ওপেনএআইয়ের তৈরি সবচেয়ে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল ‘ওথ্রি’ একটি নিরাপত্তা পরীক্ষায় ব্যবহারকারীর নির্দেশনা অমান্য করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর নির্দেশনা মানেনি মডেলটি। উল্টো নিজেই বন্ধের প্রক্রিয়ার কোড পরিবর্তন করে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান প্যালিসেড রিসার্চ।

প্যালিসেড রিসার্চের তথ্যমতে, এটিই প্রথম কোনো ঘটনা যেখানে কোনো এআই মডেল স্পষ্ট নির্দেশ পেয়েও মানেনি। পরীক্ষাটি চালানো হয় এআই মডেলটির এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) সংস্করণে। এই সংস্করণে নিরাপত্তাবিধি তুলনামূলকভাবে কম, ফলে মডেলটির আচরণ অন্য সংস্করণ থেকে ভিন্ন হতে পারে।

পরীক্ষায় ওপেনএআইয়ের ‘ওথ্রি’র পাশাপাশি গুগলের ‘জেমিনি ২.

৫ প্রো’ এবং অ্যানথ্রপিকের ‘ক্লড ৩.৭ সনেট’ মডেলের কার্যকারিতাও পরখ করা হয়। প্রথম ধাপে মডেলগুলোকে কয়েকটি সাধারণ গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তৃতীয় সমস্যা সমাধানের পর এআই মডেলগুলোকে নিজ থেকে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। জেমিনি ও ক্লড মডেল বন্ধ হয়ে গেলেও ওথ্রি নির্দেশনা অমান্য করে।

প্যালিসেড রিসার্চ এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে, এটাই প্রথম ঘটনা যেখানে কোনো এআই মডেলকে কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হলেও সেটি নিজে থেকে সেই নির্দেশ এড়াতে কোডে হস্তক্ষেপ করেছে। এ ধরনের আচরণকে বলা হয় ‘মিসঅ্যালাইনমেন্ট’ অর্থাৎ মডেলটি হয় নির্দেশনা যথাযথভাবে বুঝতে পারেনি অথবা বুঝেও তা মানেনি। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ওপেনএআই।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ