ময়মনসিংহে ৪১ শহীদ পরিবারের চেক আটকে রাখায় জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি
Published: 27th, May 2025 GMT
ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৪১ পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা অনুদানের চেক আটকে রাখার অভিযোগে জেলা প্রশাসক জিয়া আহমেদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা। এ দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। পরে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
দুপুরে জেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কেরা। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনের ব্যানারে উল্লেখ করা হয়, ‘আওয়ামী মদদপুষ্ট অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পরিষদ প্রশাসক জিয়া আহমেদ সুমনের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন। গত বছর গণ-আন্দোলনে ময়মনসিংহের ৪১ জন শহীদ পরিবারের সরকারি আর্থিক অনুদান প্রাপ্তিতে বাধা কেন? জানতে চাই প্রশাসনের কাছে। ফ্যাসিস্ট তাড়াও, আওয়ামী দোসর খেদাও। আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারের মর্যাদা রক্ষা করুন।’
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শহীদ রেদোয়ান হোসেনের বাবা আসাদুজ্জামান ও শহীদ আবদুল্লাহ আল মাহিনের বাবা জামিল হোসেন। তাঁরা জানান, গত মাসে কাগজপত্র জমা নিলেও তাঁদের অনুদান দেওয়া হচ্ছে না। অথচ দেশের ৬৩টি জেলা পরিষদ থেকে অন্য শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু ময়মনসিংহে টালবাহানা করা হচ্ছে।
বিভাগীয় কমিশনার আজ তাঁর কার্যালয়ে না থাকায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের কাছে এ বিষয়ে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। তাহমিনা আক্তার বলেন, জেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অনুদানের জন্য চেক রেডি করা হয়েছে। ২৯ মে এসব চেক বিতরণ করা হবে। প্রশাসকের অপসারণের দাবির বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করা হবে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আন্দোলনে নিহত ৪১ জনের জন্য সরকার ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ ময়মনসিংহ জেলা পরিষদে পাঠিয়েছেন। এই ৪১ জন সরকারি গেজেটভুক্ত। আগেও মন্ত্রণালয় থেকে ৫ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছে এই পরিবারগুলো। তবে জেলা পরিষদের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব কার্যক্রম শেষ করা হলেও বর্তমান প্রশাসক জিয়া আহমেদ অনুদানের বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের খাস দোসর। তাঁকে ময়মনসিংহে দেখতে চান না তাঁরা। যে অফিসার নিহত ছাত্রদের অনুদান নিয়ে টালবাহানা করেন, দীর্ঘদিন ফেলে রাখেন, তাঁকে আমরা ময়মনসিংহবাসী চাই না। তাঁকে অনতিবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া হোক। তা না হলে তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন এবং মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হবেন তাঁরা।
ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জিয়া আহমেদ সুমন। তিনি গত ১৭ এপ্রিল এই কর্মস্থলে যোগ দেন। শহীদ পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তাঁর ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কবির হোসেন সরদার বলেন, ‘আমাদের প্রশাসকও নতুন যোগ দিয়েছেন, এ কারণে একটু দেরি হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পরই আমরা তালিকা আপডেট করে ফাইলটি প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু ব্যস্ততা ও যাচাই–বাছাই করার জন্য একটু দেরি হয়ে গেছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র র জন য অন দ ন সরক র আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
দেশের একাধিক এলাকায় ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ পূর্বাভাস ছিল গত শুক্রবারের। গত মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় মোন্থা আছড়ে পড়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে। আবহাওয়ার বার্তা ছিল, মোন্থার প্রভাবেই হবে এ বৃষ্টি। শুক্রবার উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের একাধিক জেলায়ও বৃষ্টি হয় সেদিন। আর গতকাল শনিবার বৃষ্টি শুধু উত্তরের জেলাগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে অনেকটা বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রোববার বৃষ্টি অনেকটাই কমে যেতে পারে। সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু এলাকায় বৃষ্টি থাকতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোন্থা এভাবে বৃষ্টি দিয়েই নিঃশেষ হলো বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা বলছেন, মোন্থা বিদায় নিলেও আগামী দুই দিনের মধ্যে সাগরে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আর তাতে আগামী বুধবার থেকে আবার বৃষ্টি হতে পারে। তবে তার পরিমাণ খুব বেশি না-ও হতে পারে।
বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগ বাদ দিয়ে গতকাল দেশের প্রায় সর্বত্র বৃষ্টি হয়েছে। মোন্থা মঙ্গলবারই প্রবল থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এরপর তা নিম্নচাপ আকারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে। এর প্রভাবে গত দুই দিন দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় ১৬৬ মিলিমিটার।
যখন কোনো এলাকায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তখন তাকে ভারী বৃষ্টি বলে। এর চেয়ে বেশি হলে তা হয় অতি ভারী। শুধু তাড়াশ নয়, উত্তরের একাধিক স্থানে গতকাল ভারী বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বগুড়ায় ৯৪, নওগাঁয় ৮৯ ও দিনাজপুরে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
ময়মনসিংহে গতকাল ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। রাজধানীতে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মোন্থা সৃষ্টি হওয়ার কাছাকাছি সময়ে আরব সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তাতে মোন্থার গতিপথ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলমুখী হয়। এটি প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়েছে। আর এভাবেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। এর সামান্য রেশ আজ দেখা যেতে পারে। তবে শনিবার রাতেই বেশি বৃষ্টি হবে।
রাজধানীতে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়