাহিদা বাড়ায় তাদের মজুরিও বেড়েছে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ঝড় বৃষ্টির কবল থেকে ফসল রক্ষায় দ্রুত ধান কাটা প্রয়োজন। কিছু এলাকায় হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টারে আগ্রহ কম থাকায় এখানকার হারভেস্টার মালিকরা তাদের হারভেস্টার নিয়ে হাওর অঞ্চলে চলে গেছেন। যার কারণেই শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ রমব জ র এল ক য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক–জনবল নিয়োগসহ ৪ দাবিতে ময়মনসিংহ আইএইচটি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ময়মনসিংহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) শিক্ষক ও জনবল নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকালে পাঠ কার্যক্রম বন্ধ রেখে একাডেমিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি করা হয়।
নগরের মাসকান্দা এলাকায় আইএইচটির অবস্থান। কোনো জনবল নিয়োগ না হলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে ১৫৬ শিক্ষার্থী আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান। গত ৪ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি হন। এরপর প্রশাসনিক দায়িত্বে আর কেউ নেই। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষক সপ্তাহে দুই দিন করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
ক্যাম্পাসে আছে একটি চারতলা একাডেমিক ভবন, একটি পুরুষ ও একটি নারী আবাসিক হল ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসন। পুরো চত্বরে ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলময় পরিস্থিতি। একাডেমিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে আছে প্যাকেটবন্দী কিছু জিনিসপত্র। নিচতলার একটি কক্ষকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে কিছু চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে। এ ছাড়া পুরো ভবনে কক্ষ থাকলেও নেই আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগভিত্তিক কোনো শিক্ষক না থাকায় ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ প্রায় ছয় মাস। ছাত্রদের জন্য ব্যবহারিক কোনো যন্ত্রপাতি ও ক্লাসে পর্যাপ্ত আসবাব, যেমন চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ নেই। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আসবাব, বিছানা, চেয়ার ও টেবিল নেই; নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী। ২৫ জুন বেলা ১১টার দিকে ৯ লাখ টাকা বকেয়ার কারণে ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরে অবশ্য আবার সংযোগ দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।
আজ পাঠ কার্যক্রম বর্জন করে সকাল ১০টা থেকে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের চারটি দাবির মধ্যে আছে, অবিলম্বে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত ক্যাম্পাস করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আজ মানববন্ধনের পর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপি ও পরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুফিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন১৫৬ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক–কর্মচারী ৮ ঘণ্টা আগেশিক্ষার্থী দেবী দেবনাথ বলেন, ‘সরকারের আছে আমাদের প্রশ্ন, যদি শিক্ষার সুব্যবস্থা না দিতে পারে, তাহলে এত টাকা খরচ করে, এত সুন্দর ভবন কেন করা হলো। ভর্তি হওয়ার সময় অনেক টাকা খরচ করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা যদি জানতাম, এখানে এসে ক্ষতি হবে, তাহলে ভর্তি হতাম না। রাষ্ট্র কেন আমাদের এত ক্ষতি করল? আমাদের সঙ্গে একপ্রকার দুর্নীতি করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদদীন আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবল কাঠামো অনুমোদন ও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান।