পানিকেও ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল
Published: 10th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিশুদ্ধ পানির স্থাপনা ধ্বংস করছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের এমনটা করার মূল উদ্দেশ্য, ফিলিস্তিনিরা যেন বিশুদ্ধ পানি না পায়। এতে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে। ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলছেন, ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পানি নীরবে প্রাণঘাতী বোমা হিসেবে কাজ করছে।
তুরস্কের সংবাদ সংস্থাটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস টু সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশনের বিশেষ প্রতিবেদক পেদ্রো আরোজো-আগুদু বলেন, বিশুদ্ধ পানি বন্ধ করা তাদের ওপর ভয়াবহ নীরব বোমা ফেলার সমতুল্য।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আটকা পড়েছে ২১ লাখ ফিলিস্তিনি। তারা বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে। পেদ্রো বলেন, গাজার ৭০ শতাংশ পানির স্থাপনা ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে পানি পাচ্ছেন না ফিলিস্তিনিরা। তারা যে পানি পাচ্ছে, তার বেশির ভাগই দূষিত।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় পানি, খাবার, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢুকতে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। বিদ্যুতের অভাবে কূপ বা ভূগর্ভ থেকে পানি তুলতে পারছে না ফিলিস্তিনিরা। এটি অব্যাহত থাকলে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও খারাপ অবস্থায় যাবে বলে সতর্ক করেছেন পেদ্রো।
আলজাজিরা জানায়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১২৪ জন। ফলে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শনিবার প্রকাশিত মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১৯,৪৭৩ জনে।
গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরুর নতুন উদ্যোগের জন্য ইসরায়েলের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক সিনিয়র কর্মকর্তা শুক্রবার টাইমস অব ইসরায়েলকে এ তথ্য জানিয়েছেন। আরব আমিরাতের প্রত্যাখ্যান এ উদ্যোগের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা, যা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
রয়টার্স জানায়, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পর জার্মানদের মধ্যে দেশটির প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাব বাড়ছে বলে জানিয়েছে একটি জরিপ। শুক্রবার জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা বার্টেলসমান ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত চার বছরে ইসরায়েল সম্পর্কে জার্মানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মনোভাবগত পরিবর্তন এসেছে। ২০২১ সালে যেখানে ৪৬ শতাংশ জার্মান ইসরায়েল সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন, ২০২৫ সালে এ সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে। অন্যদিকে ৩৮ শতাংশ ইসরায়েলকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত জার্মানি সরকার ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন মতামত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ জার্মান গাজায় ইসরায়েলের এই প্রাণঘাতী সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা
সম্পূরক বৃত্তির তালিকা প্রকাশ ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদ প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। আগামীকাল রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা।
গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী বি এম আতিকুর রহমান তানজিল বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বঞ্চনার শিকার। এখানে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হল নেই, ভালো ক্যাম্পাস নেই। প্রতিনিয়ত পুরান ঢাকায় এক প্রকার যুদ্ধ করে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’
আতিকুর রহমান তানজিল বলেন, ‘আমাদের এই সংগ্রাম অনশন কর্মসূচি থেকে শুরু হয়েছিল। আমরা সচিবালয় ঘেরাও করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিলেও বাস্তবায়ন করেনি। এই প্রেক্ষিতে আমরা ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি দিই। সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের মুখোমুখি হয়েও আমরা দাবি আদায়ে পিছপা হইনি।’
তানজিল আরও বলেন, ‘সম্পূরক বৃত্তি প্রদান করা হলে শিক্ষার্থীদের টিউশনের চাপ কমবে। তাঁরা পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে। অথচ গতকালের সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়ে কোনো আলোচনাই ওঠেনি। যমুনা আন্দোলনে ভাই-বোনদের রক্তঝরা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সম্পূরক বৃত্তি আদায় করেছিলাম।’
প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংগ্রাম ও সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন পার করছে। আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি, কিন্তু ফল ঘরে তুলতে পারিনি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ আবাসন সুবিধা আছে, আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ আবাসন সুবিধা আছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তা থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা অনশন কর্মসূচি থেকে যমুনা আন্দোলনে সম্পূরক বৃত্তির জন্য আওয়াজ তুলি।’
রাকিব আরও বলেন, ‘আমাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার পাশাপাশি শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে হবে। সে জন্য সম্পূরক বৃত্তির কোনো বিকল্প দেখছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র বিষয়ক সম্পাদক অনিক কুমার দাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মাশফিকুল ইসলাম রাইন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক অর্ঘ্য শ্রেষ্ঠ দাস, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অপু মুন্সী, ক্রীড়া সম্পাদক মো. কামরুল হাসান নাফিজ এবং সদস্য পদপ্রার্থী মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ উপস্থিত ছিলেন।