চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প অনুমোদন ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ১৫-২০ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। যন্ত্রপাতি কিনতে ৩০০ কোটি টাকা চাওয়া হলেও নালা, কালভার্ট পরিষ্কার করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা।’ 

শনিবার নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। 

ডা.

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২০২২ সালে একটা প্রকল্প জমা দেওয়া হয় ৩৯৮ কোটি টাকার। সেটা ওভাবে ওখানে পড়ে আছে। আমি বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর একটা জায়গায় এসেছে। ফাইনালি সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা কমিয়ে ২৯৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি। উনাকে বলেছি, জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে হলে এই প্রকল্পটি দিতে হবে। আমার যন্ত্রপাতি দরকার। যে যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো ১৫-২০ বছরের পুরনো। এ মেশিনগুলো নিয়ে যখনই কাজ করতে যাই ফেল করছে সেখানে। সেটা উনি দেখছেন বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে প্রকল্পটি দেওয়া হয়েছে। আজ ২০২৫ সাল। জলাবদ্ধতার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি। খাল-নালা পরিষ্কারের মেশিনারিজ যদি না থাকে কীভাবে জলাবদ্ধতার এত বড় বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন? ১৫-১৬ লাখ টাকায় একেকটা মেশিন আমরা ভাড়া করছি।’

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় বাজেট কী দিয়েছে? পাঁচ কোটি টাকা নালা পরিষ্কার করার জন্য, আড়াই কোটি টাকা একটা বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের জন্য, ৮ থেকে ১০ কোটি সংস্কারের জন্য দিয়েছে। আমরা এগুলো চাইনি। আমরা চেয়েছি, মেশিনারিজ কেনার জন্য ৩০০ কোটি টাকা।’

চট্টগ্রামের জন্য সরকারি বাজেট বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ঢাকা শহরে যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, চট্টগ্রাম শহরে ৭০ লাখ মানুষের জন্য সে বাজেট দেওয়া হয় কি? ৭০-৮০ লাখ মানুষের বাজেট কি এটাই? সিটি করপোরেশন একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বছরে শিক্ষা খাতে ৮০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা খাত আছে। দেশের আর কোনো সিটি করপোরেশনে এগুলো নেই। জনগণ থেকে কর নিয়ে কি আমি মানুষকে সেবা দেব? তাহলে কি মানুষকে করের বোঝা চাপাব? আপনাকে তো বাজেট দিতে হবে। সে বাজেট আপনি ঢাকাতে দেন, চট্টগ্রাম শহরে দিতে চান না কেন?’

তিনি বলেন, ‘বরাদ্দ হচ্ছে মাত্র ৫ কোটি। কিন্তু তাতে প্রকল্প ১৪৮টি। মানুষ তো ভাববে যেন ৫ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এতই হাস্যকর যে, সেটাও আমাদের নয়, জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। বলার পর আমাদের ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে খালগুলো পরিষ্কার করার জন্য।’

জনসংযোগ সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অভীক ওসমানরে সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ভুঁইয়া নজরুল। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থপতি জেরিনা হোসাইন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক নছরুল কদির, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার পাশা, সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতেখার উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, জনসংযোগ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি এএসএম বজলুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংযোগ সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র জন য পর ষ ক র প রকল প বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ