দেশজুড়ে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতির নির্দেশ ইমরান খানের
Published: 27th, May 2025 GMT
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার দলকে ‘পাকিস্তানজুড়ে বড় ধরনের আন্দোলন’ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
সোমবার রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তার বোন আলীমা খান। তিনি বলেন, “ইমরান খান বলেছেন, তার দলের এখন ইসলামাবাদের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।”
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানে তীব্র ঝড়ে ১৩ জনের মৃত্যু
আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বাড়াল পাকিস্তান ও ভারত
পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। আলীমা খান বলেন, “ইমরান খান বলেছেন- তারা (সরকার) যতই নির্যাতন করুক না কেন, তিনি কখনই দাসত্ব মেনে নেবেন না। মাথা নত করার চেয়ে তিনি সারাজীবন জেলে থাকতে পছন্দ করবেন।”
আলেমা সংবাদিকদের জানান, ইমরান খান অভিযোগ করেছেন যে, তাকে একজন সাধারণ বন্দির ন্যূনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। গত আট মাসে, তাকে তার সন্তানদের সাথে মাত্র একবার কথা বলতে দেওয়া হয়েছে।
আলিমা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের বোনদের তার সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি আমরা যে বইগুলো পাঠাতে চাই তাও জেল প্রশাসন আটকে রেখেছে।”
আলিমা আরো অভিযোগ করেন, ইমরানের ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তাকে পরীক্ষা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আদালতের অবমাননার আবেদনের আদেশ সরকার অমান্য করছে।
তিনি বলেন, ইমরান খানকে চাপে রাখার জন্য তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও ইমরান বলেছেন, তিনি মাথা নত করবেন না।
আলিমা ভ্লগার ও ইউটিউবারদেরও সমালোচনা করেছেন যারা দাবি করেন যে, ইমরানের মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে পিটিআই।
আলিমা জানান, দলের ভেতর বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে ইমরান বলেছেন, “যারা ‘উইকেটের দুই পাশে খেলে,’ তাদের জন্য দলে কোনো জায়গা নেই।”
এদিকে, পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর আলী খান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আসন্ন ঈদুল আজহার আগেই কারাবন্দী ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের (আইএইচসি) বাইরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় গোহর দলীয় কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সব আইনি বাঁধা শিগগির শেষ হতে চলেছে। আমরা তার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা বিক্ষোভ করেছি, সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেছি ও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।”
তিনি বলেন, “কর্মীদের প্রশ্ন তোলার পূর্ণ অধিকার আছে এবং আমরা তাদের আবেগকে মূল্য দিই। কেউ বুঝতে পারে না যে, ইমরান খান কীভাবে ও কেন দুই বছর ধরে কারাবন্দী রয়েছেন।”
তিনি উল্লেখ করেন, “দলের ধৈর্য্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের জনগণ ক্লান্ত, এমনকি বিচারকরাও রায় লিখতে লিখতে ক্লান্ত। আমরা ইমরান খানের মামলাগুলো নিষ্পত্তি এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”
প্রসঙ্গত, ৭১ বছর বয়সি সাবেক ক্রিকেটার-রাজনীতিবিদ ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দী রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত একাধিক মামলা রয়েছে, যা ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর থেকে শুরু হয়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইমর ন খ ন ইমর ন খ ন ন বল ছ ন র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে অর্থনৈতিক খাতের দায়
পঞ্চাশের দশকে আবিষ্কৃত প্লাস্টিক একসময় আধুনিকতার প্রতীক ছিল। সাশ্রয়ী, বহুমুখী ও টেকসই এই উপাদান বিশ্বজুড়ে শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা থেকে শুরু করে ঘরোয়া ব্যবহারে এক অনিবার্য জায়গা করে নেয়। কিন্তু কৃত্রিম এই বস্তু যখন বিপুল হারে উৎপাদিত হয়ে ব্যবহারের পর ব্যবস্থাহীনভাবে পরিবেশে মিশতে থাকে, তখন সেটি এক বৈশ্বিক সংকটে রূপ নেয়।
প্লাস্টিক এখন শুধু শহরের ড্রেন বা সাগরের পাড়েই নয়, মানুষের খাদ্যচক্রে, এমনকি রক্ত ও হৃৎপিণ্ডে জায়গা করে নিচ্ছে। ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাই ‘প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করুন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আহ্বান জানিয়েছে, তা নিছক প্রতীকী কোনো আয়োজন নয়, বরং এটি সময়ের এক কঠিন বাস্তবতা।
বিগত সাত দশকে বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদন বেড়েছে কয়েক শ গুণ। প্রতিবছর প্রায় ৪৫ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপন্ন হচ্ছে, যার ৪০ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য। সেগুলোর বিরাট অংশই শেষ পর্যন্ত জমা হয় প্রকৃতিতে—নদী, সাগর, বন কিংবা উন্মুক্ত জমিতে—যেখানে তা শত শত বছর অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়। এসব প্লাস্টিক ক্ষয়ে ক্ষয়ে পরিণত হয় মাইক্রোপ্লাস্টিকে এবং তা সহজেই জলজ প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে এবং খাদ্যচক্র পেরিয়ে মানুষের শরীরেও ঢুকে পড়ে।
গবেষণা বলছে, একজন মার্কিন নাগরিক বছরে প্রায় এক লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক–কণা গ্রহণ করেন খাবার ও শ্বাসের মাধ্যমে। এসব কণায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ, যেমন বিসফেনল বা থ্যালেটস শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, বন্ধ্যত্ব, স্নায়বিক ব্যাধি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এসব কণা মানুষের রক্ত, প্ল্যাসেন্টা এমনকি হৃদ্যন্ত্রেও শনাক্ত হয়েছে। এটি একটি ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকির সংকেত।
তবে মানবদেহের ঝুঁকি ছাড়াও প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব পড়ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে। ইউনেসকোর হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর অন্তত ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখি এবং ১ লাখ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী প্লাস্টিক খেয়ে বা প্লাস্টিকে জড়িয়ে মারা যাচ্ছে। বৃহৎ সমুদ্রের ওপর দিয়ে একেকটি ‘প্লাস্টিক দ্বীপ’ ভেসে বেড়াচ্ছে, যেমন প্রশান্ত মহাসাগরে ৮০ হাজার টনের এক বিশাল আবর্জনার স্তূপ, যাতে রয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিকের টুকরা।
প্লাস্টিক দূষণের একটি বড় পরোক্ষ ক্ষতি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। প্লাস্টিক মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হয় এবং এর উৎপাদন, পরিবহন ও ধ্বংসের প্রতিটি স্তরেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়।
একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে আর্থিক খাতের ভূমিকা শুধু অর্থায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা নীতিনির্ধারক, পরামর্শদাতা ও সচেতনতা সৃষ্টিকারীর ভূমিকাও পালন করতে পারে। যখন আর্থিক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নীতিতে পরিবেশ-সচেতনতা যুক্ত করে, তখন ‘প্লাস্টিক বন্ধ হোক—প্রকৃতি বাঁচুক’, এই স্লোগান বাস্তব হয়ে ওঠে। আর সেটিই হতে পারে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন।গবেষণা বলছে, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক উৎপাদন থেকে বছরে ২ দশমিক ৮ গিগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে, যা বৈশ্বিক কার্বন সীমা (৪২০-৫৭০ গিগাটন) বজায় রাখার লক্ষ্যে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
এ সংকট থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। দেশে প্রতিবছর প্রায় আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি উৎপন্ন হয় শুধু ঢাকা শহরে। এসব বর্জ্যের অর্ধেকেরও কম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যবস্থায় ফিরে আসে, বাকিগুলো শহরের ড্রেন, খাল, নদীতে জমা হয়ে পানিনিষ্কাশন ব্যাহত করে এবং বন্যা বা জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী হয়ে ওঠে।
জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে এখনো অনেক পথ বাকি।
এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠতে পারে—প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কী ভূমিকা থাকতে পারে? শুধু পরিবেশবিদ, সরকারি সংস্থা কিংবা ভোক্তাদের দায়িত্বে বিষয়টি ছেড়ে দিলে চলবে না। কারণ, অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও ভোক্তা আচরণ নির্ধারণে আর্থিক খাতের প্রভাব অপরিসীম।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা অর্থায়নের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে গতি এনে দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই অর্থায়নে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা পূর্ববর্তী প্রান্তিক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। এই প্রবণতাকে যদি পরিবেশবান্ধব, প্রযুক্তিনির্ভর ও প্লাস্টিক-বিকল্প উদ্যোগের দিকে বিশেষভাবে মোড় নেওয়া যায়, তবে তা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের উদাহরণ উল্লেখযোগ্য—সেখানে ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন ব্যাংক (এসআইডিবিআই) ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য তৈরিতে সহজ শর্তে অর্থায়ন করছে। বাংলাদেশেও এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিভিন্ন ব্যাংকের এসএমই ইউনিটের মাধ্যমে এমন প্রণোদনা চালু করা যেতে পারে।
তবে বিনিয়োগের বাইরেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কর্মপরিবেশে প্লাস্টিকবিরোধী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। অফিসে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে তার পরিবর্তে কাচ, ধাতব বা কাগজের পণ্য ব্যবহার একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। অনেক আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও করপোরেট সংস্থা ইতিমধ্যে এই পথ অনুসরণ করেছে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবেশ, সমাজ ও প্রশাসনের মানদণ্ড, অর্থাৎ ইএসজি স্কোর বিবেচনায় আনা গেলে তা আরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। জাতিসংঘের দায়িত্বশীল বিনিয়োগ নীতিমালা (পিআরআই) অনুসরণ করে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৭০ শতাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইএসজি স্কোর অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ইতিমধ্যে টেকসই ব্যাংকিং সূচক চালু করেছে, যা একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
সবশেষে বলা যায়, করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্লাস্টিকবিরোধী ক্যাম্পেইন, সচেতনতা সেমিনার, বৃক্ষরোপণ বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এসব কার্যক্রম কেবল করপোরেট ভাবমূর্তি রক্ষার মাধ্যম নয়, বরং সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে একটি দায়শীল সংযোগ গড়ে তোলার পথ।
একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে আর্থিক খাতের ভূমিকা শুধু অর্থায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা নীতিনির্ধারক, পরামর্শদাতা ও সচেতনতা সৃষ্টিকারীর ভূমিকাও পালন করতে পারে। যখন আর্থিক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নীতিতে পরিবেশ-সচেতনতা যুক্ত করে, তখন ‘প্লাস্টিক বন্ধ হোক—প্রকৃতি বাঁচুক’, এই স্লোগান বাস্তব হয়ে ওঠে। আর সেটিই হতে পারে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন।
এম এম মাহবুব হাসান ব্যাংকার ও উন্নয়ন গবেষক