সানজিদা ইসলাম মাইসুনের বয়স ৩ বছর। সারাদিন স্বাভাবিক ছিল তার শারীরিক অবস্থা। প্রতিদিনের মতো খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মধ্যরাতে বিছানায় তার মধ্যে অস্থিরতা দেখতে পান মা তন্বি ইসলাম। দেখেন ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। জ্বর ১০৪ ডিগ্রির ওপরে। সকালে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ালেও কমেনি জ্বর। চার দিনেও জ্বর না কমায় মাইসুনকে ভর্তি করাতে হয় হাসপাতালে।

মাইসুনের মতো তীব্র জ্বরে হঠাৎ কাবু হচ্ছে অনেক শিশু। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসক চেম্বারের তথ্য বলছে, কিছুদিন ধরে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের ৬০ শতাংশই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ২ থেকে ৮ বছর বয়সীই বেশি। চার মাস থেকে এক বছরের শিশুও রয়েছে। একই পরিবারে আক্রান্ত হচ্ছে একাধিক শিশু। অনেককে ভর্তি হতে হচ্ছে হাসপাতালে। শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় এক বিছনায় একাধিক শিশুকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। 

কয়েকদিন জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কয়েক গুণ হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সূত্র বলছে, শিশু ওয়ার্ডের ৮০ শয্যার বিপরীতে কয়েকদিন ধরে রোগী ভর্তি থাকছে ২০০ জনের ওপরে। গত ১৮ মে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৭২ রোগী ভর্তি ছিল। সেদিন নতুন রোগী ভর্তি হয় ৬৭ জন। ১৯ মে রোগী ভর্তি ছিল ২৪১, নতুন রোগী ৫৮ জন। ১৭ মে ২৪০ রোগী ভর্তি ছিল। ২১ মে এক দিনেই রোগী ভর্তি ছিল ২১৬ জন। ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ও নতুন ভর্তি হওয়া শিশুর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই জ্বর নিয়ে এসেছে বলে জানান চিকিৎসকরা। জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন, সিএসসিআর, ম্যাক্স, ন্যাশনাল, ডেলটাসহ প্রায় সব হাসপাতালে। চিকিৎসকের চেম্বারে আসা ৫০ থেকে ৬০ জনের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত মিলছে ৩৫ জনের ওপরে। 

চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চকবাজারের বাসিন্দা টিংকু দাশ বলেন, ‘আমার শিশুর জ্বরের মাত্রা অনেক বেশি। আছে কাশিও। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে।’ একই শয্যায় চিকিৎসাধীন ছয় মাসের অংকনের দাদি সবিতা রানী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ওর জ্বর থাকছে ১০৩-এর ওপরে। চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন।’ 

ওয়ার্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সোমা দাশ। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ভর্তি হওয়াদের বেশির ভাগ শিশু জ্বর নিয়ে আসছে। যাদের পরে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা মিলছে।’ 

শিশু বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা.

মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এক শয্যায় একাধিক শিশুকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। শিশুর মধ্যে সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই চিকিৎসক দেখাতে হবে।’

পার্কভিউ হাসপাতালের তৃতীয় ফ্লোরে বসা প্রত্যেক শিশু বিশেষজ্ঞের চেম্বারের সামনে শিশুদের নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অভিভাবককে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত। এদের কেউ চার দিন ধরে, আবার কারও জ্বর এক সপ্তাহ। এদেরই একজন খাজা রোডের বাসিন্দা জিন্নাত আরা। সাড়ে তিন বছরের মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে আসা জিন্নাত বলেন, ‘চার দিন ধরে মেয়েটি তীব্র জ্বরে ভুগছে। দিনের বেলায় কিছুটা কম থাকলেও রাতে জ্বরের তাপমাত্রা উঠছে ১০৩-এর ওপরে। কিছু খাচ্ছেও না।’ 

চট্টগ্রামের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, দিনে গরমের তীব্রতা বেশি থাকছে ও রাতে কিংবা ভোরের দিকে বৃষ্টির কারণে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশের এমন তারতম্য শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের ঘরের বাইরে না নেওয়া উচিত।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ব র জ বর চ ক ৎসক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

স্ক্র্যাপ জাহাজের টাংকিতে জ্ঞান হারালেন চার শ্রমিক, একজনের মৃত্যু

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজের (পুরাতন জাহাজ) পোড়া তেলের ডিপোতে কাজ করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন চার শ্রমিক। খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়। আহতরা হলেন, আরিফ, সুলতান, পেয়ারু, মীর আহমেদ। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে দিকে ফৌজদারহাট ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন সংলগ্ন সিডিএ রোডের মুখে জামাল কোম্পানির কালো তেলের ডিপোতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ সোহেল রানা। 

কুমিরা ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, জামাল কোম্পানির স্ক্র্যাপ জাহাজের কালো তেলের ডিপোতে পুরাতন একটি টাংকিতে ঢোকেন একজন শ্রমিক। এ সময় ওই শ্রমিক কালো তেলের টাংকির ভেতরে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে আটকা পড়লে আরও একজন শ্রমিক তাকে উদ্ধার করতে টাংকির ভেতর নামেন। এভাবে একে একে চারজন শ্রমিক টাংকির ভেতর অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে আটকা পড়েন।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা কুমিরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে একটি টিম গিয়ে চারজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

কালো তেলের ডিপোর মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, আমি বাইরে আছি। শুনেছি কয়জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ডিপোর ভেতরে একটি টাংকির ভেভরে কাজ করতে গিয়ে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ভেতরে আটকা পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় চার শ্রমিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সোহেল রানা বলেন, আহত চারজনের মধ্যে একজন মারা গেছেন। তার নাম জানা যায়নি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ