ঝিনাইগাতীতে বন্য হাতির আক্রমণে দুজনের মৃত্যুর পর আতঙ্কে ৭ গ্রামের মানুষ
Published: 21st, May 2025 GMT
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী সীমান্তে বন্য হাতির আক্রমণে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনের মৃত্যুর পর সীমান্তবর্তী সাতটি গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সন্ধ্যার পর ঘর থেকে এলাকাবাসীকে বাইরে বের না হতে সতর্ক করা হয়েছে।
কয়েক দিন ধরে নালিতাবাড়ীর সমশ্চুড়া থেকে ঝিনাইগাতীর গজনী পাহাড়ে ৩০ থেকে ৪০টি বন্য হাতির একটি দল অবস্থান নেওয়া এলাকায় হাতির আক্রমণের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে গ্রামের বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেছেন।
বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্য হাতির দলটি দিনে পাহাড়ি জঙ্গলে থাকলেও সন্ধ্যার পর লোকালয়ে নেমে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে গজনী দরবেশতলা এলাকায় হাতির আক্রমণে আজিজুর রহমান নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিনি ভ্যানে বালু আনতে গিয়ে হাতির কবলে পড়েন। দেড় ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাঁকাকুড়া শালবনের রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে এফিলিস মারাক (৪৫) নামের আরেকজন হাতির আক্রমণের শিকার হন। তিন বন্ধুকে নিয়ে হাঁটছিলেন এফিলিস। বনের ভেতর থেকে বের হওয়া হাতির দল তাঁদের তাড়া করে। অন্যরা পালিয়ে গেলেও তিনি বাঁচতে পারেননি।
স্থানীয় লোকজন জানান, দুজনের মৃত্যুর খবর জানার পর সীমান্তবর্তী গান্দিগাঁও, দরবেশতলা, হালচাটি, লেবার মোড়, কাঁঠালতলা, বনরানী ও বাঁকাকুড়া গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাতটি গ্রামে চার থেকে পাঁচ হাজার পরিবারের বসবাস। সীমান্ত সড়ক দিয়ে ঝিনাইগাতী সদরসহ আশপাশের বাজারে যেতে তারা বনের রাস্তাটি ব্যবহার করে। রাতে রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মশাল ও লাঠি নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যসহ স্থানীয় যুবকেরা।
আজ বুধবার বিকেলে দরবেশতলা ও বাঁকাকুড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। বন্য হাতির আক্রমণের ভয়ে অনেকেই নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের কারণে গ্রামের মানুষ পরিবার–পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন দূরের আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা নিরাপদ স্থানে। বিকেলের মধ্যে স্থানীয় চায়ের দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।
বাঁকাকুড়া গ্রামের জহুরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রাইতে দুইজনরে হাতি মারুনের পর থাইকা আমরা সারা রাইত জাইগা থাকছি। অহন হাতির ভয়ে সবাই বাড়িঘরেই থাকতাছি।’ বড় গজনী গ্রামের কৃষক সুবির মারাক বলেন, ‘হাতি বিরাট ক্ষিপ্ত অইয়া গেছে। রাইতে দুইজনরে মাইরা হালানুর পর থাইকা সাত গ্রামের মানুষ ভয়ে রাইত দিন কাডাইতাছে।’
এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের গান্দিগাঁও এলাকার দলনেতা মো.
বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম জানান, হাতির দলটি পাহাড়ি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। পরপর দুটি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, মানুষের দ্বারা হয়তো হাতির দলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ জন্য হঠাৎ মানুষের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এস বি তানভির আহমেদ বলেন, গ্রামবাসীদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। সীমান্ত সড়ক দিয়ে বিকেল পাঁচটার পর যাতায়াত করতে নিষেধ করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য হ ত র জন র ম ত য বন ব ভ গ এল ক য় য র পর আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান
বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়
এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।
তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।
এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।
আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।
এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।
ঢাকা/আমিনুল