Samakal:
2025-05-10@01:37:53 GMT

দুই ঘণ্টার শ্রম বিক্রির হাট

Published: 9th, May 2025 GMT

দুই ঘণ্টার শ্রম বিক্রির হাট

ভোরের আলো ফুটতেই বসেছে হাট। কাকডাকা ভোরে অধিকাংশ মানুষের ঘুম না ভাঙলেও সরগরম দুই ঘণ্টার শ্রম বিক্রির হাট। কে কাকে নিবেন, তা নিয়ে চলছে দরদাম। হারভেস্টার মালিকরা ধান কাটতে হাওর অঞ্চলে চলে গেছেন। যে কারণে বেড়েছে শ্রমিকের চাহিদা। এমন কথাই বলেছে ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ। 
চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান কাটতে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরপরই এই হাটে নিম্ন আয়ের মানুষের কোলাহল বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দূর থেকে লোকজনের জমায়েত দেখে কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশ মনে হলেও বাস্তবে এটি শ্রম বিক্রির হাট।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরশহরের সাবেক জননী সিনেমা হলের সামনে চৌরাস্তায় বসে শ্রম বিক্রির এ হাট। হাটে আসা শ্রমিকদের কেউ গেরস্থদের কাজ সম্পন্ন করার 
চুক্তিতে কাজে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ দৈনিক হাজিরায় কাজে নিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে এই হাটকে সবাই ‘কামলার হাট’ বলেই জানেন।
সরেজমিন ফুলবাড়িয়া পৌর সদরের শ্রমিক হাট ও দেওখোলা বাজারের শ্রমিক হাট ঘুরে দেখা গেছে হাট দুটিতে নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ সদরসহ ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ধানকাটার শ্রমিক জড়ো হয়েছেন। এসব হাটে প্রতিদিন শত শত শ্রমিক বেচাকেনা হয়ে থাকে। সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত শ্রমিকের দাম উঠেছে। বেচাকেনার পর ওই শ্রমিকরা ইজিবাইক অথবা ভ্যানে চড়ে গেরস্থের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন কৃষক।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া গ্রাম থেকে আসা কৃষি শ্রমিক তাইয়েবুর রহমান বলেন, ‘আমগর এলাকায় কাজ কম, ময়নাও (মজুরি) কম। যে কাজ আছে, তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই এই এলাকায় ধানকাটা কাজের সন্ধানে এসেছি। ফুলবাড়িয়া বাজারের পাশেই ভালুকজান এলাকায় এক গেরস্থের বাড়িতে ৮৫০ টাকায় দিন হাজিরায় ধান কাটতে যাচ্ছি। সঙ্গে দুই বেলা খাবার দেবেন তিনি।’
কাজের জন্য আসা সারুটিয়া গ্রামের আব্দুল হক জানান, বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ব্যস্ত সময় এখন। মাঠভরা পাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষকের তোড়জোড় চলছে। তাই শ্রমিকের চাহিদা বেশি। ঝড় বৃষ্টি এলে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১ হাজার টাকার উপরে উঠতে পারে।
ফুলবাড়িয়ার জোরবাড়ীয়া গ্রামের মকবুল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ইচাইল বিলে তার ৮ কাঠা জমির ধান পেকে ঝরে পড়ছে। ধান কাটতে ৮৫০ টাকা দিন হাজিরা ও দুই বেলা খাবারের শর্তে ৪ জন শ্রমিক নিচ্ছেন। সামনে শ্রমিক সংকট হলে আরও বাড়তি টাকা গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, আবাদ করতে অনেক খরচ। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। শ্রমিকের মজুরি যেহেতু ৯০০ টাকা দিতে হচ্ছে। খাবার দিতে হচ্ছে দুই বেলা। পক্ষান্তরে প্রতিমণ ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা। ধানের দামের সমান শ্রমিকের মজুরি। এবারের বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও খরচ অনুসারে দাম না পাওয়ায় ধান আবাদ করে পোষাবে না।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবছর ফুলবাড়িয়া উপজেলার ২১ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। সরকার থেকে ভর্তুকি মুল্যে কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হলেও সাধারণ কৃষক সুফল বুঝতে না পারায় শ্রমিকের ওপর নির্ভর করছে। শ্রমিকের চাহিদা বাড়ায় তাদের মজুরিও বেড়েছে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ঝড় বৃষ্টির কবল থেকে ফসল রক্ষায় দ্রুত ধান কাটা প্রয়োজন। কিছু এলাকায় হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টারে আগ্রহ কম থাকায় এখানকার হারভেস্টার মালিকরা তাদের হারভেস্টার নিয়ে হাওর অঞ্চলে চলে গেছেন। যার কারণেই শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ রমব জ র এল ক য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহের আ.লীগ নেতাকে পেটানোর ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠানকে কয়েকজন তরুণ একটি কক্ষের মধ্যে পেটাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লেও ঘটনাটি প্রায় এক মাস আগের বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

১৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে তিনজন তরুণের মধ্যে একজন চেয়ারে বসে আছেন। একজনের হাতে কাঠের একটি খাপ ও মুখে মাস্ক পরা। কক্ষের টেবিলটির দিকে ইউসুফ খানের হাত রেখে এক তরুণ চাপ দিয়ে ধরে রেখেছেন। উল্টো দিকে ইউসুফ খানের নিতম্বে কাঠ দিয়ে আঘাত করছেন মুখে মাস্ক পরা তরুণ।

অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জেলা যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। জেলার নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজে শিক্ষকতা করে অবসরে যান। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তিনি নগরের মহারাজা রোডের বাসিন্দা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিওটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান। পরে সেটি আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

মোহিত উর রহমান ফেসবুকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন, ‘অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, একজন নির্বিবাদী মানুষ। বাকিটা আপনাদের বিবেকের কাছে ছেড়ে দিলাম।’

ভিডিওটি আওয়ামী লীগের পেজে পোস্ট করে দাবি করা হয়, ‘চাঁদা না দেওয়ায় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানকে তুলে নিয়ে মারধর ও অমানবিক নির্যাতন করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা।’

আজ দিনভর ইউসুফ খানের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি বারবার কেটে দেন। তবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে পেটানো হচ্ছে, তিনি ইউসুফ খান বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী আজাদ জাহান (শামীম)।

ইউসুফ খান ও তাঁর পরিবারের বরাতে আজাদ জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্টের পর ইউসুফ খান রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ১৬ এপ্রিলের। ইউসুফ খান ধানমন্ডি লেকের কাছে একটি চায়ের দোকানে নিয়মিত চা খেতে যেতেন। তাঁর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার বিষয়টি বুঝে যায় একটি চক্র। ১৬ এপ্রিল বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে ধানমন্ডি লেকের দিকে যাওয়ার পথে ৬-৭টি মোটরসাইকেলে এসে সমন্বয়ক পরিচয়ে একটি দল তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর একটি বাসায় নিয়ে আটকে ব্যাপক মারধর করে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু ইউসুফ খান এত টাকা দিতে পারবেন না জানালে তারা থানায় ফোন করে মামলার ব্যাপারে জানতে চায়। পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার ভয় দেখালে ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন ইউসুফ খান এবং কয়েক দিনের সময় চান। এরপর ইউসুফ খানকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে বিভিন্নজনের সঙ্গে পরামর্শ করে বাসা পরিবর্তন করেন ইউসুফ খান। তিনি বলেন, ‘যে বাসায় ইউসুফ খান থাকতেন, সেখানে গিয়ে চক্রটি তাঁকে না পেয়ে তাঁদের করে রাখা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। বর্তমানে ইউসুফ খান নিরাপদে আছেন।’

ময়মনসিংহে কর্মরত পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাসখানেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া একটি দল ইউসুফ খানকে আটক করেছিল। তখন পুলিশের কাছে ইউসুফ খানের মামলাসংক্রান্ত তথ্যও নেওয়া হয়। মামলা আছে জানানোর পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেনি। হয়তো কোনো সিস্টেম করেছে।’

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম খান বলেন, ইউসুফ খান বিস্ফোরক মামলার আসামি। পুলিশ তাঁকে আটক করেনি। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে তাঁরা কিছু বলতে পারবেন না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তরায় মহাসড়ক অবরোধ
  • মামলার সাক্ষী হওয়ায় যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
  • তীব্র গরমে জনশূন্য ব্যস্ততম নগরী ময়মনসিংহ
  • ময়মনসিংহে মামলা প্রত্যাহার করাতে রাজি না হওয়ায় বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
  • ময়মনসিংহে এলাকাবাসীর সচেতনতায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ট্রেন
  • চাচার ৩ বছর পর ভাতিজাকেও হত্যা
  • ময়মনসিংহের আ.লীগ নেতাকে পেটানোর ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল
  • ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে লাঠিপেটার ভিডিও ভাইরাল
  • রেলওয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল দাবিতে বিক্ষোভ