গুজব, অপপ্রচার, আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
Published: 16th, May 2025 GMT
নারীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, গুজব এবং আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নারী, শ্রমিক, জাতিগত-ধর্মীয়-ভাষাগত ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শুক্রবার বিকেলে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’র ঘোষণাপত্রে এসব বক্তব্য উঠে এসেছে।
দুপুর থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মৈত্রী যাত্রায় অংশ নিতে সংসদ ভবনের সামনের সড়কে জড়ো হন। বিকেল ৩টার দিকে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ছিল বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ মামুন মিয়ার স্ত্রী শারমিন আক্তার, শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামান এবং জয়ন্তী চাকমা।
দাবিগুলো হচ্ছে– অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব ও অপপ্রচার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা নারীদের সমর্থন চায়, নির্বাচনী অঙ্গীকারের মাধ্যমে হোক বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোক– নারীর পূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত মুক্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিক, জাতিগত-ধর্মীয়-ভাষাগত ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়েও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন থেকে প্রার্থীদের অন্তত ৩৩ শতাংশ (ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যার অনুপাতে) নারী হতে হবে। নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন শ্রমজীবী নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ নারীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করে। অন্য সব কমিশনের মতো এ কমিশনের সুপারিশেও ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনার উপাদান। কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত সুপারিশগুলোকে ইচ্ছা করে এড়িয়ে গিয়ে এবং গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ না রেখে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, এখনও এ দেশে কৃষি, মৎস্যজীবী ও গৃহকর্ম পেশায় নারীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। এখনও একই কাজে নারীরা পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পান। দলিত, হরিজন ও আদিবাসী নারীরা জাতিগত নিপীড়নের শিকার হন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। আজকে যখন অধিকারের দাবিতে আমরা সমবেত হয়েছি, তখন বম নারীরা কারাগারে বন্দি। বাংলাদেশের শতকরা ৯৬ ভাগ নারী আজও ভূমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত। এশিয়ায় বাল্যবিয়ের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। প্রতিনিয়ত নারীরা বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, যৌতুকের জন্য হত্যা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা আর যৌন নিপীড়নের মতো গুরুতর অপরাধের মামলায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো বিচার হয় না। অভিন্ন পারিবারিক আইন না থাকায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটি বা জটিলতার কারণে সম্পত্তি, বিয়েবিচ্ছেদ ও সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়ার অধিকার থেকে বহু নারী বঞ্চিত। এখনও যৌনকর্মীদের নাগরিক সুরক্ষা নেই। লিঙ্গীয় বৈচিত্র্যের মানুষদের স্বীকৃতি নেই। অহরহ প্রবাসী নারী শ্রমিক দেশে ফিরছেন লাশ হয়ে। এসব কাঠামোগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের সংঘবদ্ধ লড়াই। আমাদের লক্ষ্য সাম্য ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।
মৈত্রী যাত্রায় সংহতি জানাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আসেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড.
বিকেল সোয়া ৫টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে খামারবাড়ি সড়ক হয়ে ফার্মগেট, তার পর ইন্দিরা রোড হয়ে আবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মৈত্রী যাত্রা করা হয়। এ সময় অংশ নেওয়াদের হাতে বর্ণিল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তারা ‘ধর্ষণ থেকে আজাদি’, ‘নিপীড়ন থেকে আজাদি’, ‘পাহাড় থেকে সমতলে– লড়াই হবে সমান তালে’, ‘নারীর নাগরিক নিরাপত্তা– রাষ্ট্রকেই দিতে হবে’ স্লোগান দেন। এ ধরনের ৩১টি স্লোগান তৈরি করেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
মৈত্রী যাত্রায় অংশ নিতে সোনারগাঁ থেকে এসেছিলেন কবি ও সংস্কৃতিকর্মী শাহেদ কায়েস। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের যাত্রা সমাজে সচেতনতা তৈরি করে। নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ে এবং লিঙ্গবৈষম্যের মতো ইস্যুগুলোর প্রতি জনগণের মনোযোগ আনা সম্ভব হয়।’
সেখানে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘আমরা নারীর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ এখানে এসেছি। সবাইকে এটা জানাতে যে, আমরা আমাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন। সেই অধিকার আদায়ে আমরা একতাবদ্ধ। এখানে আমরা কারও বিষোদ্গার করছি না।’
এনজিওকর্মী নাজিফা রায়দাহ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর ভেবেছিলাম অধিকারের জন্য আমাদের রাস্তায় নামতে হবে না। কিন্তু আমরা ক্রমাগত দেখছি, নারীরা জনসমক্ষে হয়রানি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন। মর্যাদা ও ন্যায্যতার জন্য এবং নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে বিক্ষোভ
আদালতের রায়ের পর নির্বাচন কমিশন থেকে গেজেট হলেও এখনও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারেননি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তাঁকে শপথ পড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো নগর ভবনের সামনে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ কর্মসূচি। দ্রুত শপথের ব্যবস্থা না করলে জনগণ মেয়র হিসেবে শপথ পড়াবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বিক্ষোভ থেকে।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মানুষ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক। সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে এসে জড়ো হতে থাকেন নগর ভবনের সামনে। তারা স্লোগান দেন নগর ভবন এলাকায়। বিক্ষুব্ধদের দাবি, অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, সরকার যদি ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়াতে এখনও গড়িমসি করে, তাইলে এবার আর তাদের শপথ আয়োজনের অপেক্ষা করবেন না। এবার জনগণ নিজেরাই তাদের মেয়রকে শপথ পড়িয়ে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। একদিন আগে বুধবারও ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগরভবনের ভেতরে-বাইরে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ।
২৭ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ পাওয়ার পর এই গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি। এর আগে ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন ইশরাক।