হাতির আক্রমণে মৃত্যু: উপার্জনক্ষম দুজনকে হারিয়ে দিশেহারা দুটি পরিবার
Published: 24th, May 2025 GMT
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে কাংশা ইউনিয়নের দরবেশতলা ও বাঁকাকুড়া এলাকায় এ দুটি ঘটনা ঘটে। নিহত দুজনই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁদের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দুটি পরিবার।
নিহত ব্যক্তিদের একজন আজিজুর রহমান (৪২) উপজেলার গান্ধিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন ভ্যানচালক। তাঁর আয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তানের সংসার চলত। অন্যদিকে নিহত এফিলিস মারাক (৪৫) বড় গজনি অবকাশ কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর উপার্জনেই চলত স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার।
ঘটনার রাতে আজিজুর রহমান গজনি দরবেশতলা ঝুরা এলাকা থেকে বালু আনতে গিয়েছিলেন। এ সময় একদল বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হন তিনি। স্থানীয় লোকজন মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়িয়ে তাঁকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দিকে সাড়ে ১০টার দিকে বাঁকাকুড়ার কাঁচা রাস্তা দিয়ে তিনজনকে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন এফিলিস মারাক। পথে হাতির দল তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। অন্য তিনজন পালিয়ে গেলেও এফিলিসকে হাতির একটি দল ধরে ফেলে। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
আজিজুরের পরিবার জানায়, তিনি প্রতিদিন ৩০০–৪০০ টাকা আয় করতেন। বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলেও ছোট তিন ছেলে এখনো স্কুলে পড়ে। এফিলিসের ছেলে-মেয়েও ডিগ্রি পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। দুই পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল।
আজিজুরের স্ত্রী শিউলী আক্তার বলেন, খুব কষ্টে তাঁদের সংসার চলত। হাতির আক্রমণে তাঁর স্বামী মারা যাওয়ায় পরিবারে আয় করার মতো আর কেউ নেই। বাড়িভিটা ছাড়া তাঁদের আর কোনো জমিজমাও নেই। ভবিষ্যতে সন্তানদের নিয়ে তিনি কীভাবে চলবেন, তা তাঁর জানা নেই।
এফিলিসের স্ত্রী প্রীতিনাস হাদিমা বলেন, ‘দিনমজুরি কাম কইরা যে টাকাপয়সা পাইত, তা দিয়ে কোনোরহম সংসার চলত। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর অহন ছেলেমেয়েরে লইয়া কেমনে চলমু? সংসারই–বা কেমনে চলব? ছেলেমেয়ে লেখাপড়া খরচ কেমনে জোগাড় অইব?’
কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.
বন বিভাগের গজনি বিট কর্মকর্তা মো. সালেহিন নেওয়াজ জানান, ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই প্রতিটি পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে মোট ছয় লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আজ জ র র এফ ল স পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫