ব্যাটারিচালিত রিকশা: অপেক্ষা করছে মহাদুর্ভোগ
Published: 6th, May 2025 GMT
ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের দাপটে ট্রাফিক–ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলা যায়। দাপট বলছি কারণ, এই বাহনগুলোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। গঠন, নিবন্ধন, চলাচলযোগ্যতা—কোনো কিছুরই বালাই নেই এগুলোর।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, বুয়েটের একটি কারিগরি দল ব্যাটারি রিকশার নতুন ‘নিরাপদ নকশা’ করেছে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও ওই নকশার রিকশাকে ঢাকায় চলাচলের অনুমতি দেবে বলে জানিয়েছে। তারা ভুলে গেল যে এগুলোর পরিবেশ ছাড়পত্র দেবে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের। সিটি করপোরেশনের নয়।
যা–ই হোক, এই ঘোষণার ফলে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হবে না; বরং নতুন ডিজাইনের রিকশা বানানোর হিড়িক লেগে যাবে এবং ভবিষ্যতে এদের দৌরাত্ম্য আরও বৃদ্ধি পাবে। যানজট মারাত্মক বৃদ্ধি পাবে। মানুষের কর্মঘণ্টা কমতে থাকবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মানুষের আয়ে এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর।
আরও পড়ুনদিল্লিতে যখন সমাধান, ঢাকায় কেন সমস্যা০১ জুন ২০২৪বাংলাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সঠিক সংখ্যা নেই। তবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বাংলাদেশে ৪০ লাখ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। তবে গত এক বছরে এদের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, তা কমপক্ষে ৬০ লাখ হয়েছে বললে ভুল হবে না।
অনেকেই বলতে পারেন, ‘পরিবেশবান্ধব’ এই রিকশায় কী ক্ষতি? কাঠামো নিরাপদ করা গেলে সমস্যা কোথায়? বরং পায়ে টানা অমানবিক রিকশা ও ভ্যানের চেয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক অনেক ভালো, দ্রুতগতির ইত্যাদি।
ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সমালোচনা এলেই বলা হয়, এর মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হয় বেশি, চালকেরা উল্টোপথে যাচ্ছেতাইভাবে চলাচল করেন।
কিন্তু দুর্ঘটনা ছাড়াও সবার অলক্ষ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক দেশ ও সমাজের যে অপূরণীয় ক্ষতি ও সর্বনাশ করে যাচ্ছে, সেই আলোচনা তেমন নেই। সর্বনাশটি হলো, ক্রমবর্ধমান সিসা দূষণ, যা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে দিতে পারে। শুধু সিসা দূষণ নয়, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধ্বংস ডেকে আনবে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক।
আলোচনার শুরুতে ব্যাটারিচালিত রিকশার ভালো দিকে দিয়েই শুরু করি। ডিজেল, পেট্রল, লুব্রিকেটিং ওয়েল লাগে না, তাই ধোঁয়া থাকে না, বায়ুদূষণ করে না এরা। চার থেকে পাঁচটি ব্যাটারি নিয়ে এক সেট সিসা ব্যাটারি দিয়ে চলে এই রিকশা ও ইজিবাইক। বিভিন্ন ক্ষমতার ও ওজনের সিসা ব্যাটারি থাকে এগুলোতে। বৈদ্যুতিক লাইনে লাগিয়ে চার্জ দিলে ব্যাটারি চার্জ ধরে রাখে। সেই চার্জ দিয়ে মোটর চলে এবং বাহনটি চলাচল করে।
প্রকারভেদে একটি রিকশা ও ইজিবাইকে ৫০ থেকে ১০০ কেজির বেশি সিসা ব্যাটারি থাকে। বেশি সময় ধরে বেশি ওজন বহন করার কারণে এক সেট ব্যাটারি ছয় থেকে আট মাস চলে। এরপর নতুন আরেক সেট ব্যাটারি লাগাতে হয়। মোটাদাগে ধরা যায়, একটি রিকশার প্রতিবছর কমপক্ষে ১০০ কেজি সিসা বর্জ্য উৎপাদন করে।
ব্যাটারির কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পর সেগুলো অর্ধেকের কম দামে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিকভাবে পুনঃ চক্রায়ণ (রিসাইকেল) শিল্প তেমন গড়ে ওঠেনি। এ কারণে নষ্ট ব্যাটারিগুলো দেশের বিভিন্ন আনাচকানাচে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে লোকচক্ষুর অন্তরালে অনানুষ্ঠানিক ‘ব্যাটারি ভাঙার কারখানা’ গড়ে উঠেছে। সেখানে ছোট ছোট শিশুরা এবং অত্যন্ত দরিদ্র মানুষগুলো কোনো রকম সুরক্ষা ছাড়াই ব্যাটারি ভেঙে পানিতে ধুয়ে সিসা বের করার কাজ করে। সিসা ধোয়া পানি সরাসরি কৃষিজমি এবং নদী, নালা, খাল-বিলে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ব্যবহৃত সিসা আগুনে গলিয়ে গোলা তৈরি করে নতুন ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) ব্যাটারি রিকশা ও সিসা দূষণ নিয়ে গবেষণা করেছেন ড.
পরিবেশে নিক্ষিপ্ত সিসা পানি থেকে মাছ, পশু, হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য প্রাণীর শরীরে যায়। সিসাযুক্ত পানি কৃষিকাজে ব্যবহারের কারণে সেগুলো খাদ্যচক্রের মাধ্যমের মানবদেহে প্রবেশ করে। নারীর শরীর থেকে শিশুদের শরীরে চলে যায়। আবার সিসাযুক্ত পানি ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করে। সেই পানি আমরা পান করি।
প্রশ্ন আসতে পারে, তাতে ক্ষতি কী? হ্যাঁ, ক্ষতি আছে। মনে রাখতে হবে, সিসা একটি মারাত্মক ধাতু, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) বলছে, সিসা শিশুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। বুদ্ধি (আইকিউ) কমিয়ে দেয়, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করে, শিক্ষা এবং আচরণগত জটিলতা সৃষ্টি করে, শিশুদের বিকাশ কমিয়ে দেয়, শ্রবণশক্তির সমস্যা ও মাথাব্যথা সৃষ্টি করে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রথম বৈশ্বিক সিসা দূষণ নিয়ে প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে ৮০ কোটি শিশুর শরীরে অতিমাত্রায়; অর্থাৎ প্রতি ডেসিলিটার রক্তে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম সিসা রয়েছে। সারা বিশ্বের মধ্যে সিসা দূষণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম অথবা তার চেয়ে বেশি সিসা রয়েছে, এমন শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ।
(আইসিডিডিআরবি) গবেষক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে একটি শিশুর রক্তে প্রতি ডেসিলিটারে ৪৬ মাইক্রোগ্রাম সিসা পাওয়া গেছে। যেখানে রক্তে সিসার সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য পরিমাণ সাড়ে তিন মাইক্রোগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার।
আরও পড়ুনব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বৈধতা দিতে বাধা কোথায়২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪কেবল শিশুরা নয়, বয়স্করাও সিসা দূষণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রথমত, নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রজননসমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপারটেনশন ও স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি করে, স্মরণশক্তি এবং মনোযোগ কমিয়ে দেয়, পেশি ও গিরায় ব্যথা সৃষ্টি করে।
সিসা দূষণ একদিকে শিশুদের হাবাগোবা করবে, বুদ্ধিহীন করবে আর অন্যদিকে নারী-পুরুষের প্রজননক্ষমতা কমাবে। কী হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ?
এই ব্যাটারিচালিত বাহনগুলো চালকদের আয়ের পথ করেছে। দিনে গড়ে এক হাজার টাকা আয় করছেন চালকেরা। কিন্তু তাঁরা আয় করছেন শর্ষে আর ক্ষতি হচ্ছে বেলসমান।
এসব চালকের কোনো শারীরিক শ্রম নেই। সিটে বসে থেকে সুইচ টিপলেই চলে রিকশা। সামনেও যায়; পেছনেও যায়। এসব চালক শারীরিক পরিশ্রম না করে প্রতিদিন বেশি পরিমাণ ভাত খেয়ে রিকশা চালিয়ে শান্তিতে ঘুমান। এ চালক ভাইদের অনেকেই আগে খেতখামারে কাজ করতেন। শরীর ভালো থাকত। এখন আর করেন না। শারীরিক পরিশ্রম না থাকায় অনেক রিকশাচালক ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন এবং পড়ছেন। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে, সন্দেহ নেই।
একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গে অন্যান্য রোগ হবেই। ফলে এসব মানুষের কর্মক্ষমতা কমতে থাকবে। এ ছাড়া তাঁরা যে আয়টি করছেন, সেই আয়ের চেয়ে বেশি টাকা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে হবে। পরিবার হবে নিঃস্ব।
তরুণ চালকদের যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেন, তাঁদের অনেকেরই সংসার টিকবে না। দেখা দেবে পারিবারিক সহিংসতা। যার নিদারুণ শিকার হবেন নারী ও শিশুরা। সমাজে দেখা দেবে হানাহানি, ব্যাভিচার।
অধিকন্তু এভাবে লাখ লাখ নতুন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দেশে চিকিৎসার মান আরও নিম্নমুখী হবে এবং মানুষ বাধ্য হয়েই বিদেশে চিকিৎসা করতে যাবেন। বাইরে চলে যাবে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা।
চালকেরা যেভাবে কুঁজো হয়ে পা গুটিয়ে এগুলো চালান এবং ঝাঁকি খান, তাতে খুব অচিরেই তাঁদের মেরুদণ্ড এবং কোমরব্যথা শুরু হবে। তা ছাড়া নারী যাত্রীদের জন্য ভাঙা ও অসমতল রাস্তায় যাওয়ার সময় তাঁদের বিভিন্ন প্রজননস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আসবে। গর্ভবতী নারীদের জন্য মারাত্মক বাহন এই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক।
স্বাস্থ্য খাতে এই বাড়তি বোঝা কি আমরা নিতে পারব?ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের কারণে আমাদের কৃষি খাতে শ্রমিকদের সংখ্যা কমছে। মাঠে ধান পড়ে থাকে। কাটার লোক পাওয়া যায় না।
অর্থনীতিবিদেরা বলবেন, দেশ উন্নত হলে কৃষিতে শ্রমশক্তি কমবে, বাড়বে সেবা খাতে। কিন্তু আমাদের শ্রমশক্তি ব্যাটারি রিকশাচালক হচ্ছেন অথবা কায়িক শ্রমিক হয়ে বিদেশে জীবন দিচ্ছেন। এভাবে কি উন্নত, মর্যাদাসম্পন্ন, জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ হবে?
সর্বনাশা ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধ করা হোক। রক্ষা করা হোক পরিবেশবান্ধব পায়ে টানা রিকশা। অমানবিক মনে হলেও আমার শ্রমঘন দেশের পায়ে টানা রিকশা অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, সিসা দূষণ থেকে রক্ষা করবে, দেশ-সমাজ বাঁচবে নীরব ঘাতক এই ব্যাটারি রিকশা থেকে।
সিসামুক্ত বিশ্বের জন্য আন্দোলন চলছে দেশে দেশে। কিন্তু আমরা কী করছি? এভাবে প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটি নিয়ে ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশের জন্য মহাদুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।
কামরান রেজা চৌধুরী সাংবাদিক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ব য ট র আম দ র র জন য পর ব শ চ লক র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
শাপলা চত্বরের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি এনসিপি নেতাদের
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনা তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। পাশাপাশি ওই ঘটনায় নিহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি, দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। ‘শাপলা হত্যাকাণ্ডের এক যুগ: বিচার, সুষ্ঠু তদন্ত, শহীদদের স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণে রাষ্ট্রের দায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা।
সভায় আখতার হোসেন বলেন, ‘এক যুগ পরে এসে আমরা যখন শাপলা গণহত্যার স্মৃতিচারণা করি, তখন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, তাদের সাংস্কৃতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক দোসররাও এ ঘটনায় সমানভাবে দায়ী। অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস পেরিয়ে গেলেও শাপলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো বিচারপ্রক্রিয়া এবং স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। যাঁরা শাহাদাত বরণ করেছেন, আহত হয়েছেন; তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় আনা হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
শাপলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সমাবেশের আয়োজকদের প্রশ্নের মুখোমুখি করার দাবি জানান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, ‘সেদিনের সমাবেশ ঘিরে আয়োজক হেফাজতে ইসলাম এবং তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে রাজনৈতিক আলাপ ছিল। সেই আলাপ কেন বাস্তবায়ন হয়নি? নিরীহ মাদ্রাসার ছাত্রদের সমাবেশে আনা হয়েছে কোনো রকম রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি ছাড়া। রাজনৈতিক এই ভুল সিদ্ধান্ত শত শত মানুষকে হত্যার মুখোমুখি করেছে।’
শাপলা গণহত্যার ঘটনায় বিশিষ্ট নাগরিকের বেশে যাঁরা সম্মতি উৎপাদন করেছেন, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আরিফুল ইসলাম আদীব।
২০১৩ সালের ৫ মে থেকে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পিওর (নিখুঁত) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তাই এ দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আর অধিকার নেই। করতে হলে তাদের আগে প্রমাণ করতে হবে যে তারা রাজনৈতিক দল।’
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নেই বলেও মন্তব্য করেন সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, যাঁরা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নেওয়ার ফন্দি করছেন, তাঁরা আসলে বাংলাদেশকে আবারও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মো. নিজাম উদ্দিন সভাটি সঞ্চালনা করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা, মুশফিক উস সালেহীন, ফয়সাল মাহমুদ ও মুশফিকুর রহমান, দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান ও সংগঠক এম এম শোয়াইব, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মাওলানা সানাউল্লাহ খান প্রমুখ।