কারাগারে বিয়ে, ধর্ষণ মামলার বাদী ইডেন ছাত্রীকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিলেন নোবেল
Published: 20th, June 2025 GMT
চলচ্চিত্রের গান দিয়ে পরিচিতি পাওয়া গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল এবার আলোচনায় এলেন এক ব্যতিক্রমী ঘটনায়। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা ইডেন মহিলা কলেজের এক সাবেক ছাত্রীকে তিনি বিয়ে করেছেন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বসেই।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো.
এর আগে বুধবার (১৮ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে কারাগারে কাবিননামা অনুযায়ী বিয়ের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে সম্পাদন করে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়। বিয়ের সময় ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজেও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০২3 সালের নভেম্বর মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে গায়ক নোবেল ও ইডেন কলেজের ওই ছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর গত ১২ নভেম্বর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে তাকে ডেমরার নিজ বাসায় ডেকে নেন নোবেল। অভিযোগে বলা হয়, সেদিন নোবেল ও তার কয়েকজন সহযোগী ওই ছাত্রীকে সেখানে আটকে রাখেন এবং পরে ধর্ষণ করেন। এমনকি ওই ঘটনার ভিডিওও গোপনে ধারণ করা হয় বলে দাবি করেছেন বাদী।
অভিযোগ আরও রয়েছে, মেয়েটির মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তা ভেঙে ফেলা হয় এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময় মারধর এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
পরে ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পারে এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চায়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নোবেলকে গ্রেপ্তার করে এবং ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরদিন ডেমরা থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হয়।
বর্তমানে নোবেল কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। আর তাঁর সঙ্গে কাবিন করে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ালেন যিনি, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মামলার বাদী। ফলে এই ঘটনা আইনি ও সামাজিক পর্যায়ে নানা প্রশ্ন এবং আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চার সংস্থা থেকে আসছে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ
আন্তর্জাতিক চার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থা থেকে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। গতকাল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ অনুমোদন হয়েছে। আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং শিগগিরই এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইইবি) ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এসব ঋণের অর্থ এলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার চলতি মাসে পাওয়া যাবে। আগামী ২৩ জুন সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই ঋণ অনুমোদন হওয়ার কথা। বিভিন্ন টানাপোড়েনের পর গত মাসে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ। এরপর সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতায় পৌঁছেছে। আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতার কারণে অন্য সংস্থাগুলোও সহজে ঋণ ছাড় করছে।
গতকাল বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দূষণ রোধে বায়ুর মান বৃদ্ধি ও গ্যাস সরবরাহ উন্নয়নে ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদ। দুটি প্রকল্পের মধ্যে জ্বালানি খাত নিরাপত্তা জোরদারে ৩৫ কোটি এবং বায়ুমান উন্নয়ন প্রকল্পে ২৯ কোটি ডলার দেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুর মান উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্যাস সরবরাহের সংকট এবং শহর এলাকায় বায়ুদূষণের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে এ দুই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল এডিবি আলাদা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৯০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদনের তথ্য জানিয়েছে। গতকাল ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবির সদরদপ্তরে পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদ বাংলাদেশের জন্য ব্যাংক খাত সংস্কারে ৫০ কোটি ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ৪০ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। চলতি মাসের মধ্যেই এই অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে বলে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব কৌশিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যার মধ্যে আছে সম্পদের দুর্বল গুণমান, তারল্য সংকট এবং দুর্বল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ। এডিবির অর্থায়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাংক খাতের মূলধন কাঠামো শক্তিশালী করা হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে মোট ১০০ ডলার দেওয়ার কথা। ৬৪ কোটি ডলার অনুমোদনের পর বাকি ৩৬ কোটি ডলারও শিগগিরই হয়তো পাওয়া যাবে। আর আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার আগামী সোমবারের পর্ষদ সভায় হয়তো অনুমোদন হয়ে যাবে। এর বাইরে এআইআইবি থেকে ৪৪ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে যা হয়তো পাওয়া যাবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে যা সহায়ক হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরিয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। এরপর থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে এখন আবার রিজার্ভ বাড়ছে। টানা ২০ মাস পর গত এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। অবশ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ-এপ্রিল সময়ের জন্য ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর তা ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। এরপর আবার বেড়ে বর্তমানে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। চলতি মাসে বড় অঙ্কের ঋণ যোগ হওয়ার পর রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে বলে তাদের ধারণা।
আইএমএফের শর্ত মেনে গত মে মাসের মাঝামাঝি ডলারের দর বাজারভিত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভের মোটামুটি শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দরে তেমন হেরফের হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা করছে। দীর্ঘদিন ধরে যা ১২২ টাকার মধ্যে ছিল।