ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় অপারেশন ডেভিল হান্টে রুবেল শেখ (৪০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার আকোটরচর ইউনিয়নের তালতলা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পুলিশ। তিনি ওই ইউনিয়নের ছোনপঁচা গ্রামের শেখ মান্নানের ছেলে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এক অসহায় পরিবারের ভিটেমাটি জোরপূর্বক দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, তালতলা গ্রামের সত্তোর্ধ্ব শেখ আব্দুর রউফ নামে এক দারিদ্র কৃষকের বসতবাড়িসহ ১৬ শতাংশ জমি জোরপূর্বক লিখে দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকিসহ চাপ সৃষ্টি করেন রুবেল শেখ। এমনকি তার বসতবাড়ির ওপর জোরপূর্বক ঘরও তুলেন। পরে থানা পুলিশ খবর পেয়ে বাঁধা দেন। এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার সালিশ বসলেও তা অমান্য করে আসছিলেন তিনি। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী শেখ আব্দুর রউফের স্ত্রী রাজিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামীর এই জমিটুকুই তার শেষ সম্বল। কিন্তু এই জমি নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে রুবেল। লিখে না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে।

তিনি জানান, তার স্বামী অন্যত্র যাওয়ার জন্য জমিজমা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এক পর্যায়ে রুবেলের সঙ্গে ২৭ লাখ টাকায় বিক্রির কথা হয়। এরমাঝে রুবেল ১৮ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা না দিয়েই জমি লিখে দিতে বলে। পরবর্তীতে ১৬ লাখ টাকা ফেরত নিয়ে যায় এবং দুই লাখ টাকা রেখে দিয়ে বলেন, পরে নিবেন। 

রাজিয়া বেগম আরও বলেন, আমরা ভিটেমাটি বিক্রি করে এই টাকা দিয়েই অন্য এলাকায় জমি কেনার জন্য বায়না দিয়েছিলাম। রুবেল সম্পূর্ণ টাকা না দেওয়ায় আমারাও তাদের টাকা দিতে পারিনি। এর ফলে তারাও টাকা ফেরত দিয়ে দেন। এরপর বাকি দুই লাখ টাকা ফেরত না নিয়েই সব জমি লিখে দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেন। এরপর জোর করে ঘরও তুলেন। থানার ওসি মীমাংসা করে দিলেও রুবেল কারও কথা মানেনি। তিনি কয়েকদিন ধরে আমার স্বামীকে মেরে ফেলার জন্য খুঁজছিলেন এবং বাড়ির পাশে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আসছিল। 

রুবেলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

রজিবউল্লাহ খান বলেন, রুবেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে ডেভিল হান্ট অভিযানে তাকে আটক করা হয় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য় র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সুরমা ও কুশিয়ারায় ভাঙন ঝুঁকিতে রাস্তাঘাট-স্থাপনা

সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মৌসুমি বর্ষণ শুরুর পর ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী একটি রাস্তার ওপর নির্মিত সেতু ভেঙে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে সিলেটের বালাগঞ্জের সুলতানপুর-খসরুপুর সড়ক। 
শুধু রাস্তা ও বসতবাড়ি নয়, নগরীর দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত যমুনা অয়েলের ডিপো পড়েছে সুরমা নদীর ভাঙনের মুখে। সম্প্রতি ডিপোর উত্তরের দেয়ালঘেঁষে দেড়শ ফুট জায়গা ভেঙে পড়েছে নদীতে। দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডিপোটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুই তীরে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও সিলেট সদরের শতাধিক গ্রামের অবস্থান। 
সোমবার দুটি নদীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কারও বসতঘর ভাঙনের মুখে, আবার কারও ঘর বিলীন হয়ে গেছে। কোথাও রাস্তা ও সেতু ভেঙে গেছে। বালাগঞ্জের ফাজিলপুর এলাকায় রাস্তা ও সেতু দেবে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার লোক। স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর মিয়া জানান, দুই বছর আগে কুশিয়ারায় তাঁর বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে যেখানে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন সেটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। 
মনসুর মিয়ার মতো কুশিয়ারার ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়েছেন হামছাপুর গ্রামের ৩০-৩৫টি পরিবার। তাদের মধ্যে ৩টি পরিবার এক বছর ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে ও অন্যরা স্বজনদের বাড়িতে বাস করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া জানান, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষ চলাচলের রাস্তা কুশিয়ারা ডাইক সম্প্রতি ভেঙে গেছে। বর্ষার আগে মেরামত না করলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। 
এদিকে কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার উজান গঙ্গাপুর, সুলতানপুর, মানিককোনা, মল্লিকপুরসহ কয়েকটি তীরবর্তী গ্রাম ভাঙনের মুখে রয়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে এসব এলাকার একাধিক স্থানে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। 
জকিগঞ্জে কুশিয়ারার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বড়চালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাগলাজুর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 
বড়চালিয়া গ্রামের নিলুকান্ত পাল ও সুভাষ পাল জানান, ভাঙনে তিনবার বসতঘর সরাতে হয়েছে। বর্তমানে বসতভিটাও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 
সুপ্রাকান্দি গ্রামের শরীফ উদ্দিন জানান, তাদের বসতবাড়িসহ প্রায় ৩ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। 
এদিকে সুরমা নদীর তীরবর্তী সিলেট পশ্চিম সদর উপজেলার চানপুর, যোগীরগাঁও, লালারগাঁও, তালুকপাড়া, খালপাড়, মিরেরগাঁও, ফতেহপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে এসব গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। 
কান্দিগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম দর্শা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, অনেক বছর আগে পশ্চিম দর্শা এলাকায় নদীর এক কিলোমিটার ব্লক স্থাপন করা হয়েছিল। সেই এলাকা রক্ষা পেলেও বাকি এলাকা এখন ভাঙনকবলিত। 
কান্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মনাফ বলেন, তাঁর ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম সুরমার তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের মুখে। ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করেও লাভ হয়নি। 
সুরমা তীরবর্তী গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়ন, বাদেপাশা ইউনিয়ন, শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন, ভাদেশ্বর ইউনিয়ন ও বুধবারীবাজার ইউনিয়নের অনেক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে বাঘা মাদ্রাসা, এসসি একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আছিরগঞ্জ বাজার, শরিফগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, মিরগঞ্জ বাজার হুমকির মুখে রয়েছে। 
কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বিয়ানীবাজারের দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতঘর, হাট-বাজার, চলাচলের রাস্তা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। 
বালু উত্তোলনে বন্ধে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর গ্রামবাসী ও স্থানীয় কওমি মাদ্রাসা পৃথকভাবে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। ফাঁড়ির বাজার এলাকায় গত রোববার মানববন্ধন করেন এলাকার লোকজন ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সমকালকে জানান, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গত বছর চারটি প্যাকেজে ১ দশমিক ৮০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কুশিয়ারার কয়েকটি এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ চলছে। এছাড়া গত বছর বন্যা-পরববর্তী সমীক্ষার পর ১৩শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুরে থানা থেকে লুট হওয়া শটগান উদ্ধার
  • সুরমা ও কুশিয়ারায় ভাঙন ঝুঁকিতে রাস্তাঘাট-স্থাপনা