ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিশুদ্ধ পানির স্থাপনা ধ্বংস করছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের এমনটা করার মূল উদ্দেশ্য, ফিলিস্তিনিরা যেন বিশুদ্ধ পানি না পায়। এতে গাজার  মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে। ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলছেন, ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পানি নীরবে প্রাণঘাতী বোমা হিসেবে কাজ করছে। 

তুরস্কের সংবাদ সংস্থাটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস টু সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশনের বিশেষ প্রতিবেদক পেদ্রো আরোজো-আগুদু বলেন, বিশুদ্ধ পানি বন্ধ করা তাদের ওপর ভয়াবহ নীরব বোমা ফেলার সমতুল্য। 

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আটকা পড়েছে ২১ লাখ ফিলিস্তিনি। তারা বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে। পেদ্রো বলেন, গাজার ৭০ শতাংশ পানির স্থাপনা ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে পানি পাচ্ছেন না ফিলিস্তিনিরা। তারা যে পানি পাচ্ছে, তার বেশির ভাগই দূষিত।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় পানি, খাবার, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢুকতে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। বিদ্যুতের অভাবে কূপ বা ভূগর্ভ থেকে পানি তুলতে পারছে না ফিলিস্তিনিরা। এটি অব্যাহত থাকলে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও খারাপ অবস্থায় যাবে বলে সতর্ক করেছেন পেদ্রো।

আলজাজিরা জানায়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১২৪ জন। ফলে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শনিবার প্রকাশিত মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১৯,৪৭৩ জনে।

গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরুর নতুন উদ্যোগের জন্য ইসরায়েলের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক সিনিয়র কর্মকর্তা শুক্রবার টাইমস অব ইসরায়েলকে এ তথ্য জানিয়েছেন। আরব আমিরাতের প্রত্যাখ্যান এ উদ্যোগের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা, যা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।  

রয়টার্স জানায়, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পর জার্মানদের মধ্যে দেশটির প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাব বাড়ছে বলে জানিয়েছে একটি জরিপ। শুক্রবার জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা বার্টেলসমান ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

গত চার বছরে ইসরায়েল সম্পর্কে জার্মানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মনোভাবগত পরিবর্তন এসেছে।  ২০২১ সালে যেখানে ৪৬ শতাংশ জার্মান ইসরায়েল সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন, ২০২৫ সালে এ সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে। অন্যদিকে ৩৮ শতাংশ ইসরায়েলকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত জার্মানি সরকার ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন মতামত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ জার্মান গাজায় ইসরায়েলের এই প্রাণঘাতী সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন, পেনশনসহ অন্য প্রাপ্যতা রিভিজিট করতে কেন নির্দেশ নয়: হাইকোর্ট

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইন প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইন দুটি কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন, পেনশনসহ অন্যান্য প্রাপ্যতা রিভিজিট (পুনরায় দেখা) করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য বিদ্যমান গবেষণা সুবিধা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা বিষয়ে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনসচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন এবং ২০২৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেনসহ ১৩ আইনজীবী ও আইন শিক্ষার্থী চলতি মাসে রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।

আদালতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বাংলাদশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আর্থিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন ধাপে রয়েছে। যেখানে ভারতের প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা, ভুটানে ১ লাখ ৯১ হাজার থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, মালদ্বীপে প্রায় ৭ লাখ টাকা, সেখানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পান। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতিও সাংঘর্ষিক।

রিট আবেদনকারীপক্ষের ভাষ্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত সুরক্ষিত একটি অধিকার। তবে ২০২১ ও ২০২৩ সালের উল্লিখিত আইন দুটি বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার—এমনভাবে নির্ধারণ করেছে, যা বাস্তবে তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন রছে। ফলে আইন দুটি সংবিধানের পরিপন্থী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ১ লাখের বেশি হতে পারে: জার্মানির শীর্ষ গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য
  • ঘনিষ্ঠজনের হাতেই প্রতি ১০ মিনিটে খুন হন একজন নারী: জাতিসংঘ
  • সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন, পেনশনসহ অন্য প্রাপ্যতা রিভিজিট করতে কেন নির্দেশ নয়: হাইকোর্ট
  • উৎপাদনকারী নয়, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়