১৯৬০ সালের জুন মাস। মার্কিন প্রকৌশলী ও পদার্থবিজ্ঞানী থিওডর হ্যারল্ড মাইম্যান তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত লেজার রশ্মিবিষয়ক গবেষণাপত্র পদার্থবিজ্ঞানের বিখ্যাত ও প্রভাবশালী বৈজ্ঞানিক জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স–এ প্রকাশের জন্য জমা দিলেন। কিন্তু জার্নালটির তৎকালীন সম্পাদক স্যামুয়েল এ গাউডস্মিট তা প্রত্যাখ্যান করে দিলেন। কারণ, তাঁরা এরই মধ্যে মেসার (লেজারের মাইক্রোওয়েভ পূর্বসূরি)–বিষয়ক প্রচুর লেখা জমা নিয়েছিলেন এবং আর কোনো নতুন লেখা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সঙ্গে আরও একটি কারণও ছিল বলে মনে করা হয়। তা হচ্ছে, রুবি ক্রিস্টাল ব্যবহার করে মাইম্যানের লেজার রশ্মি তৈরির যে ধারণা, সেটিকে সে সময়কার অধিকাংশ বিজ্ঞানী, বিশেষত বেল ল্যাবসের গবেষকেরা বাস্তবসম্মত বলে বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি। খোদ সম্পাদকও নন।
প্রচলিত ধারণার বিপরীত একটি বিষয় যে জার্নালে প্রকাশের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হবে, তা স্বাভাবিক। তবে কেউ বিশ্বাস করুন আর না করুন, ব্যাপারটি কিন্তু তত দিনে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। জার্নালে গবেষণাপত্র পাঠানোর কিছুদিন আগেই, আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ১৯৬০ সালের ১৬ মে থিওডর মাইম্যান রুবি ক্রিস্টাল ব্যবহার করে সফলভাবে লেজার রশ্মি তৈরি করেন। পরে অবশ্য সে বছরেরই ৬ আগস্ট ‘স্টিমুলেটেড অপটিক্যাল রেডিয়েশন ইন রুবি’ শিরোনামে মাইম্যানের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়। এরপর বিজ্ঞানী মহলে রীতিমতো সাড়া
পড়ে যায়।
মাইম্যানের লেজার রশ্মি আবিষ্কার আলোকপ্রযুক্তি জগতে এক অবিশ্বাস্য বিপ্লবের সূচনা করে। কেবল শক্তির উৎস হিসেবে আলোর অপরিহার্য ভূমিকার ক্ষেত্রেই নয়, বরং যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিল্প, সামরিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে লেজার প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
আলোকবিজ্ঞান ও এর সফল প্রয়োগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১৬ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক আলোক দিবস। এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা মূলত ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল বেসিক সায়েন্স প্রোগ্রাম বা আইবিএসপি। ২০১৫ সালে প্রথম জাতিসংঘ উদ্যাপন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব লাইট অ্যান্ড লাইট–বেসড টেকনোলজিস ২০১৫’। উদ্যোগটি সমাদৃত হয়। এরপর ঘানা, মেক্সিকো ও রাশিয়া ইউনেসকোর কাছে ‘আন্তর্জাতিক আলোক দিবস’ পালনের প্রস্তাব পেশ করে। ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ইউনেসকোর সদর দপ্তর প্যারিসে প্রস্তাবটি গৃহীত হয় এবং ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করে ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলন। ২০১৮ সালের ১৬ মে প্রথমবারের মতো উদ্যাপিত হয় ‘আন্তর্জাতিক আলোক দিবস’। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক আলোক দিবস’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো, ‘আলো, উদ্ভাবন, সমাজ’।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু আজ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হচ্ছে আজ ১ জুলাই। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে এ অনুষ্ঠান হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালা’।
ঘোষিত অনুষ্ঠানমালা অনুযায়ী আজ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহীদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে। আজ জুলাই ক্যালেন্ডার দেওয়া হবে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণ-স্বাক্ষর কর্মসূচির সূচনা করা হবে। এটি চলবে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত। এদিন জুলাই শহীদ স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই ক্যালেন্ডারের উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর কয়েক দিন বিরতি দিয়ে দিয়ে এ অনুষ্ঠানগুলো হবে। যেমন ১ জুলাইয়ের পর ৫ জুলাই, এরপর ৭ জুলাই ও ১৪ জুলাই অনুষ্ঠানমালা আছে। শেষ দিন, অর্থাৎ ৫ আগস্ট (অনুষ্ঠানমালায় ৩৬ জুলাই) ৩৬ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ারিং, ৩৬ জেলার কেন্দ্রে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে বিজয় মিছিল, এয়ার শো, গানের অনুষ্ঠান, ‘৩৬ ডেইস অব জুলাই’সহ জুলাইয়ের অন্যান্য ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, ড্রোন শোর আয়োজন করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব বলা হয়।