গ্রেপ্তারের তথ্য আড়াল করতে অসুস্থতার ছুটি
Published: 24th, May 2025 GMT
স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় জেলে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ওয়াহিদুল ইসলাম। এ ঘটনা আড়াল করতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন তিনি। গত ১৩ মে ওই মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন থেকে ওয়াহিদুল ইসলামের সঙ্গে স্ত্রী শ্যামলী খাতুনের দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্বের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন শ্যামলী খাতুন। গত ১৩ মে সেই মামলায় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। ওয়াহিদুল ইসলাম ওইদিন থেকে অফিসে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিন দিনের ছুটি দেখান বলে অফিস রেকর্ডে উল্লেখ্য রয়েছে। পরে ১৮ মে একই কারণে আরও একটি ছুটির আবেদন দাখিল করে ২১ মে পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করেন। ওয়াহিদুল ইসলামের জেলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাঁর স্ত্রী শ্যামলী খাতুন ও তাঁর পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক।
অফিস কর্তৃপক্ষের দাবি, ওয়াহিদুল ইসলামের জেলে যাওয়ার বিষয়টি অবগত না হয়ে তাঁর ছুটির আবেদন গ্রহণ করে অনুমোদন করা হয়। পরে ২২ মে শ্যামলী খাতুন ওয়াহিদুল ইসলামের জেলে যাওয়ার বিষয়টি অফিসকে জানান। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের একাধিক কর্মচারী জানান, গত ১৩ মে থেকে ওয়াহিদুল ইসলাম অফিসে অনুপস্থিত। কিন্তু অফিস রেকর্ডে ওইদিন থেকে তাঁর দাখিল করা দুটি ছুটির আবেদনে ২১ মে পর্যন্ত ছুটি দেখানো হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুজ্জামান আসিফ বলেন, ‘ওয়াহিদুল ইসলামের জেলে যাওয়ার বিষয়টি ২২ মে জেনেছি। এখন পর্যন্ত আদালতের পক্ষ থেকে নোটিশ পাইনি। নোটিশ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।
খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।
এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।
এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?