ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সংঘর্ষ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এটি কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। যদিও কেউই পুরোপুরিভাবে সংঘাত আশা করে না। কাশ্মীর বিরোধ গত আট দশকে তিনটি যুদ্ধ এবং একাধিক সংকটের জন্ম দিয়েছে। যখন দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই উচিত।
একটি কারণ হলো, ভুল ও ভুল সিদ্ধান্ত সব সময় ঘটার আশঙ্কা থাকে। গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটি পাকিস্তানের ওপর রাতারাতি হামলা চালিয়েছে। তারপর ভারত বলেছে, তারা শুধু সন্ত্রাসী স্থাপনাতে আঘাত করেছে এবং তাদের পদক্ষেপ ‘উস্কানিমূলক নয়’। এটি একতরফাভাবে দাবি করার মতো এমন কোনো রায় নয়। পাকিস্তান বলেছে, ভারত ‘আগুন নিয়ে খেলা করছে’ এবং দেশটির সেনাবাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উদ্বেগের দ্বিতীয় কারণ হলো, শত্রুতার পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট। ভারতে নরেন্দ্র মোদির সাফল্যের কারণ হলো, তিনি একজন হিন্দু জাতীয়তাবাদী শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন। তাঁর ওপর তীব্র চাপও রয়েছে। কারণ তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছিলেন, কাশ্মীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং অঞ্চলটি শুধু ‘সন্ত্রাসমুক্ত নয়, বরং পর্যটকদের একটি স্বর্গরাজ্য’ হবে।
পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। জেনারেলদের অজনপ্রিয়তার একমাত্র কারণ হলো, অর্থনীতির বেহাল। গত মাসে সেনাপ্রধান অসিম মুনির কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘ঘাড়ের শিরা’ বলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। কথাটির সঙ্গে যুক্ত আছে বহু আবেগ, যা পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিবৃতির প্রতিধ্বনি। কাশ্মীরে হামলার পাঁচ দিন আগে দেওয়া এ বক্তব্য ভারতকে ক্ষুব্ধ করেছিল।
রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট এই গণহত্যার দায় স্বীকার করেছে। ভারত মনে করে, দলটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সহযোগী, ইসলামাবাদ যা অস্বীকার করেছে। তবে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পাক সেনাবাহিনীর সম্পর্ক অস্বচ্ছ। ভারত দোষারোপের ক্ষেত্রে ক্রমশ আরও একরোখা হয়ে উঠছে।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমাতে চাপ দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের মনোযোগ দেওয়ার সময় খুব কম, কূটনৈতিক ক্ষমতায়ও ঘাটতি রয়েছে। নয়াদিল্লিতে তাদের কোনো রাষ্ট্রদূত নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তলানিতে। এদিকে ইউরোপ ইউক্রেন, নিরাপত্তা ও মার্কিন শুল্ক নিয়ে ব্যস্ত। মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য বেইজিংয়ের উচিত পাকিস্তানের ওপর চাপ দেওয়া।
ইতোমধ্যে পাকিস্তান হামলার পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালের সর্বশেষ সংকটে উভয় পক্ষই নীরবে দূরে থেকে সরে এসেছিল। ভারত বলতে পারে, তারা হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে। এই ধরনের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিরাজমান অবস্থায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য স্বস্তির কারণ হবে, যারা আবারও ভারী কামান হামলা অব্যাহত থাকায় অনেক দূরে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য অর্থ প্রদান করছে। তবে এটি কেবল একটি সাময়িক অবকাশ হতে পারে, সবার জন্য নয়। সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার ভারত সরকারের ঘোষণা শেষ পর্যন্ত এটিকে জলপথ বন্ধ করার সুযোগ করে দিতে পারে, যা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের চেয়ে কম নাটকীয়, তবে পাকিস্তানের কৃষকদের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হতে পারে।
গত বছর মোদি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা পুনরায় ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা তাঁর সরকার ছয় বছর আগে ভুলভাবে বিচার করে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নেয়। তাঁর সেটি ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। সেই সিদ্ধান্ত এবং তারপর লকডাউন ক্ষোভ ও সশস্ত্র হামলা উস্কে দিয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীদের বিপজ্জনকভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর চাপ অব্যাহত রাখা উচিত।
পণ্ডিত সুমিত গাঙ্গুলি তার ‘ডেডলি ইমপেস’ বইতে লিখেছেন, যে দুটি দেশ প্রায়ই উল্লেখযোগ্য কৌশলগত সংযম দেখিয়েছে, তবে বিরোধটি ‘উল্লেখযোগ্যভাবে টেকসই’ রয়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতির গতিবিধি নির্ধারণে নিখুঁত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় নারীকে ধর্ষণ ও নিগ্রহের প্রতিবাদে জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণ ও নিগ্রহের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে প্রতিবাদে মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার বোন ধর্ষিতা কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার কর’, ‘জানমালের নিরাপত্তা দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। প্রতিবাদ মিছিল শেষে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শামসুল আলম মারুফ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মাধ্যমে ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকার ক্ষমতায় বসল। কিন্তু এরপর আমরা দেখতে পেলাম নারীদের ওপর একাধিক নিপীড়ন, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনসহ বিগত কয়েক মাসে ঘটিত শত শত মব ভায়োলেন্সের ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।’
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘সরকারের এমন আচরণ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা, পুলিশের কাঠামোগত সংস্কার না করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম জুলাই–আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, ‘প্রতিদিন এই ধর্ষণের ঘটনাগুলো সংবাদের শিরোনামে দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি বললেও এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রতিদিন হাটে-ঘাটে চলতে গিয়ে আমরাও সবাই অনেকখানি অনিরাপদ বোধ করছি। এটা হওয়ার কথা ছিল না। জুলাই অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল হাসিনার আমলের সকল দুঃশাসন কাটিয়ে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ একই রকম সংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান।’
তাহসীব আরও বলেন, ‘আমরা বিচারের কথা বলি, যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পর আর কেউ এমন ঘৃণ্য কাজ করতে সাহস না পায়। যাতে এই সংস্কৃতি বন্ধ হয়। মুরাদনগরের সেই ধর্ষিতার চাচা বলেছিলেন কাল তাঁর ঘরের কারও সাথে এমনটা হবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা সেই নিশ্চয়তার দাবিতে আজ দাঁড়িয়েছি। যতক্ষণ না সেটা নিশ্চিত হচ্ছে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’