বিদেশে নেওয়ার কথা বলে আবাসিক হোটেলে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ
Published: 4th, February 2025 GMT
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় একটি আবাসিক হোটেলে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতের এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয়ে ২০ জনকে আসামি করে কাফরুল থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী।
ধর্ষণের শিকার নারী নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানার কর্মী। তার স্বজনদের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে মালয়েশিয়ার ভিসা দেওয়ার কথা বলে ওই নারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন সাগর নামে এক ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ঘুরিয়েও তাকে বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হয় সাগর। টাকা ফেরত চাইলে সে নানা তালবাহানা শুরু করে। এরপর আবারও বিদেশে নেওয়ার কথা বলে তাকে সোমবার রাজধানীতে ডাকে সাগর। এরপর শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন গোল্ডেন আবাসিক হোটেলে নিয়ে আটকে রেখে ৮-১০ জন মিলে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়।
পুলিশ জানায়, অভিযোগ পেয়ে ওই হোটেলে অভিযান চালানো হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় গ্রিল কেটে ও দরজা ভেঙে অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তি ও ভবনের কেয়ারটেকার বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে ভবনটিতে দীর্ঘদিন ধরেই অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে।
কাফরুল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রুবেল মল্লিক বলেন, ভুক্তভোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ধর্ষণের ঘটনায় কাফরুল থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে মদ ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে ১৩ নারী-পুরুষকে আটক করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেবি শার্ক গান বানিয়ে কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
যাদের বাসায় এখন ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁরা জানেন, গত এক দশকে সেই শিশুরা কোন কোন ছড়া/গান শুনেছে। এ প্রজন্ম ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। ফলে এই বয়সী শিশুদের জন্য কনটেন্ট বানিয়ে অনেকেই বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
বিষয়টি হলো ‘বেবি শার্ক’ নামের ৯০ সেকেন্ডের এক শিশুতোষ গানের ভিডিও এখন ইউটিউবের সর্বাধিক দেখা কনটেন্ট, ভিউ ছাড়িয়েছে ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি। ২০২০ সালেই এটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও কনটেন্টের স্বীকৃতি পায়। এরপর তা থেমে থাকেনি—অগ্রগতি চলছেই।
ফলে এই ভিডিও যারা বানিয়েছে, অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পিংকফংয়ের বাজার মূলধন ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে পিংকফংয়ের লেনদেন শুরু হয়। প্রথম দিনেই শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এর মূল কারণ যে এই বেবি শার্ক ডু ডু ডু, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খবর বিবিসি।
এর জনপ্রিয়তা কেমন, সে বিষয়ক এক বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যাক। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক মা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর পর বা অনেক ক্ষেত্রে কাজের সময় তাঁর কানে যেন এক শিশুতোষ ছড়াগান বাজতে থাকে। সেটি হলো, বেবি শার্ক ডু ডু ডু, বেবি শার্ক। যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট এবং ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন, যিনি এই গান শোনেননি। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট আছে, সেই বাড়ির ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা এই গান শোনেনি, এমন নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এই ভিডিও দুনিয়াজোড়া ঠিক কেমন আলোড়ন তুলবে, সেটি নিশ্চিতভাবেই কেউ আগে ভাবেননি। ২০১৬ সালের জুনে ভিডিওটি প্রকাশের অনুমতি দেন পিংকফংয়ের প্রধান নির্বাহী কিম মিন-সিওক। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবিনি, এটি অন্য কনটেন্ট থেকে আলাদা কিছু হবে। পরে বুঝেছি, এটি আমাদের বৈশ্বিক যাত্রাপথের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
২০১০ সালে ‘স্মার্টস্টাডি’ নামে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মূলত ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করত। মাত্র তিনজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করে পরবর্তীকালে ছোট শিশুদের দিকে মনোযোগ দিয়ে কনটেন্টে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। একপর্যায়ে কর্মীর সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়। এরপর তারা সহজ, শিক্ষাভিত্তিক গেম ও কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তখনই বেবি শার্কের বাজার মাত করে।
ব্রিটিশ মিডিয়া বিশ্লেষক কেভিন চিউর মতে, বেবি শার্ক গানটি ‘শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়, যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সম্ভবত বিরক্তিকর। তবে কিম মিন-সিওকও এই গানে আসক্তি ধরানোর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, ‘এটি কে-পপ গানের মতো—খুব দ্রুতলয়ের ও ছন্দময়। ফলে আসক্তি তৈরি করতে পারে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিশুদের মধে৵ এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। অনলাইনে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বেবি শার্ক গানটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিওর স্বীকৃতি অর্জন করে। এমনও হয়েছে, ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রথম দিকে এই কোম্পানি যত আয় করেছে, তার প্রায় অর্ধেক এসেছে এই গান থেকে। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন কনটেন্ট তো তারা বানিয়েছে।
একটি গাননির্ভর নয়২০২২ সাল থেকে পিংকফং কোম্পানির অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন বেবেফিন ও সিলুকেরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে কোরিয়া ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মিন জাং কিম বলেন, কোম্পানিকে প্রমাণ করতে হবে, এই সফলতা শুধু বেবি শার্কের ওপর নির্ভরশীল নয়।
কিম মিন-সিওকের জোর দাবি, বেবি শার্ক ছাড়া অন্যান্য কনটেন্ট থেকেও তাদের ব্যবসা বাড়ছে। বর্তমানে পিংকফংয়ের আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসছে বেবি শার্ক থেকে। বেবেফিন থেকে আসছে কোম্পানির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ।
স্টক মার্কেটে অভিষেক থেকে প্রায় ৫২ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে পিংকফং। কিম জানান, এই অর্থ কনটেন্ট ও চরিত্রের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকতে চায় না তারা। মানুষের পছন্দ কী, সে বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে প্রযুক্তিভিত্তিক কনটেন্ট বানাতে চায় তারা। কিম বলেন, অনেক নির্মাতা সারা জীবন ধরে যে স্বপ্ন দেখেন, পিংকফং এরই মধ্যে তা অর্জন করে ফেলেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে হবে, তারা কেবল একটি হিট গান–নির্ভর কোম্পানি নয়।
আইনি চ্যালেঞ্জপিংকফংয়ের যাত্রাপথ একেবারে কণ্টকমুক্ত ছিল না। ২০১৯ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগ—এক মার্কিন সংগীতজ্ঞের সুর তারা নকল করেছে; কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। আদালত বলেন, জনপরিসরে প্রচলিত লোকগান থেকে তারা সুর নিয়েছে।
আদালতের এই রায়ে তারা জোর পায়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলো।