রায়পুরায় ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছেলের শাবলের আঘাতে বাবার মৃত্যু
Published: 27th, May 2025 GMT
নরসিংদী রায়পুরায় ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছেলের শাবলের আঘাতে কবির হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে ছেলে মনির হোসেনকে (২৫) আটক করে পুলিশে খবর দেন এলাকাবাসী। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের পর অভিযুক্ত ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রায়পুরার মির্জানগর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কবির হোসেন (৫০) কৃষক ছিলেন। আজ শনিবার সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রবাস থেকে ফেরার পর মনির হোসেনের স্ত্রী সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে যান। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো আচরণ করতেন মনির। কখনো কখনো ভালো আচরণ করতেন। তাঁর মা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। মনিরকে নিয়ে একটি দোচালা ঘরে বসবাস করতেন বাবা কবির হোসেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে ঘুম থেকে উঠে মনির হোসেন ঘুমন্ত বাবা কবির হোসেনের বাঁ হাতে শাবল দিয়ে কোপ দেন। জেগে উঠে ছেলের হাতে শাবল আর নিজের রক্তাক্ত হাত দেখে কবির দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। মনির তাঁর পিছু নেন। পাশের একটি জমিতে পৌঁছানোর পর কবির মাটিতে পড়ে যান। তখন মনির শাবল দিয়ে তাঁর মাথায় তিনটি আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, কবিরকে হত্যার সময় খ্যাপাটে অবস্থায় থাকা মনিরকে বাধা দেওয়ার সাহস পাননি তাঁরা। পরে লোকজন জড়ো করে মনিরকে ধরে সারা রাত আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে আজ সকাল ১০টার দিকে রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক মো.
নিহত কবিরের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় মনির। প্রতিবেশীদের ভাষ্য, এক বছর আগে সৌদি আরব থেকে বাড়িতে ফেরার পরই মনিরের মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। ছয় মাস আগে দাদি, ফুফু ও চাচাতো বোনকে কুপিয়ে জখম করেন মনির। ওই ঘটনায় করা মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। পরে জামিনে ছাড়া পান। এর পর থেকে বাবা কবির হোসেন ছেলের দেখাশোনা করতেন।
রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ মিয়া জানান, প্রবাসফেরত ছেলের শাবলের কোপে কবির হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মাথা ও হাতে চারটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত মনিরকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কি না, তা পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ বল র র পর করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’