Risingbd:
2025-05-12@11:28:37 GMT

পঞ্চগড়ে আহত নীলগাই উদ্ধার

Published: 11th, May 2025 GMT

পঞ্চগড়ে আহত নীলগাই উদ্ধার

পঞ্চগড় সদর উপজেলায় একমাসের ব্যবধানে আহত অবস্থায় আরেক একটি বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (১১ মে) উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের সরকারপাড়া এলাকা থেকে নীলগাইটি উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এটি ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত থাকায় নীলগাইটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পঞ্চগড় বনবিভাগে রাখা হয়েছে। সুস্থ হলে গাজীপুরের সাফারি পার্কে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। 

বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, ভারতীয় সীমান্ত থেকে কিছু দুরের গ্রাম সরকার পাড়ার একটি ভূট্টা ক্ষেতে নীলগাইটি দেখতে পায় মরিচ ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকরা। বিষয়টি জানাজানি হলে পঞ্চগড় বন বিভাগে খবর দেয়া হয়। পরে বন বিভাগের কর্মীরা নীলগাইটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। 

আরো পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশাচালকের গলা কাটা লাশ উদ্ধার

বগুড়ায় কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩

নীলগাইটি শিয়াল বা অন্য কোনো জন্তুর আক্রমণের শিকার হয়েছে বলে বন কর্মীরা ধারণা করছেন। আঘাতের কারণে পিছনের বাম পা নাড়াতে পারছে না। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঠিকমত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বন বিভাগে আনার পর প্রাণিসম্পদ কর্মীরা চিকিৎসা দিচ্ছে।

ওই গ্রামের জয়নুল হক জানান, তার ভূট্টা ক্ষেতে প্রাণীটি (নীলগাই) লুকিয়ে ছিল। আহত হওয়ায় বাইরে বের হতে পারছিল না। মরিচ ক্ষেতের শ্রমিকরা দেখতে পেয়ে তাকে খবর দেয়। সেখানে গিয়ে তিনি বন বিভাগকে খবর দেন। তারা এসে ভ্যানে করে নীলগাইটি নিয়ে যায়।

পঞ্চগড় বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ বলেন, নীলগাইটি ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত রয়েছে। বর্তমানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সুস্থ হলে গাজীপুরের সাফারি পার্কে পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, নীলগাই বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী এবং খুব ভিতু। মানুষ দেখলে তারা ভয় পায়। উদ্ধার হওয়া নীলগাইটির বয়স দুই বছর হতে পারে।

গত ৯ এপ্রিল পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা জয়ধরভাঙা থেকে আহত অবস্থায় একটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। সেটিও সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। 

ঢাকা/নাঈম/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ ধ র বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ

‘ফ্যাসিবাদের কর্মপদ্ধতি ও নীতি সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের বিষয়। যে আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করে, বিবেকবিরোধী কাজ করতে মানুষকে বাধ্য করে এবং হিংস্র রক্তাক্ত পথে চলে বা গোপনে অপরাধ সংঘটিত করে, সে আন্দোলনকে আমি সমর্থন করতে পারি এমন উদ্ভট চিন্তা আসার কোনো কারণ নেই। আমি বারবারই বলেছি, পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলো সযত্নে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব লালন করে সারা পৃথিবীর সামনে ভয়াবহ বিপদের সৃষ্টি করেছে।’

সি এফ এন্ড্রুসকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান, লন্ডন, ৫ আগস্ট ১৯২৬

রবীন্দ্রনাথই ছিলেন প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক, যিনি ফ্যাসিবাদের ভয়ানক আগ্রাসী ও বর্বর রূপ উপলব্ধি করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, আন্তর্জাতিকতার সবচেয়ে বড় বিপদ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ। তাই সারা জীবন দৃঢ়তার সঙ্গে অজস্র গান, কবিতা, রচনা, সাহিত্যকীর্তি ও বক্তৃতায় এই দুই সংকটের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন তিনি।

বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে, এর সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক প্রতীক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি শুধু অসাধারণ কবিতা ও গানই লেখেননি; রাখিবন্ধন, পদযাত্রাসহ সবকিছুতেই সক্রিয় ছিলেন। জাতীয়তাবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবেই তিনি তখন ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ বলেই দূরদৃষ্টিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের পূর্বাভাস টের পেয়েছিলেন। সে কারণে সরে দাঁড়িয়েছিলেন স্বদেশি আন্দোলন থেকে। গোরা, ঘরে বাইরে ও চার অধ্যায় উপন্যাসে উগ্র জাতীয়তাবাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘কালান্তর’সহ বিভিন্ন প্রবন্ধে, চিঠিপত্রে, অভিধানে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও কট্টর স্বাজাত্যবোধের পরিণতি তুলে ধরেছেন গোরা (১৯১০) উপন্যাসে। ঘরে বাইরে (১৯১৬) উপন্যাসে দেখালেন সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ কীভাবে সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে। ঘরে বাইরে–এর অন্যতম প্রধান চরিত্র নিখিলেশের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘দেশকে সাদাভাবে সত্যভাবে দেশ বলেই জেনে, মানুষকে মানুষ বলেই শ্রদ্ধা করে, যারা তার সেবা করতে উৎসাহ পায় না—চিৎকার করে মা বলে, দেবী বলে, মন্ত্র পড়ে যাদের কেবল সম্মোহনের দরকার হয়, তাদের সেই ভালোবাসা দেশের প্রতি তেমন নয় যেমন নেশার প্রতি।’

যেখানেই মানুষের সভ্যতা আক্রান্ত হয়েছে, মানবতা বিপর্যস্ত হয়েছে, সেখানেই বিবেকি শিল্পী রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছে। রোমাঁ রোলাঁ, অঁরি বারবুস, আলবার্ট আইনস্টাইনদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিজের দীপ্ত উপস্থিতি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ১৯২৬ সালে তৃতীয়বারের মতো ইতালি সফরের সময় মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রবীন্দ্রনাথের। মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট শাসন সম্পর্কে তখন তিনি অবহিত ছিলেন না। অচিরেই নিজের ভুল বুঝতে পারেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতা ও বিপদ সম্পর্কে অবহিত করে তাঁকে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে রোমাঁ রোলাঁর ভূমিকা প্রশ্নাতীত। রোলাঁকে পাঠানো চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘ইতালি সফরের ফলে আমার মনে যে মলিনতার স্পর্শ লেগেছিল, সম্প্রতি এক মুক্তিস্নানে তা দূর হয়েছে।’ রবীন্দ্রনাথের এই ইউরোপ সফরে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল ফ্যাসিজম ও যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর সচেতনতা। এ ঘটনার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীজুড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্যতম প্রধান কণ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মুসোলিনির স্বরূপ উদ্​ঘাটিত হওয়ার পর তাঁর একটি ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন রবীন্দ্রনাথ।

১৯২৬ সালের পর থেকেই ক্রমান্বয়ে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে উদাত্ত কণ্ঠস্বর শোনা যেতে থাকল রবীন্দ্রনাথের। ১৯২৭ সালে বিখ্যাত ফরাসি মনীষী ও সাম্যবাদী নেতা অঁরি বারবুস ও ফরাসি দার্শনিক রোমাঁ রোলাঁর মধ্যে মত বিনিময়ের পর তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী–গুণীদের কাছে ‘দ্য আপিল টু দ্য ফ্রি স্পিরিটস’ শিরোনামের আবেদনপত্র পাঠান, তাঁদের অনুমোদনের জন্য। এর মূল সুর ছিল ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতার। সেই আবেদনে সমর্থন জানিয়ে লেখা জবাবে দ্বিধাহীনভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান রবীন্দ্রনাথ।

ফ্যাসিস্ট ইতালি ও জার্মানির মদদপুষ্ট জেনারেল ফ্রাঙ্কো ১৯৩৬ সালে স্পেনের গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুরো স্পেনে তার প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে সংগ্রাম শুরু হয়। স্পেনের যুদ্ধে পপুলার ফ্রন্টের হয়ে রণাঙ্গনে শামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীরা। রবীন্দ্রনাথ এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে লেখা সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থে ‘চলতি ছবি’ কবিতায় স্পেনের গৃহযুদ্ধের ছবি ফুটে উঠেছে: ‘যুদ্ধ লাগল স্পেনে;/চলছে দারুণ ভ্রাতৃহত্যা/ শতঘ্নীবাণ হেনে।’

এই সময়েই ‘লিগ এগেইনস্ট ফ্যাসিজম অ্যান্ড ওয়ার’ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এই সংঘের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিরিশের দশকে জাপানের চীন আক্রমণ ও আগ্রাসনের ঘটনা রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর অনুরাগী জাপানি কবি নোগুচির সঙ্গে খোলা চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। জাপানের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা সত্ত্বেও দেশটির হিংস্র ভূমিকার নিন্দা করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

১৯৩৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অমিয় চক্রবর্তীর উদ্দেশে এক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘দেখলুম দূরে বসে ব্যথিত চিত্তে, মহাসাম্রাজ্যশক্তির রাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিষ্ক্রিয় ঔদাসীন্যের সঙ্গে দেখতে লাগল জাপানের করাল দংষ্ট্রাপংক্তির দ্বারা চীনকে খাবলে খাবলে খাওয়া...দেখলুম ঐ স্পর্ধিত সাম্রাজ্যশক্তি নির্বিকারচিত্তে এবিসীনিয়াকে ইটালির হাঁ করা মুখের গহ্বরে তলিয়ে যেতে দেখল, মৈত্রীর নামে সাহায্য করল জর্মনীর বুটের তলায় গুঁড়িয়ে ফেলতে চেকোশ্লোভাকিয়াকে; দেখলুম ননইন্টরভেনশনের কুটিল প্রণালীতে স্পেনের রিপাবলিককে দেউলে করে দিতে—দেখলুম ম্যুনিক প্যাক্টে নতশিরে হিটলরের কাছে একটা অর্থহীন সই সংগ্রহ করে অপরিমিত আনন্দ প্রকাশ করতে। ...এই যুদ্ধে ইংলন্ড, ফ্রান্স জয়ী হোক একান্ত মনে এই কামনা করি। কেননা মানব- ইতিহাসে ফ্যাসিজমের নাৎসিজমের কলঙ্ক প্রলেপ আর সহ্য হয় না।’

আবিসিনিয়া, স্পেন ও চীন রণাঙ্গন—প্রায় সর্বত্রই ফ্যাসিস্টদের আক্রমণের মুখে সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবিরোধী মুক্তিফৌজের পরাজয়ের খবর আসছিল। মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক ফিনল্যান্ড আক্রমণের ঘটনাটিকেও ভালো চোখে দেখেননি। এ ঘটনায় তাঁর হতাশা প্রকাশ পায় ‘অপঘাত’ কবিতায়: ‘টেলিগ্রাম এল সেই ক্ষণে/ ফিনল্যান্ড চূর্ণ হলো সোভিয়েত বোমার বর্ষণে।’ রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত রাশিয়াকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চোখে দেখতেন। ১৯৩০ সালে রাশিয়া ভ্রমণ ছিল তাঁর কাছে ‘এ জন্মের তীর্থ দর্শন’। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ‘অন্য কোনো দেশের মতোই নয়, একেবারে মূলে প্রভেদ। আগাগোড়া সকল মানুষকেই এরা সমান করে জাগিয়ে তুলেছে।’

রবীন্দ্রনাথের আঁকা মুসেলিনির ব্যাঙ্গচিত্র

সম্পর্কিত নিবন্ধ